সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: আজও রাস্তা হয়নি। তাই প্রায় সাত কিমি পাহাড়ি পথ ভেঙে রেশন আনতে হয় ধানচাটানির মানুষকে। এই চড়াই-উতরাই দুর্গম-বিপদসঙ্কুল পথে সব সময় যাওয়া-আসাও বেশ দুষ্কর। তাই ফি সপ্তাহে রেশন আসে না ঘরে। ফলে সপ্তাহান্তে হাঁড়ি না চড়ায় আধপেটা খেয়েও থাকতে হয় এখানকার মানুষকে।
পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের মাথায় আড়শা ব্লকের ধানচাটানি যেন আজও একটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। তাই এখানে নিয়মিত আসেন না অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। সকলের হাতে নেই রেশন কার্ড। স্বাস্থ্যকেন্দ্র অনেকটা দূরে থাকায় স্বাস্থ্য পরীক্ষাও হয় না গর্ভবতী মহিলাদের। বয়স্করা পান না পেনশন। হয় না একশো দিনের কাজ। ম্যালেরিয়া কবলিত বলে এই এলাকা খাতায়-কলমে চিহ্নিত থাকলেও স্বাস্থ্য দপ্তর কোনও পদক্ষেপই নেয় না। পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদারের কাছে এই অভিযোগ আসার পরই আগামী বুধবার এখানে শিবির করছে ব্লক প্রশাসন। যে শিবিরে তফসিলি জাতি-উপজাতি শংসাপত্র প্রদান, রেশন কার্ডের সমস্যা মেটানো, গর্ভবতী মহিলাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, শিশুদের টিকাকরণ, বয়স্কদের পেনশন দিতে তালিকা তৈরি, মশারি বিলি-সহ এই এলাকায় একশো দিনের কী কাজ করা যেতে পারে তা গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেবেন আধিকারিকরা। আড়শা ব্লকের বিডিও অমিত গায়েন বলেন, “এক শিবির থেকে এই গ্রামের একাধিক সমস্যা মেটানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আগামী বুধবার আমরা ওখানে শিবির করব।”
[ আরও পড়ুন: দাদার হাত থেকে ছিটকে আসা গুলি প্রাণ কাড়ল ভাইয়ের, নিমতার ঘটনায় ধৃত ২ ]
প্রায় ৮৫টি পরিবারকে নিয়ে এই গ্রাম। অধিকাংশজনই আদিবাসী। জঙ্গলের বনজ সম্পদ সংগ্রহ করে বিক্রি। সেই সঙ্গে পশুপালন করে দিন গুজরান করে এই ধানচাটানি। একদা যা ছিল মাও ডেরা। ফলে সেই বাম আমল থেকে এখন- ধানচাটানির কথা জানে আলিমুদ্দিন থেকে নবান্ন। এখন সেই মাও আতঙ্ক অতীত। কিন্তু আর পাঁচটা গ্রামের মত উন্নয়নের আলো পড়েনি এই ধানচাটানিতে। ওই গ্রামের বাসিন্দা রাজীব মান্ডি, মুনিলাল মুর্মু বলেন, “রাস্তাই নেই। তাই ফি সপ্তাহে রেশন আনতে যেতে পারি না। দু’টাকা কেজি চাল আনতে সাত কিমি পাহাড়ি পথ ভাঙতে হয়। সমতলের গ্রাম আজ যে সুবিধা পায়। আমরা পাই তার একশ বছর পর।” তবে রাজ্যে পালাবদলের পর গ্রামের রাস্তা হয়েছে। কিন্তু তা এখনও ঠিকাদার সম্পূর্ণ করেনি বলে অভিযোগ। যে সিন্দুরপুর গ্রামে রেশন আনতে যেতে হয়। তার প্রায় সাত কিমি পাহাড়ি পথ আজও এবড়ো-খেবড়ো। চড়াই-উতরাই রাস্তা। অর্থাৎ ধানচাটানি থেকে রাস্তা না হওয়া নালাকোচা পর্যন্ত সাত কিমি পাহাড়ি পথ। সেখান থেকে চার কিমি সিন্দুরপুর। তাই জেলা প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওই পাহাড়ি পথে বনদপ্তরের জমি থাকলে তাদের সঙ্গে দ্রুত আলোচনা করে যাতে ওই রাস্তাটুকু করা যায়। সেই সঙ্গে এই গ্রামের বাসিন্দাদের যাতে আর সিন্দুরপুর না যেতে হয় তাই সেখানকার রেশন দোকান থেকেই নালাকোচাতে গণবণ্টনের পণ্য দেওয়ার ব্যবস্থা করছে প্রশাসন।
ছবি- অমিত সিং দেও
[ আরও পড়ুন: ধর্মের ঊর্ধ্বে মানবতা, হিন্দুর দেহ সৎকার করলেন মুসলিম পড়শিরা ]
The post বাধা দুর্গম রাস্তা, সরকারি সুবিধা থেকে শত হস্ত দূরে পুরুলিয়ার এই গ্রাম appeared first on Sangbad Pratidin.
