সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: আদিবাসী মহল্লায় কীভাবে উন্নয়ন হবে জেলাশাসককে চাটাই–এ বসিয়ে পাঠ দিলেন মহিলারা। পুরুলিয়া জেলা প্রশসানের ‘গো টু ভিলেজ’ কর্মসূচিতে শনিবার ঝালদা ২ নম্বর ব্লকের খটঙ্গা গ্রামে গিয়ে এমনই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। সকলের সঙ্গে বসে আদিবাসীদের পরামর্শ নিলেন স্বয়ং জেলাশাসক রাহুল মজুমদারও৷
[আরও পড়ুন: ‘কুরবানির ছবি প্রকাশ্যে নয়’, ইদের আগে সম্প্রীতি রক্ষার বার্তা কোচবিহার পুলিশের]
গত জুন মাসে বাঘমুন্ডি ব্লক থেকে শুরু হওয়া পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের এই কর্মসূচি একাধিক জায়গায় পালিত হলেও, এমন অভিজ্ঞতা আগে কখনও হয়নি জেলা প্রশাসনের কর্তাদের৷ শনিবার আদিবাসীদের কাছে ক্লাস করে তাই রীতিমত উচ্ছ্বসিত তাঁরা৷ পুরুলিয়ার ঝালদা দু’নম্বর ব্লকের একদা মাওবাদী উপদ্রুত খটঙ্গা গ্রামের মহিলাদের এমন জনজাগরণ তারিফযোগ্য প্রশাসনের কাছে।
আসলে জঙ্গলমহল পুরুলিয়ার এই ব্লক নারীশিক্ষায় সবচেয়ে পিছিয়ে। সেখানে মহিলাদের নিজের গ্রামের উন্নয়ন নিয়ে এমন সচেতন হতে দেখে প্রশাসনিক কর্তারা এই ব্লককে খানিকটা অন্যভাবে আবিষ্কার করলেন। শনিবার সন্ধেবেলা এই কর্মসূচি সেরে সেকথাই আলোচিত হচ্ছে জেলা প্রশাসনের অন্দরে। এদিন জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বলেন, ‘এদিন যেন অন্য এক পুরুলিয়াকে দেখলাম। গ্রামের উন্নয়নের জন্য মহিলারাই এভাবে সরব হওয়ায় অবাক হয়ে গিয়েছি। তারা যেভাবে একাধিক সরকারি প্রকল্পের কথা বলে তার সুবিধা কেন পাচ্ছেন না,এই প্রশ্ন তুলছেন, তাতেই আমরা অভিভূত। এভাবে নিজের অধিকার বুঝে নিতে মহিলারা যদি সত্যিই এভাবে সরব হন তাহলে জেলার উন্নয়নের কাজ করতে আমরাও আরও বেশি উৎসাহিত হই৷’
[আরও পড়ুন: প্রকাশ্যে স্বামীর প্রেমিকাকে মারধর মহিলার! দেখুন ভিডিও]
আসলে বনমহলের এই জেলায় এখনও বহু গ্রামের মানুষ গণবন্টনের দু’টাকা কেজি চাল, মাথার ওপর একটা পাকা ছাদ, গ্রামের রাস্তা আর পানীয় জলের জন্য একটা নলকূপ বা কুয়ো হলেই যেন খুশি। এছাড়াও যে রাজ্যের একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প রয়েছে তা নিয়ে যেন এই জেলার গাঁ–গঞ্জের মানুষের কোনও হেলদোল নেই। কিন্তু এই খটঙ্গা গ্রামে এদিন প্রশাসন একেবারে উলটো ছবি দেখল। যেমন, অন্তঃসত্তা বা প্রসূতি মহিলারা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে কী সুযোগ পাবেন, তা এদিন জেলাশাসকের কাছে জানতে চান মহিলারা। গণবন্টনে দু’টাকা কেজি চাল কত করে মিলবে, গ্রামের মেয়েরা কেন কন্যাশ্রীর সুবিধা পাচ্ছেন না, ইন্দিরা আবাস যোজনাই কি এখন বাংলা আবাস যোজনা – এসব একাধিক প্রশ্ন রাখেন মহিলারা। তেমনই কোন কোন কাজ করলে স্বনির্ভর দলের উন্নয়ন হবে, মহিলারা সহজেই স্বনির্ভর হবেন – সেসব বলে তার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে জেলাশাসকের কাছে অনুরোধ জানান তাঁরা৷ শুক্রবার বিকেল থেকেই ঝালদা দু’নম্বর ব্লকে প্রশাসনের এই কর্মসূচি হয়েছে৷ প্রথমে স্বনির্ভর দল, তারপর প্রশাসনিক আধিকারিকদের নিয়ে আলোচনা হয়। সন্ধেবেলা বেগুনকোদর স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিদর্শন করে সেখানেই রাতে থেকে যান প্রশাসনিক কর্তারা৷
ছবি: অমিত সিং দেও৷
The post বাড়ছে জনসচেতনতা, পুরুলিয়ায় প্রশাসনের কর্তাদের বসিয়ে পাঠ দিলেন মহিলারা appeared first on Sangbad Pratidin.
