সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গঙ্গাসাগর যাওয়ার পথে পুরুলিয়ায় আক্রান্ত উত্তরপ্রদেশে আক্রান্ত ৩ সাধু। আর সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তুঙ্গে রাজনৈতিক চাপানউতোর। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে তোপ দেগেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর। তাঁর প্রশ্ন, “বাংলায় সাধুসন্তদের খুনের চেষ্টা হয়েছে। এটা লাগাতর তোষণের ফল। কিন্তু কেন এমন হিন্দুবিরোধী ভাবনাচিন্তা?” পাল্টা তৃণমূল তথা রাজ্য সরকারের মন্ত্রী শশী পাঁজার দাবি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। পুলিশ নিজের কাজ করছে। তবে বিজেপি পুরুলিয়ার মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে।” সবমিলিয়ে পুরুলিয়ার ঘটনা উত্তাপ ছড়াচ্ছে বাংলার রাজনীতিতে।
ঠিক কী ঘটেছে? স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার উত্তরপ্রদেশ থেকে তিন সাধু-সহ পাঁচজন গাড়িতে গঙ্গাসাগর যাচ্ছিলেন। মাঝপথে ওই গাড়িটি পুরুলিয়ার কাশীপুর থানার গৌরাঙ্গডি মোড়ে থামে। স্থানীয়দের অভিযোগ, তিন তরুণী সাইকেল নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় গাড়ি নিয়ে তাদের পিছু ধাওয়া করেছিল ওই তিন গেরুয়া বসনধারী সহ পাঁচজন। ফলে ভয়ে ওই তরুণীরা সাইকেল ফেলে ছুটে পাশের একটি ইট ভাটায় পৌঁছান। পরে ছেলে ধরার গুজব রটতেই ওই গাড়িকে ঘিরে ধরে এলাকার উত্তেজিত মানুষ। মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। যদিও পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “ভাষা সমস্যার জন্য ভুল বোঝাবুঝি হয়। তার ফলেই তিন সাধুকে মারধর করে স্থানীয়রা। তবে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। ইতিমধ্যে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
[আরও পড়ুন: বাজপেয়ীর বায়োপিক কি লোকসভা ভোটপ্রচারে বিজেপির অস্ত্র? মুখ খুললেন পঙ্কজ ত্রিপাঠী]
পুলিশ যতই গ্রেপ্তার করুক না কেন, তরজা থামছে না। এই ইস্যুতে রাজ্য সরকারকে কার্যত তুলোধোনা করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর। তাঁর কথায়, “তোষণের জন্য় এমন পরিবেশ তৈরি হয়েছে। কিন্তু কেন এমন হিন্দুবিরোধী মনোভাব নিয়ে চলছে রাজ্য সরকার?” তাঁর দাবি, সাধুদের শুধু মারধর করা হয়নি, তাঁদের খুনেরও চেষ্টা করা হয়েছে। তার পরেও রাজ্য সরকার চুপ করেছিল। সংবাদমাধ্যমে খবর প্রচারের পর পুলিশ সক্রিয় হয়েছে।” বিজেপির আরও দাবি, মহারাষ্ট্রে উদ্ধব ঠাকরের আমলে যেভাবে পালঘরে সাধুদের পিটিয়ে মারা হয়েছিল, পুরুলিয়ার ঘটনা তারই ছায়া।”
যদিও এই অভিযোগ মানতে নারাজ রাজ্য সরকার। রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজার দাবি, “সাধুদের বিরুদ্ধে তিন তরুণীকে উত্যক্ত করার অভিযোগ উঠেছিল। জনতা তাঁদের ঘিরে ধরে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। দুপক্ষই মামলা করেছে। পুলিশ নিজের কাজ করছে। তবে বিজেপি পুরুলিয়ার মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে।” যদিও আক্রান্ত সাধু মিহির গোস্বামী বলছেন, তরুণীরা তাঁদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। কোনও মামলা রুজু করেননি আক্রান্তরা। অভিযুক্তদের শাস্তিও চান না। তবে এবার আর গঙ্গাসাগর যাওয়া হচ্ছে না তাঁদের। উত্তরপ্রদেশের আশ্রমেই ফিরে যাচ্ছেন।