অর্ণব দাস, বারাকপুর: উচ্চতর গবেষণার (Research) কাজে গিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইজরায়েলে (Israel) আটকে পড়েছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার দুই গবেষক। বারাকপুর এবং খড়দহের বাসিন্দা দুই যুবক দিব্য মুখোপাধ্যায় ও সুমন সাধুখাঁ কেন্দ্রের সহায়তায় শনিবার ফিরেছেন বাড়িতে। ফিরেই সংবাদমাধ্যমে শোনালেন যুদ্ধরত ইজরায়েলের কথা। সীমান্তের ওপার থেকে হামলা, সাইরেন, বাঙ্কার, প্রত্যাঘাত – এসব নিয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা বললেন বিস্তারিত। সেসব দিন কাটিয়ে বাড়ি ফেরায় স্বস্তিতে দুই পরিবার।
খড়দহের (Khardah) রহড়া বন্দিপুরের বাসিন্দা দিব্য মুখোপাধ্যায় পোস্ট ডক্টরেট করতে ২০২২ সালে ইজরায়েলে যান। জেরুজালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সম্প্রতি সে দেশে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়ে তাঁর পরিবার এবং আত্মীয়রা। তবে নিয়মিত বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন দিব্য। তবে দেশে ফিরে আসার মতো পরিস্থিতি প্রথমদিকে তৈরি হয়নি বলেই জানান দিব্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে প্রতি মুহূর্তে সকলকে আগাম সতর্কবার্তা পাঠানোয় তাঁরা নিরাপদেই ছিলেন। সাইরেন (Siren) বাজলেই সে দেশের নিয়মমতো দেড় মিনিটের মধ্যে বাঙ্কারে ঢুকে যাওয়া, সাইরেন থামলে ১০ মিনিট অপেক্ষা করে তার পর বেরিয়ে আসা – এভাবেই দিন কাটছিল। এই পরিস্থিতির সঙ্গে এমনিতে গোটা ইজরায়েলবাসী অভ্যস্ত।
[আরও পড়ুন: পাশে পড়ে কন্ডোম, মহিলার বিবস্ত্র দেহ উদ্ধারে ক্রমশ জোরাল ধর্ষণ করে খুনের সন্দেহ]
কিন্তু একদিন টানা প্রায় ৩ ঘণ্টা দিব্যর শহরে সাইরেনের শব্দ শোনা যায়। তখনই বোঝা যায়, হামলা-পালটা হামলার বহর বাড়ছে। সেই অভিজ্ঞতা ভয়াবহ বলে ফিরে জানিয়েছেন দিব্য। তবে তিনি এও জানান, খুব কম সময়ের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেছে ইজরায়েল সেনা এবং সাধারণ নাগরিকের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। দিব্য নিজের বাসস্থান থেকে বিমানবন্দরে আসার পথে সম্পূর্ণ মসৃণ পথ পেয়েছেন, কোথাও কোনও যুদ্ধের আঁচ নেই। তবে দিব্যর রিসার্চ গাইড তাঁকে জানান, চাইলে এই সময় দেশে ঘুরে আসতে পারে। দিব্য তাই ভারত সরকারের ‘অপারেশ অজয়’-এর কথা জেনে ঘরে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন।
এর পরই শুক্রবার রাতে দিব্য সেখান থেকে বিমানে করে শনিবার সকালে দিল্লিতে নামেন। দিল্লি থেকে ফের বিমানে করে এদিন দুপুরেই দিব্য পৌঁছে যান রহড়ায়, নিজের বাড়িতে। দিব্য মুখোপাধ্যায় বলেন, ”ইজরায়েলের প্রথম যেদিন হামলা হয়েছিল, সেদিন ব্যাপক আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল। তবে বর্ডার থেকে আমরা অনেকটা দূরে থাকায় পরবর্তীতে আর কোনও সমস্যা হয়নি।” পুজোয় পরিবারের সঙ্গে কয়েকটা দিন কাটিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার তিনি পড়াশোনা করতে ফের ইজরায়েলে ফিরে যাবে বলেও জানান তিনি।
[আরও পড়ুন: ‘গাজায় গণহত্যা বন্ধ করুক ইজরায়েল, না হলে…’ ইজরায়েলকে হুঁশিয়ারি ইরানের]
অন্যদিকে, বারাকপুর (Barrackpore) মণিরামপুরের বাসিন্দা সুমন সাধুখাঁ পোস্ট ডক্টরেট করতে গিয়ে ইজরায়েলের উত্তরে হাইফা শহরে আটকে পড়েছিলেন। তিনি থিওরিটিক্যাল কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে হাইফা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করেন। শুক্রবার তিনিও ফিরেছেন বাড়িতে।
সুমনের কথায়, “আমি যেখানে থাকতাম, সেটা ইজরায়েলের উত্তরে। সেখানে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তবে বুধবার সাইরেন বাজলে একবার আমাদের বাঙ্কারে যেতে হয়েছিল। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানানো হলে আমরা বাঙ্কার থেকে বেরিয়ে রুমে চলে যাই। নিরাপত্তা অনেকটা বেড়েছে। তবে এমনিতে দৈনন্দিন জীবন স্বাভাবিকই আছে। যুদ্ধ থামলে আবার ফিরে যাব। আমার কাজ এখনও বাকি।”
দেখুন ভিডিও: