মলয় কুণ্ডু: বিদ্যুৎ উৎপাদনে দেশের মধ্যে প্রথম হল সাঁওতালডিহি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র (Santaldih Thermal Power Station)। শুধু সাঁওতালডিহিই নয়, রাজ্যের আরও এক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বক্রেশ্বর গোটা দেশে দশম স্থান অধিকার করেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার টুইটে রাজ্যের এই সাফল্যের কথা জানান। চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলি যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে, তার নিরিখেই এই সাফল্য বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।
নবান্ন সূত্রে খবর, কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রকের অধীনে থাকা কেন্দ্রীয় ইলেকট্রিসিটি অথরিটি দেশে কোন কেন্দ্র সব থেকে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে, তার হিসেব রাখে। তারাই দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলির র্যাঙ্কিং দেয়। সেই কেন্দ্রীয় ইলেকট্রিসিটি অথরিটি জানিয়েছে, WBPDCL-এর অধীনস্থ সাঁওতালডিহি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি দেশের মধ্যে যত বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে, তার মধ্যে এপ্রিল থেকে আগস্টের মধ্যে সব থেকে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে। বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস জানিয়েছেন, “বিদ্যুৎ-পরিবারে সার্বিক সাফল্য এবং টিমের পরিশ্রমের ফসল। এই সম্মান দপ্তরের ইঞ্জিনয়ার এবং প্রতিটি কর্মীকে আরও উৎসাহিত করবে।”
[আরও পড়ুন: এবার বাড়িতেই মিলবে করোনার ভ্যাকসিন, শর্তসাপেক্ষে অনুমতি দিল কেন্দ্র]
প্রশাসনিক মহলের ব্যাখ্যা, রাজ্য এই মুহূর্তে বিদ্যুৎ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বাড়তি বিদ্যুৎ অন্যান্য রাজ্যকেও দিচ্ছে বাংলাই। সাঁওতালডিহি ও বক্রেশ্বরের এই উৎপাদন সাফল্য বুঝিয়ে দিচ্ছে, রাজ্যে শিল্প গড়া থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের কাজেও বিদ্যুতের কোনও অভাব নেই। রাজ্যের গ্রামগুলিতেও পৌঁছে গিয়েছে বিদ্যুৎ। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, সাঁওতালডিহি তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ৫০০ মেগাওয়াট। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত ‘প্ল্যান্ট লোড ফ্যাক্টর’ বা ‘পিএলএফ’ ৯২.৭৯ শতাংশ। এর আগে এপ্রিল থেকে জুলাইয়ে দেশের মধ্যে তিন নম্বরে ছিল সাঁওতালডিহি কেন্দ্রটি।
গত বছরে এপ্রিল থেকে আগস্ট মাসে যেখানে পিএলএফ ছিল ৬৯.৬৩ শতাংশ। যা দেশের মধ্যে ছিল ৩১ নম্বর স্থানে। সেখান থেকে এক বছরের মধ্যে প্রথম স্থানে চলে এসেছে এই কেন্দ্রটি। ১০৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা সম্পন্ন বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটি গত বছরে ২২ নম্বর স্থান থেকে এবার দশম স্থানে উঠে এসেছে বলে নবান্ন সূত্রে খবর। তখন পিএলএফ ছিল ৭৪.৯৬। এখন তা বেড়ে হয়েছে ৮৮.৭৭।
রাজ্যের দরিদ্র মানুষের ঘরে কম দামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে রাজ্য সরকার। চাষের জন্য কম দামে বিদ্যুৎ পান রাজ্যের চাষিরা। রাজ্য সরকার সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ালেও কেন্দ্রীয় সরকার বিদ্যুৎ সংশোধনী বিল নিয়ে এসেছে। যা মানুষের স্বার্থবিরোধী বলে আগেই প্রতিবাদ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সাফ বক্তব্য ছিল, এই নতুন বিলের মাধ্যমে বেসরকারি ক্ষেত্রকে বিপুল বিপুল মুনাফা লাভ করার সুযোগ যেমন তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে, তেমনই দরিদ্র উপভোক্তাদের উপর বাড়তি আর্থিক বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে কেন্দ্র। দেশের মধ্যে রাজ্যের একটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র যেভাবে সেরার শিরোপা ছিনিয়ে এনেছে, তাতে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, অন্যান্য বিভিন্ন ক্ষেত্রের মতো বিদ্যুৎ উৎপাদনেও দেশের সেরা পশ্চিমবঙ্গই। তারই স্বীকৃতি এদিন কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রকের তরফে এসেছে। এই সাফল্যের জন্য বিদুৎ উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্ট সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।