কৃষ্ণকুমার দাস: একেবারেই বাস্তব অর্থে পর্বতের মুষিক প্রসব। দিনকয়েক ধরে ঢাকঢোল পিটিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে রবিবার নন্দীগ্রামের গোকুলনগরে ডাকা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপির সভা পুরোপুরি সুপারফ্লপ। অন্যদিকে জমি আন্দোলনের তীর্থভূমি সোনাচুড়ায় তৃণমূল কংগ্রেসের চাটাই বৈঠকে দলীয় মুখপাত্র কুণাল ঘোষের কথা শুনতে হাজার তিনেক মানুষের উপস্থিতি জনসভার চেহারা নিয়েছিল। সমবেত মহিলা ও দলীয় কর্মীরা এত জোরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে স্লোগান দেন যে মনে হচ্ছিল যেন সমুদ্র গর্জন আছড়ে পড়ছে নন্দীগ্রামে।
চাটাই বৈঠকের সাফল্যে বিশ্বকাপের আবহাওয়ায় রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, নন্দীগ্রামে শুভেন্দু-কুণালের দ্বৈরথে বিজেপি ১০-০ গোলে হেরে মুখ লুকোনোর ফর্মূলা খুঁজে ফিরছে। সভা শেষে বিরোধী দলনেতাকে তীব্র কটাক্ষ করে স্বয়ং তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ দাবি করেছেন, ১২ ডিসেম্বরের কথা বলেছিলেন শুভেন্দু, কিন্তু একদিন আগেই তাঁর অন্যতম খাস শাগরেদ শ্যামল আদক দুর্নীতির দায়ে গ্রেপ্তার হয়ে গেল।
একসময়, বিরোধী দলনেতার তৃণমূল কর্মীদের প্রতি নানা আক্রোশের কথাও তৃণমূল মুখপাত্রকে জানান গ্রামের বাসিন্দারা। ধৈর্য্য ধরে প্রতিটি প্রশ্নের জবাব দেন এবং তথ্য দিয়ে রাজ্য সরকারের সাফল্য তুলে ধরেন তিনি। উলটোদিকে কেন্দ্রীয় সরকারের জনবিরোধী নীতি এবং পেট্রল-ডিজেল-রান্নার গ্যাসের দাম বাড়ানোর তথ্য তুলে ধরে বিজেপির সর্বনাশা কর্মসূচি ব্যাখ্যা করেন কুণাল।
[আরও পড়ুন: কলকাতা মেডিক্যালেও ‘হোক কলরব’! অনশনে কি বহিরাগতর মদত? চিন্তায় প্রশাসন]
অন্যদিকে গোকুলনগরে বিজেপির পঞ্চায়েত নিয়ে প্রস্তুতির সভায় শুভেন্দুর আসার কথা বিকেল তিনটেয়। কিন্তু লোক না আসায় চেয়ার ভরতি হয়নি বলে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত সভায় পৌঁছননি বিরোধী দলনেতা। শেষে খেঁজুরি ও চণ্ডীপুর থেকে কিছু গেরুয়াকর্মী ডেকে এনে নমো নমো করে সন্ধের আঁধারে সভা করে কেটে পড়েন শুভেন্দু। সূত্রের খবর, সভা সুপারফ্লপ হওয়ায় নন্দীগ্রামের বিজেপি নেতাদের উপর ভয়ানক ক্ষুব্ধ বিরোধীনেতা রাগে গজ গজ করতে করতে এলাকা ছেড়েছেন। বিরোধী দলনেতা আসার আগে গোকুলনগরের গেরুয়া মঞ্চ থেকে নাটকীয়ভাবে ঘোষণা হয়, বিজেপি থেকে যাঁরা জয়দেব দাসের সঙ্গে ভুল বুঝে চলে গিয়েছিল তাঁদের কয়েকজন ফিরে এসেছে। এরপর কয়েকজনের নামও ঘোষণা করে বিজেপি নেতারা।
কিছুক্ষণ পরে বিজেপি যেসব নেতাদের ফিরে আসার কথা বলে সোনাচূড়ার সভায় জয়দেব দাস তাঁদের সশরীরে হাজির করে গেরুয়া শিবিরের ‘ধাপ্পাবাজি’ ফাঁস করে দেন। স্বভাবতই আরও বিপাকে পড়ে যায় বিজেপি শিবির। বিষয়টি উল্লেখ করে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘অতৃপ্ত আত্মা হল শুভেন্দু। বিজেপির প্রেতাত্মা ঘুরে বেড়াচ্ছে নন্দীগ্রামে। ধস নামা সংগঠন বাঁচাতে যতই মিথ্যার আশ্রয় নিক আর এখানকার মানুষ ভুলবে না ওর ছলনায়।’’ এরপরই কুণাল বিজেপি কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘যাঁদের এতদিন শুভেন্দু গুরুত্ব দিত না, তাঁরা একবার আমায় এসে ছুঁয়ে যান। দেখবেন, আপনার বাড়ি গিয়ে ওই বেইমান, গদ্দার জুতো পালিশ করবে।’’
এদিন বিজেপির সভায় থাকা বটকৃষ্ণ দাসের কথা উল্লেখ করে তৃণমূল মুখপাত্র বলেন, ‘‘তমলুকের নিমতৌড়িতে এসে আমায় চুপি চুপি যা বলে গিয়েছে বট তাই ও এখন করছে।’’ চাটাই বৈঠকে অন্যদের মধ্যে ছিলেন তমলুক জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান পীষুষ ভুইঞা, বাপ্পাদিত্য গর্গ, শামসুল ইসলাম প্রমুখ। সভা শেষে সিবিআই মামলায় ফেরার তৃণমূল নেতা আবু তাহেরের অসুস্থ মাকে দেখতে যান কুণাল ঘোষ। দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন এবং চিকিৎসা নিয়েও খবর নেন। অশীতিপর বৃদ্ধাও দলের তরফে তৃণমূল মুখপাত্রের এমন সৌজন্যে আর্শীবাদ করেন।