সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দুর খুনের (Tapan Kandu Murder Case) ছক হোটেলে বসেই করা হয়েছিল। এমনই অনুমান ছিল সিটের। ঘটনার নানা দিক খতিয়ে দেখছে সিবিআই। বুধবারও নিহত কাউন্সিলরের ভাইপো মিঠুন কান্দু, এসডিপিও সুব্রত দেব-সহ একাধিক জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই।
সিবিআই জেরার মুখে যাঁদের পড়তে হয়েছে তাঁদের মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া হেঁসাহাতু গ্রামের বাসিন্দা সত্যবান প্রামাণিক। বর্তমানে তিনি ঝালদা শহরের হাটতলায় থাকেন। সেখানে একটা ধাবাও রয়েছে তাঁর। ওই ধাবার কাছেই নরেন কান্দুর একটি হোটেল রয়েছে। সত্যবান নরেনের ছায়াসঙ্গী হিসাবে এলাকায় পরিচিত। সিট তাঁকে কয়েকদিন আগে আটক করেছিল জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। পরে অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সেই থেকে তিনি হেঁসাহাতু গ্রামে ছিলেন।
এদিন সেখান থেকেই সত্যবানকে গাড়িতে করে বেস ক্যাম্পে নিয়ে আসে সিবিআই। সত্যবান হেঁসাহাতু ফতেসিং স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। তার স্ত্রী বিমলা ২০১৩ সালে কংগ্রেসের টিকিটে জিতে পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য হন। পরে তৃণমূলে যোগ দেন। সিটের দাবি ছিল, হোটেলে বসেই তপন খুনের ব্লু প্রিন্ট তৈরি হয়। এদিন রাত পর্যন্ত তাঁকে জেরা করছে সিবিআই। এদিন তাঁকে এসডিপিওর সঙ্গে মুখোমুখি বসেও জেরা করা হয়। সিট সত্যবানকে জেরা করে কী তথ্য পেয়েছিল সেটাও জানতে চান সিবিআই আধিকারিকরা।
এই ঘটনায় এদিন তদন্তে আসেন সিবিআইয়ের এসসিবি রাঁচি ইউনিটের আইজি। এদিন সন্ধ্যার পরে ধৃত আসিক খানকে নিয়ে তার কুটিডি গ্রামের বাড়িতে যান তদন্তকারী আধিকারিকরা। তাঁর বাড়িতে কেউ না থাকায় দু’টি তালা ভেঙে বেশ কিছু নথিপত্র উদ্ধার করেন তদন্তকারীরা। রাতে সিবিআইয়ের একটি দল আসিক খানকে নিয়ে ঝাড়খণ্ডে যায়।
[আরও পড়ুন: স্কুলে শিক্ষকদের মোবাইল ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা, নয়া আচরণবিধি জারি করল রাজ্য]
এদিকে, কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু খুনে তাঁর বাল্যবন্ধু তথা প্রত্যক্ষদর্শী নিরঞ্জন বৈষ্ণব ওরফে সেফলের ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় সিবিআই (CBI) তদন্ত হওয়ায় খুশি তাঁর পরিবার। এই অস্বাভাবিক মৃত্যুতে মঙ্গলবার হাই কোর্টের রায়ের পর পুরুলিয়া (Purulia) জেলা কংগ্রেসের দাবি, ঝালদা পুরানো থানায় আগুন লাগানোর ঘটনাতেও সিবিআই তদন্ত হোক।
নিরঞ্জন বৈষ্ণবের অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে এদিন হাই কোর্টের রায়ের পর পুরুলিয়া জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা প্রাক্তন বিধায়ক নেপাল মাহাতো বলেন, “একের পর এক পুলিশ যেভাবে কাজ করছে তাতে মনে হচ্ছে পুরানো ঝালদা থানায় কেন আগুন লাগল সেই রহস্যের উদঘাটন হোক। ওই রহস্যের কিনারা করতে পারে সিবিআই। প্রয়োজনে আমরা এই ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবিতে আদালতের দ্বারস্থ হব।”
এদিকে সিবিআই সূত্রের খবর, বুধবার নিরঞ্জন বৈষ্ণবের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার কেস ডকেট হাতে নেবেন তাঁরা। এই ঘটনার তদন্তকারী আধিকারিক আসানসোলে নির্বাচনের কাজে যাওয়ায় এদিন কেস ডকেট হাতে পাননি তদন্তকারী আধিকারিকরা। ঘটনায় অভিযোগের পর পুরুলিয়ার পুলিশ সুপারের নির্দেশে অজ্ঞাতপরিচয়দের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মামলা রুজু করা হয়। একজন ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার আধিকারিককে তদন্তভার দেয় জেলা পুলিশ। যদিও তাঁর ফোন ও সিমের এখনও কোন খোঁজ মেলেনি।
ঝালদার পুরনো থানায় আগুন লাগার ঘটনায় ন’নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর বিপ্লব কয়াল-সহ একাধিক অজ্ঞাত পরিচয়ের নামে আগুন লাগানো, পুলিশকে ধাক্কা দেওয়া-সহ একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করেছে ঝালদা থানার পুলিশ। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ কংগ্রেস ফের পুলিশের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। অভিযোগ গত সোমবার ঝালদা শহরের সুবর্ণ বণিক মা অন্নপূর্ণা পূজা কমিটির শোভাযাত্রা থেকে আগুন থানাতে ছুড়ে দেওয়া হয়। সেই আগুন থেকেই ছারখার হয়ে যায় মোটরবাইক, গাড়ি সহ নানান জিনিসপত্র। এই কংগ্রেস কাউন্সিলর বিপ্লব কয়ালের বিরুদ্ধে পুরবোর্ড গঠনের দিন বিশৃঙ্খলার অভিযোগে FIR করেছিল পুলিশ।