অভ্রবরণ চট্টোপাধ্যায়, শিলিগুড়ি: অবশেষে পাহাড়ে মহাজোট করেই ফেলল বিজেপি। দু’দশক পর পাহাড়ে পঞ্চায়েত ভোটে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা (GJM), হামরো পার্টি, জিএনএলএফ (GNLF), সিপিআরএম, অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগ-সহ আরও কয়েকটি আঞ্চলিক দল নিয়ে আত্মপ্রকাশ ঘটল ‘ইউনাইটেড গোর্খা মঞ্চ’ নামে নয়া জোটের। এই নামেই তারা পঞ্চায়েত নির্বাচন লড়বে। রবিবার দার্জিলিংয়ের জিমখানা ক্লাবে বৈঠক করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠক শেষে দার্জিলিংয়ের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা বলেন, “পাহাড়ের উন্নয়নের লক্ষ্যে আমাদের এই জোট। দুর্নীতি রুখতেই আমরা একসঙ্গে হয়েছি।”

পৃথক রাজ্য গোর্খাল্যান্ড করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পাহাড়ে পরপর তিনবার লোকসভা নির্বাচনে জয় পেয়েছে বিজেপি (BJP)। কিন্তু তারা প্রতিশ্রুতি পালনে ব্যর্থ। এখন পাহাড়ে তাদের অস্তিত্ব সংকটে। তাই লোকসভা নির্বাচনের (Loksabha Election) আগে নিজেদের অবস্থান বুঝতে আঞ্চলিক দলগুলোকে নিয়ে জোট বেঁধে পঞ্চায়েতে লড়বে বিজেপি। এদিকে তাদের কাছে প্রার্থীও নেই। তাই এখন এই জোটের দলগুলোই ভরসা। শনিবার থেকেই জোটের সলতে পাকানো শুরু করেছিলেন রাজু বিস্তা। রবিবার তিনি দার্জিলিং এ গিয়ে বিমল গুরুং, রোশন গিরি, অজয় এডওয়ার্ড, দাওয়া পাখরিন-সহ আরও অনেক নেতাকে নিয়ে বৈঠক করে তা চূড়ান্ত করে ফেলেন। তবে তার আগে সকালে তাদের মূল জোটসঙ্গী জিএনএলএফ সভাপতি মন ঘিসিং এর সঙ্গেও বৈঠক করেন।
[আরও পড়ুন: ঠাকুরবাড়ির পর হাসপাতালেও তুমুল অশান্তি, শান্তনুপন্থী মতুয়াদের মারধরের অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে]
রাজু বিস্তার দাবি, এই মহাজোট শুধু পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্যই। বাকিটা পরে দেখা যাবে। কিন্তু পাহাড়ের মানুষের বক্তব্য পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ব্যবহার করে লোকসভার প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছে বিজেপি। তাই তাদের প্রার্থীরা পদ্ম চিহ্নে লড়াই করলেও বাকিরা নিজেদের চিহ্নে লড়াই করবে না। এপ্রসঙ্গে সাংসদ রাজু বিস্তা বলেন, “বিজেপি সর্বভারতীয় দল তাই তাদের প্রার্থীরা পদ্ম চিহ্নে লড়াই করবে। আর আমাদের জোটসঙ্গীদের সকলের একটাই চিহ্ন হবে যা দেখে মানুষ বুঝতে পারবে। আমরা চাই দুর্নীতিমুক্ত পাহাড় গড়তে। তাই সকলে মিলে এই মঞ্চ তৈরি করেছি। আমাদের লক্ষ্য পাহাড়ে রাস্তা, নতুন স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি করা। প্রতিটি বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া। বন্ধ হয়ে যাওয়া বিদ্যালয় চালু করা।”
[আরও পড়ুন: ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে ফের লড়বেন, বিতর্কের মধ্যেই ঘোষণা বিজেপির ব্রিজভূষণের]
এদিকে, এই জোট নিয়ে ঠাট্টা করছে ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা (BGPM)। তাদের দাবী জিএনএলএফ পঞ্চায়েত ব্যবস্থা ভেঙে ফেলেছিল। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা ক্ষমতায় থাকার সময় এই নির্বাচন করাতে চায়নি। এখন তারাই নাকি জোট করেছে। আর বিজেপি নিয়ে মোর্চার মুখপাত্র শক্তিপ্রসাদ শর্মা বলেন, “যে দল পঞ্চায়েত নির্বাচন লড়ার জন্য এতগুলো দলকে নিয়ে জোট করে তাদের কি হাল এখান থেকেই বোঝা যায়। তাদের জন্য করুণা হয়। এই জোট হওয়ায় আমাদের অনেক সুবিধা হল। নির্বাচনে হারার পর এরা সকলে একসঙ্গে হারিয়ে যাবে পাহাড় থেকে।” এদিকে দার্জিলিং এর তৃণমূল (TMC) সভানেত্রী শান্তা ছেত্রী বলেন, “নির্বাচনের আগে জোট করে কোনও লাভ নেই। সারাবছর মানুষের কোনও কাজে লাগেনা এই দলগুলি। নির্বাচন শেষ হলেই জোট ভেঙে যাবে। তাই এসব গুরুত্ব দেওয়া উচিত নয়।”