সুবীর দাস, কল্যাণী: কৃষি পরিবারে কষ্টেশিষ্টে বড় হয়ে ওঠা সন্তানের সাফল্যের উড়ান সোজা পাড়ি দিয়েছিল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ইসরোয় (ISRO)। তার সবচেয়ে সফল মিশন চন্দ্রযান ৩-এর নেপথ্যে যে ক’জন বিজ্ঞানীর অবদান, তাঁদের অনেকেই বঙ্গ সন্তান। দেশের মহাকাশ গবেষণায় নয়া অধ্যায়ের সূচনার পর একে একে উঠে আসছে তাঁদের নাম। সেভাবেই খোঁজ পাওয়া গেল নদিয়ার হরিণঘাটা ব্লকের কৃষক পরিবারের সন্তান জগন্নাথ দাসের। গাঁয়ের ছেলের এহেন সাফল্যে উচ্ছ্বসিত পরিবার, বন্ধু, প্রতিবেশী সকলে।
হরিণঘাটা (Haringhata) বিধানসভার নিমতলার ঘেরোপাড়ার বাসিন্দা ইসরোর বিজ্ঞানী জগন্নাথ দাস। ছোট থেকে এই গ্রামে বড় হয়ে ওঠা জগন্নাথবাবু দেশের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রে চাকরি পাওয়ার পরও কিন্তু ভোলেননি শিকড়ের টান। চাঁদের মাটিতে চন্দ্রযান ৩-এর ল্যান্ডার ‘বিক্রম’ পা রাখার পরই জগন্নাথ দাস ফোন করেন দাদা বলরাম দাসকে। ভাগ করে নিলেন আনন্দের খবর। কেমন ছিলেন জগন্নাথবাবু শৈশবে? প্রশ্নের জবাবে ছলছল করে ওঠে বলরামবাবু চোখ। টিনের বাড়িতে বেড়ে ওঠা জগন্নাথ দাসের এই সাফল্যে উচ্ছ্বাস, আবেগে আপ্লুত তাঁর দাদা-বউদি থেকে শুরু করে পাড়া-পড়শি, বন্ধুবান্ধব সবাই। গ্রামজুড়ে এক খুশির উৎসবে মাতোয়ারা সবাই।
[আরও পড়ুন: যাদবপুরে ‘সেনা পোশাক’ বিতর্ক: অভিযুক্ত সংস্থার কর্ণধারকে গ্রেপ্তারির নির্দেশ কলকাতা পুলিশের]
কৃষক (Farmer) পরিবারের ছেলে জগন্নাথ দাস। বাবা কৃষক ছিলেন। জগন্নাথবাবু ছোটবেলাতেই পিতৃহারা হন। তারপর থেকে দাদা বলরামবাবু সংসারের হাল ধরেন। তিনিও কৃষক। ছোটবেলা থেকেই জগন্নাথ দাস পড়াশোনায় ভাল ছিলেন। শান্ত স্বভাবের ছেলেটি সকলের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতেন। এখনও মাটির মানুষই রয়েছেন তিনি। বলছেন প্রতিবেশীরা। এখন বেঙ্গালুরুতে থাকেন স্ত্রী কন্যাকে নিয়ে। পরিবারের টানে ছোটবেলায় বেড়ে ওঠা গ্রামে সময় পেলেই চলে আসেন। পাড়া-প্রতিবেশীদের খোঁজ নেন, ছেলেবেলার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলেন। সেখান থেকেও দাদা-বউদি, বন্ধুদের ফোন করে খোঁজ নেন, তাঁরা কেমন আছেন এবং তাঁর কর্মকাণ্ড সম্পর্কেও ফোনে জানান। ছোটবেলায় বেড়ে ওঠা ঘেরপাড়ায় এলে বউদির কাছে গ্রামের খাবার খেতে চান জগন্নাথবাবু। চিংড়ি মাছ দিয়ে লতি-ডাঁটা- চচ্চড়ি, খাসির মাংস, শাকসবজি ইত্যাদি প্রিয়, জানালেন বউদি বাসন্তী দাস। তাঁর কথায়, ”আজ আমরা গর্বিত, বিশেষ করে আমি এমন পরিবারের বউ হতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি।”
[আরও পড়ুন: মৃত্যুতেও আর্থিক সাহায্য, ‘কৃষকবন্ধু’ প্রকল্পে ৫০ কোটির বেশি টাকা দিল রাজ্য সরকার]
একই কথা বললেন ইসরো বিজ্ঞানীর বন্ধুবান্ধব। বিশেষ করে একসঙ্গে বেড়ে ওঠা ছোটবেলার বন্ধুরা। চন্দ্রযান ৩-এর (Chandrayaan 3) সাফল্যের পিছনে যে তাঁদের ‘বন্ধু’র অবদান রয়েছে, এটাই বড় পাওনা। এত বড় বিজ্ঞানী হয়েও কেমন মাটির মানুষ জগন্নাথ দাস, তা বললেন সহপাঠীরা। হরিণঘাটার ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক অনির্বাণ মজুমদার জানান, ”আমরা সত্যিই গর্বিত। কারণ চন্দ্রযান ৩ বিক্রমের সাফল্য সারা ভারতবাসীর গর্ব। বিশেষ করে হরিণঘাটাবাসীর। কারণ হরিণঘাটাতেই রয়েছে সেই সাফল্যর শীর্ষে পৌঁছে দেওয়া চন্দ্রযান ৩ বিক্রমের ইসরো বিজ্ঞানী গ্রুপের এক বিজ্ঞানী। আমরা তাঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করব তাকে এবং তার পরিবারকে সংবর্ধনা দেব।”
দেখুন ভিডিও:
