শঙ্করকুমার রায়, রায়গঞ্জ: সরকারি হাসপাতালের শিশু বিভাগের সামনে বিয়ের অনুষ্ঠান! গোটা রাত ধরে চলল আতসবাজির দৌরাত্ম্য। শব্দ তান্ডবে একেবারে আতঙ্কের রাত কাটলেন মুমূর্ষু রোগীরা। ক্ষুব্ধ রোগীর পরিজন সহ স্থানীয় বাসিন্দারা। মঙ্গলবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর মহকুমা হাসপাতালে। অভিযোগ, ক্যাম্পাসের গেট আটকেই কার্যত এই বিয়ের আয়োজন করা হয়। কীভাবে তা ঘটল তা নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এমনকী সামনেই থানা থাকা সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। ঘটনায় 'চুপ' পুলিশ প্রশাসন।
যদিও সংশ্লিষ্ট মহকুমা হাসপাতালের সহকারী সুপার সন্দীপন মুখোপাধ্যায় ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, ''নিন্দার ভাষা নেই। মহকুমাশাসককে ইতিমধ্যে ঘটনায় অভিযোগ জানানো হয়েছে।" অন্যদিকে, ঘটনায় বিতর্ক শুরু হতেই আসরে রোগী কল্যান সমিতির চেয়ারম্যান তথা ইসলামপুর পুর চেয়ারম্যান কানাইয়ালাল আগরওয়াল। তিনি বলেন, ''প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে আয়োজকদের মধ্যে।"
বস্তুত, ওই হাসপাতালের পাশেই রয়েছে জেলা পরিষদের অতিথি নিবাস। যদিও ওই ভবনটি কয়েক বছর ধরে একটি বেসরকারি সংস্থার দায়িত্বে রয়েছে। সেখানে মঙ্গলবার রাতে সেখানেই বিয়ের অনুষ্ঠান চলছিল। বিয়ের অনুষ্ঠানের নামে সারা রাত ধরে চলে বিশৃঙ্খলা। ফাটানো হয়েছে একের পর শব্দবাজি। তীব্র দূষণযুক্ত আতসবাজি ফাটানোর জেরে হাসপাতালের শয্যায় বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত চিকিৎসাধীন শিশু থেকে বয়স্ক রোগীদের দৃশ্যত ত্রাহি ত্রাহি দশা। আচমকা গভীর রাতে চকলেট বোমের মতো আতসবাজির ফাটানোর বিকট আওয়াজে দিশাহীন হয়ে অনেক রোগীর ঘুম ভেঙে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দেন বলে দাবি। এর ফলে হাসপাতালের পরিবেশ কয়েক মুহুর্তে দুর্বিষহ হয়ে উঠে। অথচ বিস্ময়কর ঘটনা হল, হাসপাতাল ক্যাম্পাসের ঢিল ছোড়া দূরত্বেই ইসলামপুর থানা। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রশাসন বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে তৎক্ষণিক কোনও উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণের নুন্যতম চেষ্টা করা হয়নি।
হাসপাতাল ক্যাম্পাসের মধ্যেই বিয়ের আসর।
স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠছে,আতসবাজি চলাকালীন প্রশাসন কোথায় ছিল? বিশেষ করে ক্যাম্পাসে আতসবাজির নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তা সত্ত্বেও আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে বুধবার পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যদিও এ ব্যাপারে ইসলামপুর পুলিশ সুপার জবি থমাস বলেন," অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ খতিয়ে দেখছে।''
গভীর রাত পর্যন্ত হাসপাতালের মধ্যেই চলল শব্দবাজির দাপট।
তবে এই ঘটনা নতুন নয়। সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, এর আগেও বিয়ের মরশুমে ওই ভবনের কারণে হাসপাতালের দুই নম্বর গেট দিয়ে মুমূর্ষু রোগীদের অ্যাম্বুল্যান্স ঢুকতে সমস্যা সৃষ্টি হয়। বিষয়টি রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকেও আলোচনা হয়েছে। এমনকি বহুবার ভবনের মালিককে বিষয়টি জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনও এক অজ্ঞাত কারণেই কিছুই ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে দাবি।
