সৈকত মাইতি, তমলুক: কোলের সন্তানদের মুখে দু’মুঠো অন্ন তুলে দিতে কাজের সন্ধানে ভিনরাজ্যে পাড়ি দিয়েছিলেন মহারাষ্ট্রের যুবতী। পথ হারিয়ে ঠাঁই হয়েছিল তমলুকের (Tamluk) নিমতৌড়ি হোমে। অবশেষে দীর্ঘ প্রায় ছয় বছর পর প্যারা অলিম্পিক জয়ী বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন ওই তরুণী ফিরলেন বাড়ি।
তরুণীর নাম মীরা হারনি গাইকোয়াড়। মা বিমলা পান্ডুরাম গাইকোয়াড়। অপুষ্টি অনাহারে বেড়ে ওঠা মীরার বিয়ে হয়েছিল মাত্র ১৩ বছর বয়সে। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ায় মেয়েটি লেখাপড়ার সুযোগ পাননি। মাত্র ১৬ বছরে দুই সন্তানের মা হন মীরা। অনাহারে তাড়নায় শ্রমিকের কাজ খুঁজে নেন তিনি। এভাবেই চলছিল বেশ কিছুদিন। এরপর বেশি টাকার পাওয়ার লোভে অচেনা মহিলার ফাঁদে পা দেন তিনি। ঠিকানা হয় ভিনরাজ্য। কিন্তু বাড়িতে দুই সন্তানকে ফেলে আসার যন্ত্রণা তাঁকে কুড়ে কুরে খাচ্ছিল। ট্রেন থেকে নেমে নিজের বাড়ি খুঁজতে খুঁজতে ২০১৬ সাল নাগাদ মহারাষ্ট্রের মীরা হাজির হয় পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মেছাদা স্টেশনে। সেখান থেকে হলদিয়া মেছাদা জাতীয় সড়ক ধরে হাঁটা পথে রাতের রামতারকহাট। আর মীরাকে দেখে সন্দেহ হয় তমলুক থানার টহলদারি পুলিশের। মোবাইল ভ্যান থেকে নেমে এসে পুলিশ মীরাকে উদ্ধার করে নিমতৌড়ি তমলুক উন্নয়ন সমিতির জুভেনাইল জাস্টিস হোমে আনে। তারপর থেকেই নিমতৌড়ি হোম হয় তাঁর আশ্রয়স্থল। শুরু হয় শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসা, কাউন্সেলিং। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করেন মীরা। নিজের অতীতের স্মৃতি ফিরে পেয়ে সমস্ত ঘটনার কথা হোম কর্তৃপক্ষেকে জানায় সে। শুরু হয় মীরার বাড়ি ফেরার প্রক্রিয়া। ততদিনে মীরা সেলাইয়ের কাজ শিখেছে। খেলাধুলোতেও পারদর্শী হয়েছেন তিনি। স্পেশ্যাল অলিম্পিকে বাংলার হয়ে অংশগ্রহণ করে ছিনিয়ে এনেছেন ব্রোঞ্জ। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে মীরাকে আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবসে সম্মানিতও করা হয়েছে ২০২১ সালে।
[আরও পড়ুন: বসন্ত বন্দনাতেও অশান্তি! আবির খেলায় ছাত্রকে ‘মার’ নিরাপত্তারক্ষীর, কাঠগড়ায় বিশ্বভারতীর উপাচার্য]
মানসিক অবসাদ কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে শুরু করলেই হারিয়ে যাওয়া মীরাকে বাড়ি ফেরানোর কাজ শুরু হয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে সমস্ত রকমের আইনি জটিলতা কাটিয়ে মীরাকে মা বিমলা পান্ডুরাম গাইকোয়াড় এবং মুম্বই পুলিশের হাতে তুলে দেয় হোম কর্তৃপক্ষ। উপস্থিত ছিলেন জেলা সমাজ কল্যাণ আধিকারিক ও মেম্বার সেক্রেটারি জেলা শিশু সুরক্ষা ইউনিটের সুদীপ্ত বিশ্বাস, জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক সারদা গিরি, সঙ্গীতা সাহু সহ অন্যান্য প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। প্রসঙ্গত, বাড়িতে ফেলে আসা মীরার একরত্তি ছেলে এখন চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। কন্যা নবম শ্রেণিতে পড়াশুনা করছে। মা বিমলা পান্ডুরাম গাইকোয়াড় দীর্ঘ ছয় বছর পরে মেয়েকে ফিরে পেয়ে বেজায় খুশি।