বিক্রম রায়, কোচবিহার: খাতায় কলমে সিতাই বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে মোট প্রার্থী ৭। তার মধ্যে তৃণমূল ছাড়াও বিজেপি, ফরওয়ার্ড ব্লক, কংগ্রেসের প্রার্থী ও রয়েছেন। তবে সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে সিতাই বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে কার্যত খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বিরোধী শিবিরকে। ফলে একাই দাপিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন তৃণমূল প্রার্থী সঙ্গীতা রায়। বিজেপি প্রার্থী দীপককুমার রায়ের সমর্থনে দিলীপ ঘোষ একটি সভা করলেও প্রচারে তেমন জোর নেই। জেলায় থেকেও নিশীথ প্রামাণিক এখনও সেভাবে প্রচারে নামেননি। স্বাভাবিকভাবে ফাঁকা মাঠে গোল শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা বলে মনে করছেন তৃণমূলের নেতৃত্ব।
গত কয়েক বছরে সিতাই ঘাসফুল শিবিরের দুর্গ হয়ে উঠেছে। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গ জুড়ে গেরুয়া ঝড়ে কার্যত লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল কোচবিহারে তৃণমূল শিবির। জেলার নয়টি আসনের মধ্যে সাতটিতে পদ্ম ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল বিজেপি। যদিও সেই ঝড়ের মধ্যেও সিতাই বিধানসভা আঁকড়ে রেখেছিল ঘাসফুল। গত লোকসভা নির্বাচনে কোচবিহার আসনে তৃণমূল প্রার্থী জগদীশচন্দ্র বর্মা বসুনিয়ার জয়ী হয়ে সংসদ নির্বাচিত হবার পিছনেও এই বিধানসভার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। তৎকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিশীথ প্রামানিক মোট ৩৯ হাজার ২৫০ ভোটের ব্যবধানে জগদীশের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। তার মধ্যে ২৮ হাজার ৩৭৭ ভোটের লিড দিয়ে সিতাই বিধানসভা জগদীশের পথ মসৃণ করে দিয়েছিল। তৃণমূলের সেই দুর্গে কার্যত ভোট ম্যানেজার বা শেষ কথা বলতে এখন কার্যত জগদীশ বর্মা বসুনিয়া। ২০১৬ সালের পর থেকে পর পর তিনবার জগদীশ চন্দ্র বর্মা বসুনিয়া সিতাই বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার ছেড়ে দেওয়া আসনে এবার উপনির্বাচন হচ্ছে। সেখানে তাঁর স্ত্রী সঙ্গীতা রায় প্রার্থী হয়েছেন। স্বাভাবিকভাবে তৃণমূল প্রার্থীর সারথী হয়ে নিজেই দাপটের সঙ্গে ভোট ময়দানে চষে বেড়াচ্ছেন জগদীশবাবু। কার্যত নিয়মরক্ষার জন্য বিজেপি, ফরওয়ার্ড ব্লক, কংগ্রেস-সহ মোট সাতজন প্রার্থী রয়েছেন। তবে মূল লড়াই তৃণমূল বনাম বিজেপির তা বলাই বাহুল্য। যদিও সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে বিজেপি প্রার্থীর দলের কর্মীদেরও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তথ্য দিয়ে জানানো হয়েছে, এবার সিতাই বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে মোট ৩ লক্ষ ৫ হাজার ৫০০ ভোটার রয়েছেন। তাদের মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ১ লক্ষ্য ৫৮ হাজার ৪২১। মহিলা ভোটার ১ লক্ষ ৪৭ হাজার ৭৯। তবে এই ভোটারদের মধ্যে বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন এক হাজার ৮৮১ জন এবং প্রবীণ নাগরিক ১ হাজার ৫০২ জন। সিতাই বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন নির্বিঘ্নে করাতে ১৬ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে সেই বাহিনী কোচবিহারে পৌঁছেছে। দিনহাটা মহকুমার সিতাই বিধানসভা কেন্দ্রে দিনহাটা এক নম্বর ব্লকের ১২ টি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং সিতাই ব্লকের ৫ টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত। এই কেন্দ্রে মোট ৩০০টি বুথ রয়েছে। প্রতিটি বুথে যাতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা যায় সেই রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কমিশনের তরফে।
উল্লেখ্য আগেও জগদীশবাবুর ছেড়ে দেওয়া সমস্ত আসনে তাঁর স্ত্রী সঙ্গীতা প্রার্থী হয়েছেন এবং জিতেছেন। এবারও জয় নিয়ে আশাবাদী তিনি। সঙ্গীতা রায়ের কথায়, শুধু জয় নয়, সিতাই বিধানসভার উপনির্বাচনে রেকর্ড ভোটে তিনি জয়ী হবেন। অপরদিকে তৃণমূলের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি প্রার্থী দীপককুমার রায় পর পর নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন। ফরওয়ার্ড ব্লক থেকে তিনি ২০১১ সালে বিধানসভা এবং ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। জয়ী হতে পারেননি। ২০২১ সালে তিনি বিজেপিতে যোগদান করে বিজেপির প্রার্থী হন। জেলার নয়টির মধ্যে সাতটি কেন্দ্রে পদ্মফুল ফুটলেও সিতাই কেন্দ্রে সেই দীপক হেরে যান। এবার সিতাই আসনে ফের দীপকের উপরে আস্থা রেখেছে গেরুয়া শিবির। বিজেপি প্রার্থী দীপককুমার রায় বলেন, তৃণমূল সন্ত্রাস করে টিকে রয়েছে। মানুষ ভোট দিতে পারলে বিজেপি প্রার্থী হিসেবে তিনি নিশ্চয়ই জয়ী হবেন।