সুমন করাতি, হুগলি: দ্বিতীয় দফার ভোটের আগে ফের প্রকাশ্যে তৃণমূলের (TMC) গোষ্ঠী কোন্দল। হুগলির তৃণমূল প্রার্থী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Rachana Banerjee) সমর্থনে জনসভায় বক্তব্য রাখার সময় কেড়ে নেওয়া হল বলাগড় বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারীর (Manoranjan Byapari) মাইক। এই ঘটনায় মঞ্চ ছাড়লেন 'অপমানিত' বিধায়ক। দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে জানালেন, 'দল আমাকে শুধু চেয়ারই দিয়েছে ক্ষমতা দেয়নি।'
ঘটনার সূত্রপাত শনিবার সন্ধ্যায়। বলাগড় বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত বকুলতলায় ছিল তৃণমূলের জনসভা। রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় তখনও সেখানে উপস্থিত হননি। সভায় বক্তব্য রাখছিলেন বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী। সিএএ ও এনআরসি নিয়ে বিজেপি আক্রমণ শানাচ্ছিলেন তিনি। মঞ্চে তখন বলাগড় ব্লক তৃণমূল নেতৃত্ব, হুগলি যুব তৃণমূল নেতৃত্ব উপস্থিত। হঠাৎ বক্তব্যের মাঝপথে মনোরঞ্জনকে থামিয়ে দেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। মাইক কেড়ে নেওয়া হয় তাঁর। এই ঘটনায় 'অপমানিত' বিধায়ক মঞ্চ থেকে নেমে সোজা জিরাটে তাঁর বিধায়ক অফিসে চলে আসেন।
[আরও পড়ুন: খারাপ আবহাওয়ায় কপ্টার অবতরণে সমস্যা, দার্জিলিংয়ে বাতিল শাহি সভা!]
এই ঘটনায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ তৃণমূল বিধায়ক বলেন, "দলে বারবার অপমানিত হচ্ছি। দল সব জানে কিন্তু কারও কোনও হেলদোল নেই। আমি বহিরাগত, আমি অনুপ্রবেশকারী এসব বিজেপি সিপিএম বলছে না। বলছে আমার দলের লোকেরাই। আমি সব কথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানাতে যাব কেন? স্থানীয় নেতারা যখন আছেন।" প্রসঙ্গত, বলাগড় তৃনমূল নির্বাচনী কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারীকে। সে প্রসঙ্গে বিধায়ক বলেন, "আমাকে একটা চেয়ার দেওয়া হয়েছে কিন্তু আমার কী অধিকার আছে? আমাকে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কী ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে? সব তারা কেন্দ্রীভূত করে রেখেছে নিজেদের হাতে। আমি শুধুই 'শোপিস'। যেভাবে কমিটি তৈরি হয়েছে সেখানে তাদের মনের মত লোককে রাখা হয়েছে। আমার একটা লোককেও রাখা হয়নি। চেয়ারম্যানের নিজের পছন্দের দুটো লোক থাকতে পারবে না কমিটিতে?"
[আরও পড়ুন: প্রকাশ্যেই স্মরণ করান ‘রাজধর্ম’, মরিয়া চেষ্টাতেও মোদিকে সরাতে পারেননি বাজপেয়ী! কেন?]
পাশাপাশি নিজের কেন্দ্রে তৃণমূলের ফল নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে বিধায়ক বলেন, "তৃণমূলের ফল বলাগড়ে কী হবে আমি জানি না। আমি নিজের মতো একা গাড়ি করে প্রচার করে বেড়াচ্ছি। ফল কী হবে দল বলতে পারবে। আমার নিজস্ব টিম আছে দু-দশজন নেতা কী বলল কিছু যায় আসে না।" তিনি আরও বলেন, "দিদির আদেশে তৃণমূল দলটাকে শক্তিশালী করতে চেয়েছি। গত তিন বছরে আমি সাধ্যমত সেটা করেছি। স্থানীয় নেতাদের সেটা মনঃপুত হচ্ছে না। স্থানীয় নেতারা জনপ্রিয়তায় নিচে চলে যাচ্ছে তাই তাদের ফাটছে। দিনের শেষে সবকিছু ভুলে আমরা একসাথে কাজ করব এটাই হওয়া উচিত।"
বলাগড়ের বিধায়কের সঙ্গে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের বিরোধ অবশ্য এই প্রথমবার নয়। এর আগেও বারবার তা প্রকাশ্যে এসেছে। বিধায়কের অফিস ভাঙচুর থেকে কাদা ছোড়াছুড়ি অনেক হয়েছে। লোকসভা নির্বাচনের আগে সেই দ্বন্দ্বের কথা মাথায় রেখে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় হুগলি লোকসভায় কর্মীসভা করে গেছেন। প্রত্যেক বিধায়ককে তার নিজের এলাকা দেখার কথা বলেছেন। শুধুমাত্র বলাগড়ের ক্ষেত্রে হুগলি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি চাঁপদানির বিধায়ক অরিন্দম গুইনকে দায়িত্ব দিয়েছেন। নির্বাচনী কমিটির চেয়ারম্যান করেছেন বালাগড়ের বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারীকে। সেই বিধায়কের এহেন বক্তব্য ভোটের আগে বলাগড়ে তৃণমূলকে অস্বস্তিতে রাখবে সন্দেহ নেই।