ধীমান রায়, কাটোয়া: ভিন্ন গোত্রের দুই প্রাণী। একজন জন্মের পর থেকেই মায়ের স্নেহ থেকে বঞ্চিত। আর একজনের সন্তান জন্মানোর পর থেকেই তার সন্তানরা মায়ের কাছ থেকে কোনওভাবে বিছিন্ন হয়ে যায়। ভিন্ন গোত্রের হলেও দুজনের পাশাপাশি সহাবস্থান। শুধু সহাবস্থান বললেই ভুল হবে। একে অপরের মধ্যে তৈরি হয়েছে মা আর সন্তানের সম্পর্ক।নিজের স্তন্যপান করিয়ে একটি বিড়াল ছানাকে বড় করছে এক মা সারমেয়। পথ সারমেয় তার তার স্নেহ মমতার বাঁধনে আগলে রেখেছে মা হারা বিড়াল শাবককে। এমনই বিরল একটি দৃশ্য দেখা যায় পূর্ব বর্ধমানের ভাতার বাজারে রেলস্টেশন সংলগ্ন পাড়ায়। বিড়ালের সঙ্গে সারমেয়র এই সখ্যতার সাক্ষী স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা রোজই দেখছেন বিড়ালের ছানাকে নিজের দুধ পান করাচ্ছে পথ সারমেয়টি।
ভাতার বাজারে রেলস্টেশন পাড়ার বাসিন্দা শেখ আসগরের বাড়ির কাছেই চায়ের দোকান রয়েছে। তিনি জানান, তাদের বাড়িতে একটি চালাঘরে মাসপাঁচেক আগে একটি বিড়াল চারটি শাবক প্রসব করে। কয়েকদিন কাটার পর ওই মা বিড়ালটিকে দেখা যায় মুখে করে তার সন্তানদের নিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। বাধা দেননি আসগর। আসগর বলেন, “প্রকৃতির জীব। তাই তারা নিজেদের খেয়ালেই চলবে। এটাই স্বাভাবিক। মা বিড়ালটি তার বাচ্চাদের নিয়ে যাওয়ার সময় বাধা দেয়নি। কিন্তু পরে লক্ষ্য করি একটি বাচ্চা চালাঘরে রয়েই গিয়েছে। এরপর মা বিড়ালটিকে খোঁজাখুঁজি করেও হদিশ পাইনি। ওই বাচ্চা বিড়ালটিকে মাঝেমধ্যে দুধ খাওয়াতাম।”
[আরও পড়ুন: করমর্দন নয়, বিলাওয়ালকে ‘নমস্তে’ জয়শংকরের, SCO-তে কী বার্তা বিদেশমন্ত্রীর?]
আসগর আরও জানান, তাঁর বাড়ির কাছাকাছি থাকে একটি পথ সারমেয়। বেশিরভাগ সময়ই আসগরদের বাড়ির সামনে থাকে। তারাই ওই কুকুরটিকে খেতে দেন। জানা যায় ওই পথ সারমেয় মাসপাঁচেক আগে তিনটি শাবকের জন্ম দেয়। কিন্তু দু’টি শাবক কয়েকদিনের ব্যবধানে নিখোঁজ হয়ে যায়। একটি শাবকের মৃত্যু হয়। পথকুকুরটি কিছুদিনের মধ্যেই সন্তানহারা হয়ে যায়। গৃহবধূ হাসনা বেগম বলেন, “আমরা পরে দেখতে পাই ওই বিড়ালছানাটি কুকুরের কাছে ঘোরাঘুরি করতে থাকে। কুকুরটির সঙ্গে খেলা করে। কুকুরটি তার গা চেটে দেয়। পরে বিড়ালটিকে দেখি কুকুরের স্তন্যপান করছে। কিন্তু কুকুরটি বাধা দিচ্ছে না।”
জানা যায়, নিয়মিত দু’বেলা বিড়াল ছানাটিকে স্তন্যপান করিয়ে যায় সারমেয় মা। এভাবেই গড়ে উঠেছে দুই ভিন্ন গোত্রের প্রাণীর মধ্যে মা আর সন্তানের সম্পর্ক। প্রাণীসম্পদ বিকাশ বিভাগের ভাতার ব্লক আধিকারিক শঙ্খ ঘোষ বলেন, “এটা নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রমী ঘটনা। দু’টি পৃথক গোত্রের প্রাণীর মধ্যে এই ঘটনা সচরাচর দেখা যায় না। তবে দেখা যায় কোনও একটি প্রাণী যদি শিশুবেলায় মায়ের দুধ না পায়, আবার তার পাশাপাশি অন্য একটি প্রাণীর যদি দুধ থাকা সত্ত্বেও তার শাবক কাছে না থাকে তাহলে ওই দুই ভিন্ন গোত্রের প্রাণীর মধ্যে এই ধরনের সম্পর্ক তৈরি হতে পারে। পশু চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় তা ব্যাখ্যা করা কঠিন।”