অভিষেক চৌধুরী, কালনা: তিনি দেশনায়ক। তিনি সকলের ‘নেতাজি’। সুভাষচন্দ্র বসু (Subhash Chandra Bose) সম্পর্কে যত বলা হয়, ততই যেন কম পড়ে। কিন্তু পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর রায় পরিবারে তিনি ‘কুলদেবতা’। শুধু তাই নয়, জন্মবার্ষিকীতে সেই দেবতার উদ্দেশে সিঙারা ভোগও দেওয়া হয়। এই পরিবারে নেতাজি এসেছিলেন একবার। আর তার পর থেকেই এই রেওয়াজ তৈরি হয়েছে। আজও ‘কুলদেবতা’ রূপে সুভাষচন্দ্র বসুকে পুজো করেন পূর্বস্থলীর রায় পরিবার।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৩২ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামী রমেশচন্দ্র রায় ও তাঁর ভাই সুরেশচন্দ্র রায়ের কাছে সুভাষচন্দ্র বসু এসেছিলেন। সেইসময় রমেশবাবুর স্ত্রী শিবভাবিনী দেবী ছিলেন জেলা মহিলা কংগ্রেসের (Congress) সভানেত্রী। কাষ্ঠশালি থেকে মেড়তলায় যাওয়ার আগে নেতাজি রায়বাড়িতে এসেছিলেন। ওই বাড়িতে যে চেয়ারে তিনি বসেছিলেন, আজও তা সংরক্ষিত রয়েছে। সেইসময় শিবভাবিনী দেবী নেতাজিকে সিঙারা তৈরি করে খাইয়েছিলেন। আজও সেই সুভাষচন্দ্র বসুকে রায় পরিবার ‘কুলদেবতা’ রূপে পুজো করেন। সোমবার তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে তাঁর উদ্দেশ্যে সিঙারা ভোগের ব্যবস্থা করা হয়ে বলে জানান পরিবারের সদস্য তপন রায়, গৌতম রায়, বিকাশ রায়রা।
[আরও পড়ুন: গাজিয়াবাদ থেকে উদ্ধার হওয়া হার্ড ডিস্ক পেশের নির্দেশ, সিবিআইকে ডেডলাইন বেঁধে দিল হাই কোর্ট]
অন্যদিকে, ধর্মচর্চার পাশাপাশি বিপ্লবীদের আখড়া হয়ে উঠেছিল কালনার জ্ঞানানন্দ মঠ। ১৯৩০ সালে কালনা শহর সংলগ্ন নেপপাড়ার এই মঠে এসেছিলেন নেতাজি। এখানে দু’দিন-দু’রাত কাটিয়ে আন্দোলনের রূপরেখাও তৈরি করেছিলেন তিনি। এমনই এক ঐতিহাসিক স্থানে সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে উপস্থিত হন মন্ত্রী থেকে প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিরা। এবারও সারাদিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে এই মঠে। নিত্যপ্রেমানন্দ অবধূত মহারাজ জানান, “নেতাজি পদধূলিতে ধন্য এই আশ্রমে এই দিনটিতে প্রতি বছরের মত এইবছরও বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতা-সহ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে।” যদিও আগের বছর এই জ্ঞানানন্দ মঠে ‘নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু তোরণ’ উদ্বোধন করেন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ (Swapan Debnath)।
[আরও পড়ুন: তিন বিয়ের পর প্রেমিকার সঙ্গে লিভ-ইন! অশান্তি চরমে উঠতেই ভয়ংকর সিদ্ধান্ত যুবকের]
প্রতিবারের মত এবারেও মঠে থাকা নেতাজির ব্যবহৃত জিনিসপত্র, মূর্তি ও প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করা হবে। এছাড়াও নেতাজির জীবনী সংক্রান্ত বিভিন্ন ঘটনাকে প্রদর্শনীর মাধ্যমে তুলে ধরার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে মন্ত্রী জানান। মঠের দায়িত্বে থাকা মহারাজ আরও জানান, “নিত্য গৌরবানন্দ অবধূত ১৯২০ সালে এই মঠের প্রতিষ্ঠা করেন। মাস্টারদা সূর্য সেন-সহ অন্য বিপ্লবীদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল। এই মঠ বিপ্লবীদের নিরাপদ স্থান হয়ে উঠেছিল সেইসময়। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এখানে এসে একটি কুঁড়েঘরে দু’দিন,দু’রাত কাটিয়েছিলেন। এই কারণে মহারাজকে ব্রিটিশ সরকার পরে গ্রেপ্তারও করে।”
এখনও এই মঠে নেতাজির ব্যবহৃত খাট, কাঠের চেয়ার, খাবার টেবিল, কাঁথা রয়েছে। যা দেখতে আজও দূরদূরান্ত থেকে পর্যটকরা আসেন। এমনই এক ঐতিহাসিক স্থানকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলতে আগামী দিনে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জেলা পর্যটন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে।