shono
Advertisement
Birbhum

রং ছড়াবেই 'রামধনু'! তৃষা থেকে তৃষাণ, লিঙ্গ পরিবর্তনের লড়াইয়ে সিউড়ির সরকারি কর্মী

জেলাশাসকের দপ্তরে তিনি নিজের নাম-লিঙ্গ পরিবর্তনের আবেদন জানাতেই বিষয়টি সকলের গোচরে আসে।
Published By: Sucheta SenguptaPosted: 04:25 PM Nov 26, 2024Updated: 06:31 PM Nov 26, 2024

নন্দন দত্ত, সিউড়ি: তৃষা থেকে তৃষাণ। বদল বলতে এটুকুই। কিন্তু এটুকু যে এটুকু নয়। লিঙ্গ পরিবর্তন। নারী থেকে পুরুষ হওয়ার দীর্ঘ লড়াই। খাতায়-কলমে সেই লড়াইয়ের একটা ধাপ শুরু করতে গিয়ে হতবাক ২৪ বছরের সরকারি কর্মী। আর তাঁকে দেখে অবাক চোখে চেয়ে রইলেন সিউড়ি সদরের সরকারি কর্মীরাও। ছেলেদের মতো ছোট করে চুল কাটা, ডান হাতে বালা। প্যান্ট-শার্ট গুঁজে পরে তিনি আবেদন করতে এসেছেন জেলাশাসকের দপ্তরে। কী আবেদন? ভোটার তালিকায় তাঁর নাম-লিঙ্গ পরিবর্তনের। এই সময় নাম নথিভুক্তকরণ, পরিবর্তনের কাজ চলছে। কিন্তু মেয়ে থেকে ছেলে হতে চাওয়া ভোটারের এমন এক আবেদনের সুরাহা কীভাবে করবেন, ভেবে পাচ্ছেন না সরকারি কর্মীরা। কারণ, বীরভূমে এমন আবেদন স্মরণাতীতকালে এই প্রথম। শেষে জানানো হল, তৃতীয় লিঙ্গের তালিকায় নাম তোলার জন্য এক নম্বর ফর্ম ভর্তির আবেদন করতে হবে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, অনলাইনে সেই ফরম পূরণ করেছেন তৃষা। স্থানীয় বিডিও তাঁর আবেদনপত্রে দেওয়া তথ্য পরীক্ষা করে মতামত দেবেন। সব ঠিক থাকলে ২০২৬ সালের নির্বাচনে আর অন্তত তৃষা নামে তাঁকে ভোট দিতে হবে না।

Advertisement

'বাহির হয়ে এসো তুমি যে আছো অন্তরে...'। কথায়-সুরে এই গানই যেন হয়ে উঠেছে ইলামবাজারের তৃষা সিংয়ের জীবন কাহিনি। অন্তর থেকে তিনি পুরুষ, বহিরঙ্গে নারী। জুলাই মাসে ২৪ বছরের কর্মী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, লিঙ্গ পরিবর্তন করবেন। আনুষ্ঠানিকভাবে তৃষা সিং থেকে হয়ে উঠবেন তৃষাণ সিং রাজপুত। নিজের সোশাল মিডিয়া প্রোফাইলে তিনি ঘোষণা করে দেন, ‘‘আমি আন্তরিকভাবে একজন পুরুষ অনুভব করি, কিন্তু জন্ম হয়েছে নারী রূপে।’’ একজন সরকারি কর্মীকে মেয়ে থেকে ছেলে হিসাবে পরিবর্তনের সঙ্গে প্রায় ৭ লক্ষ টাকা খরচের জন্য জেলাশাসকের কাছে অনুমতি নিতে হয়। সেই প্রক্রিয়া চলছে। তৃষা জানান, ''নিজের এই পরিবর্তনে শারীরিক কষ্ট অনেক। কিন্তু তা সহ্য করেও মানসিক শান্তি যা পাবো তার তৃপ্তি আলাদা।''

ইলামবাজারের মতো একটা গ্রামীণ এলাকার বাসিন্দা তৃষা ছোট থেকেই বেশ ডানপিটে। তার মধ্যে পুরুষালি ভাব প্রকট। সাজপোশাকও ছেলেদের মতো। দুই বোনের মধ্যে তৃষা বড়। তাঁর বাবা-মাও তাঁকে বাধা দেননি কখনও। স্কুটি ছেড়ে বুলেট চালাতেই বেশি আগ্রহ 'মেয়ে'র। তা বলে সমাজিক চাহিদাকে উপেক্ষাও করেননি। তিন বছর ধরে ইলামবাজার ব্লকের এই মহিলা কর্মী শাড়ি পরেছেন, পিঠ ভর্তি লম্বা চুল রেখেছেন। স্কুটিতে করে কর্মস্থল বিএসঅকে-তে যাতায়াত করেছেন। কিন্তু তৃষার দাবি, ‘‘আমি দিন দিন তাতে ভেঙে পড়েছি। মনের জোর পায়নি।’’ অথচ মার্শাল আর্টে ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ান তৃষা। রাজ্য জ্যাভলিন, শটপাট ছোঁড়ার ক্ষেত্রে চ্যাম্পিয়ান। এনসিসি সার্জেন হিসাবে কাজ করেছেন। তাই আর নয়। এবার মন যা চায়, সেটাই তিনি হতে চান বহিরঙ্গে।

ভোটের আগেই নাম পরিবর্তনের উদ্যোগে নামলেন ইলামবাজার ব্লকের এই সরকারি কর্মী। তৃষা তাই তাঁর সোশাল মিডিয়ায় লিখলেন, ‘‘খুব জলদি আমি বিভিন্ন সার্জারি ও হরমোন থেরাপিতে যাব। এর জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষার সঙ্গে আইনগত অনেক কাজ আছে। এখন আমি মনোস্তত্ত্ববিদের সঙ্গে কথা বলছি। তার পরেই শরীরে পুরুষ হরমোন দেওয়া শুরু হবে। আস্তে আস্তে আমার দাড়ি-গোঁফ বেরবে, গলার স্বর বদলাবে, শারীরিক গঠন ও অঙ্গ বদল হবে,মানসিক পরিবর্তন হবে। আরও অনেক কিছু পালটে যাবে।’’ তাহলে কী হবে তাঁর পরিচয়? সরকারি নিয়মে তৃষাকে বর্তমানে তার আবেদনের ভিত্তিতে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হিসাবে পরিচয় দেওয়া হবে। পরে ফের আবেদন করলে তৃষা তখন তৃষাণ হবে। কিন্তু তৃষা থেকে তৃষাণের যাত্রাপথের সময় কতদিন। তৃষা জানায়, ‘‘চিকিৎসক যেমন বলবে। আমার শরীর যেমন নেবে। দুবছরের মধ্যে আমি তৃষাণ হব। তবে এই যাত্রায় আমি সুখ পেতে চাই। কারণ, আমার এই ইচ্ছাপূরণে আমার পাশে মা-বাবা, আত্মীয়, সহকর্মী, বন্ধুরা আছেন।’’

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
Advertisement