অভিরূপ দাস: জীবাণু তাড়ানোর তরল। তুলে দেবে ভোটের প্রমাণ। ছাপ্পা ভোট নিয়ে শঙ্কা চরমে। এমন আশঙ্কায় ঘুম উড়েছে প্রার্থীদের।
উঠছে লাখ টাকার প্রশ্ন। ভুতুড়ে ভোটার বাড়বে কি? ফি বছর ছাপা ভোট নিয়ে শয়ে শয়ে অভিযোগ জমা পরে নির্বাচন কমিশনে। আঙুলের কালি তুলে ফের লাইনে দাঁড়িয়ে পরার ঘটনা বঙ্গে নতুন নয়। ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee) আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। রেলমন্ত্রী ট্রেনে করে ছাপ্পা ভোট দিতে লোক আনবেন। শাসক দলের পূর্ব মেদিনীপুরের এক নেতা আবার প্রকাশ্যে ছাপ্পা ভোট দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন। এমন আবহেই আশঙ্কা বাড়াচ্ছে স্যানিটাইজারের (Sanitizer) ব্যবহার। করোনা আবহে স্যানিটাইজার এখন পকেটে, পার্সে। যখন তখন হাত ধুচ্ছেন সকলেই। হাত ধোঁয়ার অছিলায় কেউ যদি কালি ধুয়ে দেয়?
[আরও পড়ুন:‘মা-বোনেদের দু’পায়ের ভরসাতেই লড়ব’, অসুস্থতা সত্ত্বেও হার মানতে নারাজ মমতা]
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের (Jadavpur University) রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র বলছেন, তাহলেই গন্ডোগোল। তাঁর কথায়, “ভোটের কালি আঙুলে লাগানোর পর শুকোতে মিনিট দুয়েক সময় লাগে। কালি লাগানোর সঙ্গে সঙ্গে কেউ যদি আঙুল স্যানিটাইজারে চোবায় মুহূর্তে মুছে যাবে দাগ।তবে কি ছাপ্পা ভোটের আশঙ্কা প্রবল?
ফিজিক্যাল কেমিস্ট্রির অধ্যাপকের আশঙ্কা, যাঁর নকল ভোট দেওয়ার অভিসন্ধি থাকবে সে এমনটা করতেই পারে। এর জন্য কড়া নজর রাখতে হবে নির্বাচনী কেন্দ্রের ভেতরে উপস্থিত থাকা আধিকারিককে।
[আরও পড়ুন:‘বিজেমূল’কে বিঁধতে নয়া ব়্যাপ সিপিএমের, তৈরি ‘উরি উরি বাবা’র প্যারোডি]
কী রয়েছে ভোটের কালিতে? যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সহকারী অধ্যাপক মেহবুব রহমান জানিয়েছেন, ভোটের কালিতে থাকে সিলভার নাইট্রেট। শুকিয়ে গিয়ে তাই গাঢ় বেগুনি রঙ নেয় আঙুলে। সহজে তা উঠতে চায় না। সপ্তাহ কয়েক তো অবশ্যই। তেমন তেমন ক্ষেত্রে মাস কাবার হয়ে যায় সে কালি উঠতে। সেই জবরদস্ত রংও উঠে যাবে স্যানিটাইজারে?
বাজারে যে ধরনের স্যানিটাইজার পাওয়া যাচ্ছে তার উপাদান মোটামুটি তিন ধরনের। আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল, ইথানল (Ethanol) এবং হাইড্রোজেন পারক্সাইড (Hydrogen peroxide)। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সাধারণভাবে ১০ লিটার স্যানিটাইজার তৈরি করতে লাগে ৮০ শতাংশ (৮,৩৩৩ মিলিলিটার) ইথানল, ১.৪৫ শতাংশ (১৪৫ মিলিলিটার) গ্লাইসেরল এবং .১২৫ শতাংশ (৪১৭ মিলিলিটার) হাইড্রোজেন পারক্সাইড (Hydrogen peroxide)। এর মধ্যে দাগ তুলতে হাইড্রোজেন পারক্সাইডের জুড়ি মেলা ভার।
কেমিক্যাল বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি সত্যি কারও দাগ মোছার অভিসন্ধি থাকে তবে সে আঙুলে দাগ লাগানোর সঙ্গে সঙ্গে হাইড্রোজেন পারস্কাইড দেওয়া স্যানিটাইজার ব্যবহার করে দাগ তুলে ফেলতেই পারে। সেক্ষেত্রে নির্বাচনী আধিকারিকদেরই বলতে হবে সঙ্গে সঙ্গে হাতে স্যানিটাইজার নয়। আতঙ্ক রয়েছে অন্যত্রও। করোনা (Corona Virus) আবহের শুরুর দিকে স্যানিটাইজার পাওয়া যাচ্ছিল না বাজারে। দুর্মুল্যের বাজারে অ্যালকোহল জাতীয় অনেক দ্রব্যই ব্যবহার করে দেখেছেন অনেকে। তার মধ্যে অন্যতম তরলটি হল অ্যাসিটোন। যা সাধারণত নেইল পলিশের রং তুলতে ব্যবহার হয়। বোতলে করে এ তরল আনলে তাকে স্যানিটাইজারের সঙ্গে আলাদা করা মুশকিল। রসায়নের অধ্যাপকরা বলছেন, অ্যাসিটোন ব্যবহার করেও ভোটের কালি মুছতে পারেন ভুতুড়ে ভোটার। কালি লাগানোর পর তাই অন্তত পক্ষে মিনিট দুয়েক হাতে কিছু না লাগাতে দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।