টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: জন্ম থেকেই হাত, পায়ের আঙুল নেই! ৭০ শতাংশ প্রতিবন্ধী। কিন্তু তা কখনই বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি। বরং সমস্ত কাজকেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে করতে ভালোবাসেন। যেমনটা নিয়েছেন এসআইআর প্রক্রিয়াকেও। আর তাই হাজারও প্রতিকূলতা পেরিয়ে এসআইআরের ৯৯ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করে নজির সোনালি করের। বাঁকুড়া ২ নম্বর ব্লকের বাঁকি গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী তিনি। বিএলও হিসাবে এবার তাঁর কাঁধে দায়িত্ব চাপে। একদিকে সংসার অন্যদিকে অঙ্গনওয়াড়ির প্রতিদিনের দায়িত্ব, তা সামলেই কমিশনের দেওয়া কাজ সময়ের আগেই শেষ করে ফেলেছেন সোনালি।
বাঁকি গ্রামের ১৬ নম্বর বুথের দায়িত্ব ছিল সোনালি করের উপর। এই বুথে ভোটার সংখ্যা মাত্র ৯১৬ জন। প্রতিটি বাড়িতেই নিজে গিয়ে এনুমারেশান ফর্ম দিয়েছেন সোনালি। শুধু তাই নয়, ফর্ম সংগ্রহের কাজও তাঁর শেষ। তার মধ্যে আঙুলবিহীন হাতেই ৯৯ শতাংশ তথ্য ইতিমধ্যেই কমিশনের পোর্টালে আপলোড করে ফেলেছেন পেশায় ওই অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। কিন্তু কীভাবে নির্ধারিত সময়ের আগেই এসআইআরের কাজ সেরে ফেললেন সোনালি দেবী?
সোনালি কর বলেন, “ছোটবেলা থেকেই এভাবেই বড় হয়েছি। লেখাপড়াও করেছি এইভাবেই। তাই এসআইআরের কাজ শুরু হলে ভয় পাইনি, জানতাম পারব। তাই নিয়ম মেনে নিজের মতো করে কাজটা করেছি।” সোনালির একমাত্র ছেলে অর্ণব করও প্রতিদিনই মায়ের সংগ্রাম দেখছেন একেবারে সামনে থেকে। অর্ণব বলে, “মা কোনও দিন বলেন না, তিনি পারবেন না। আঙুল নেই এটা কোনও দিন ওনার দুর্বলতা হয়নি। ক্লান্ত থাকেন, তবুও কাজ শেষ না করে বিশ্রাম নেন না। আমি চাই মা সুস্থ থাকুন।”
এভাবেই এসআইআরের কাজ করে চলেছেন সোনালি কর।
এসআইআরের চাপে রাজ্যজুড়ে যখন ক্ষোভ, প্রতিবাদ, অসুস্থতা আর মৃত্যুর খবরে নড়িয়ে যাচ্ছে প্রশাসনকে, সেই সময় বিশাল শারীরিক চ্যালেঞ্জ নিয়েও দায়িত্বশীল হয়ে এক অনন্য উদাহরণ হয়ে উঠেছেন সোনালি কর। সীমাবদ্ধতার মাঝেও দায়িত্ববোধ, এটাই আজ বাঁকি গ্রামের মানুষের কাছে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। বাঁকি গ্রামের মানুষজনও সোনালির কাজ দেখে অভিভূত। গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা হরিপদ বাউরি বলেন, “ওর শরীরটা দেখে কখনও বোঝা যায় না, ও এতটা কাজ করে। বৃষ্টি-রোদ বলে কথা নেই, সব বাড়িতে গিয়েছে।” স্থানীয় গৃহবধূ মালতি হাঁসদা বলেন, “অনেকে তো সুস্থ শরীর নিয়েও কাজ করতে ভয় পায়। সোনালিদি একা হাতে এত কিছু করছে। ওকে দেখে আমরা সত্যিই গর্বিত।”
অন্যদিকে এই প্রসঙ্গে বাঁকুড়া জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) নকুল মাহাতো বলেন, “সোনালি কর আমাদের জেলায় এসআইআর কাজের ক্ষেত্রে এক অনন্য উদাহরণ। প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও তিনি যেভাবে সময়সীমা মেনে দায়িত্ব পালন করেছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। অনেক জায়গায় বিএলওদের উপর চাপ থাকলেও সোনালির মতো কর্মীরা আমাদের প্রশাসনের শক্তি।”
