সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: পুষ্পবৃষ্টি, ব্যান্ড পার্টি, মিষ্টিমুখ। বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের (Vande Bharat Express) উদ্বোধনে হাই স্পিড ট্রেনকে এভাবেই স্বাগত জানালো জঙ্গলমহল পুরুলিয়া। জঙ্গলমহলের এই জেলার বিভিন্ন স্টেশন দিয়ে যাওয়া এই ট্রেনকে দেখতে রবিবার ভিড় উপচে পড়ে। কিন্তু এই উচ্ছ্বাস, আবেগের মধ্যেই তাল কাটে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগানে। ভারতীয় রেলের (Indian Railway) সরকারি অনুষ্ঠানে বন্দে ভারত পুরুলিয়া স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়ার সময় ‘জয় শ্রীরাম’ (Jai SriRam) স্লোগান শোনা যায়। আর তাতেই বিতর্কে জড়াল রেল।
যদি বিতর্ক এড়িয়ে গিয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের আদ্রা ডিভিশন কর্তৃপক্ষ। পুরুলিয়ার বিজেপি সাংসদ (BJP MP) রবিবার পুরুলিয়া স্টেশনে সবুজ পতাকা নাড়িয়ে বন্দে ভারতের যাত্রাপথকে এগিয়ে দেন। পরে তিনি বলেন, “পুরুলিয়া সহ সমস্ত দেশেই একটা স্লোগান রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সব কিছুকেই সম্ভব করতে পারেন। পুরুলিয়ার মানুষের অনেক ইচ্ছা ছিল, আবেগ ছিল বন্দে ভারত যদি পুরুলিয়ার ওপর দিয়ে যায়, পুরুলিয়া স্টেশনে থামে। পুরুলিয়ার মানুষের সেই ইচ্ছাকেই মর্যাদা দিলেন প্রধানমন্ত্রী। বন্দে ভারতকে পেয়ে এই জেলার মানুষ যে কত খুশি তা এদিন দেখা গেল।”
[আরও পড়ুন: বাঁ পায়ে চোট, মুখ্যমন্ত্রীকে ১০ দিন বিশ্রামের পরামর্শ দিলেন চিকিৎসকরা]
তবে বন্দে ভারতের সুফলকে বিজেপি ভোট প্রচারের (Election campaign) কাজে ব্যবহার করল বলে অভিযোগ করেছে পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)। ভোটের চমক বলেও জানিয়েছে। এই ট্রেনের ভাড়া নিয়ে তীব্র অসন্তোষ জেলার ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের। যদিও রেলের তরফে ভাড়া এখনও জানানো হয়নি। এই ট্রেন চলতি মাসের ২৭ তারিখ থেকে মঙ্গলবার ছাড়া নিয়মিত চলবে।
এই ট্রেন রাঁচি থেকে পুরুলিয়া (Purulia) আসার সময় এদিন কোটশিলাতে ছিলেন জয়পুরের বিজেপি বিধায়ক নরহরি মাহাতো, পুরুলিয়ায় সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো ছাড়াও ওই কেন্দ্রের বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায়, কাশিপুরের গেরুয়া বিধায়ক কমলাকান্ত হাঁসদা, সেই সঙ্গে পাড়ার আরেক বিজেপি বিধায়ক নদীয়ার চাঁদ বাউরি হাজির ছিলেন। কিন্তু বরাভূম স্টেশনে সেখানকার বিজেপি বিধায়ক বাণেশ্বর মাহাতো হাজির না থাকায় জল্পনা বাড়ে। পরের স্টেশন ঝাড়খণ্ডের (Jharkhand) চান্ডিলে অবশ্য হাজির ছিলেন রাঁচি লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ সঞ্জয় শেঠ ও ইছাগড়ের বিধায়ক সাবিতা মেহতা।
এদিন পুরুলিয়া স্টেশনে বন্দে ভারত ঢুকতেই ওই ট্রেনের কর্মচারীদের মালা পরিয়ে শুভেচ্ছা জানান সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো। মিষ্টিমুখ করানোর জন্য সন্দেশ নিয়ে হাজির ছিলেন আদ্রা ডিআরএম সুমিত নরুলা। এদিন এই ট্রেন পুরুলিয়া স্টেশনে ঢুকতেই শুরু হয় পুষ্পবৃষ্টি। সঙ্গে ব্যান্ড পার্টির বাজনা।
[আরও পড়ুন: আতঙ্কের নাম সেই গুজরাট! ফের ভাঙল সেতু, নদীতে তলিয়ে নিখোঁজ অন্তত ৬]
এনিয়ে পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট তথা পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “গত পাঁচ বছরে কেন্দ্রের এমন কোন প্রকল্প এই জেলা পায়নি যেখান থেকে জঙ্গলমহলের এই জেলার আর্থ-সামাজিক অবস্থার বদল ঘটবে। কেন্দ্রের যে প্রকল্পের মধ্য দিয়ে প্রান্তিক মানুষজনের গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হয় সেই ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প বছরের পর বছর ধরে বন্ধ। তাই ব্যর্থতা ঢাকতে জেলার মানুষকে ভুল বুঝিয়ে ভোটের আগে বন্দে ভারত চমক বিজেপির। তাছাড়া বহু পুরনো প্যাসেঞ্জার ট্রেনকে এক্সপ্রেস ট্রেনে রূপান্তরিত করে তার ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ যাত্রী পরিষেবা তলানিতে ঠেকেছে। প্রতিদিন পুরুলিয়া এক্সপ্রেস, রূপসী বাংলা ও চক্রধরপুর- হাওড়া প্যাসেঞ্জার লেটে চলছে। সমস্যা দূর না করেই ভোটের আগে এই বন্দে ভারত চালিয়ে চমক ছাড়া আর কিছুই নয়। সরকারি অনুষ্ঠানকে রাজনৈতিক প্রচারের কাজে ব্যবহার করা হল।”
পুরুলিয়া চেম্বার অব ট্রেড এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সাধারণ সম্পাদক বামাপ্রসাদ পুইতন্ডি বলেন, ” এই ট্রেন নিয়ে প্রান্তিক মানুষজনদের কি উপকার হবে বলুন? এই ট্রেনে তো প্রচুর ভাড়া। সেই ভাড়াটা কি নায্য করতে পারবে? আমরা জানি, সেটা করতে পারবে না। আসলে গত পাঁচ বছরে কোন কাজ হয়নি। সেই ব্যর্থতা ঢাকতে ভোটের আগে এটা রাজনৈতিক চমক।”
দেখুন ভিডিও: