shono
Advertisement

‘ফ্রি ইলেকট্রন ওয়্যার’ আবিষ্কার, বিদ্যুৎ অপচয়কে শূন্যে নামিয়ে বিরল কৃতিত্ব বঙ্গ বিজ্ঞানীর

বঙ্গ বিজ্ঞানীর ঝুলিতে ৬ পেটেন্ট।
Posted: 09:17 AM Jan 17, 2022Updated: 09:17 AM Jan 17, 2022

গৌতম ব্রহ্ম: ফাঁপা পাইপের ভিতর দিয়ে ইলেকট্রনের স্রোত বইয়ে দিতে পারলে যে অতিপ্রাকৃত কিছু হতে পারে, তার আন্দাজ ছিলই। কিন্তু সেটা যে বিদ্যুৎ অপচয়কে কার্যত শূন্যে নামিয়ে মিরাকল ঘটাবে, তেমনটা ভাবতে পারেনি সদ্য উচ্চমাধ্যমিক পাস করা ছেলে। কতই বা বয়স তখন? মেরেকেটে ঊনিশ। এই বয়সে তো কেরিয়ারের ফোকাসটাই ঠিক হয় না। আর সেই ছেলের পকেটে ছ’-ছ’টা পেটেন্ট! তা-ও আবার বাড়িতে বসে গবেষণা করে। আমেরিকা, ব্রিটেন, চিনের থেকে আগেই আদায় হয়েছিল। এবার নিজের দেশ থেকেও পেটেন্ট আদায় করে নিল বঙ্গসন্তানের সেই ‘ফ্রি ইলেকট্রন ওয়্যার।’ আবিষ্কর্তার দাবি, রুম টেম্পারেচারেই কাজ করবে তাঁর এই বিদ্যুৎ পরিবাহী। যা কাজে লাগিয়ে ‘ফাইভ স্টার’ বৈদ্যুতিন যন্ত্রকে প্রায় ‘টেন স্টার’-এ রূপান্তরিত করা যাবে, মানে যন্ত্রে বিদ্যুৎ খরচ হু হু করে কমবে। বিদ্যুতের ব্যবহারিক প্রয়োগে বিপ্লব ঘটিয়ে প্রায় অর্ধেক করে দেবে গেরস্থের বিদ্যুতের বিল।

Advertisement

সব্যসাচী হালদার। নামের আগে ডক্টরেট নেই, নামীদামি বড় ইনস্টিটিউটের ডিগ্রিও অনুপস্থিত। অথচ প্রফেসর শঙ্কুর মতো বাড়িতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে একের পর এক আবিষ্কার করে চলেছেন। এমনই এক আবিষ্কার ‘ফ্রি ইলেকট্রন ওয়্যার’। সাউথ পয়েন্টের প্রাক্তনী জানালেন, খনিজ তেলের উপর নির্ভরশীলতা প্রায় ৮৫ শতাংশ কমিয়ে দেবে এই ‘সুপার কন্ডাক্টর’, যা কি না আখেরে সভ্যতার মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা রাখে। পেটেন্টের জন্য সব্যসাচী প্রথম ভারত সরকারের কাছে আবেদন করেছিলেন ২০১১-র ২০ সেপ্টেম্বরে। যদিও আবেদনে প্রথম সাড়া দিয়েছিল চিন। বিশ্বের ১৪২টি দেশে অনুসন্ধান চালিয়ে চিন সরকার ২০১২-র ১৩ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক পেটেন্ট দেয় সব্যসাচীকে। ২০১৪-র ৩ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ পেটেন্ট পায় সব্যসাচীর উদ্ভাবন।

[আরও পড়ুন: Coronavirus Update: কড়া বিধিনিষেধের সুফল? নিম্নমুখী রাজ্যের করোনা গ্রাফ, কমল পজিটিভিটি রেটও]

মন ভরেনি। মার্কিন মুলুকের মহার্ঘ পেটেন্ট কবে আসবে? সেই স্বপ্নপূরণ হল ২০১৬-র ৫ এপ্রিল। দক্ষিণ শহরতলির গড়িয়ার বাড়িতে ইউএস ফার্স্ট মেলে খামবন্দি হয়ে এল পেটেন্টের কাগজপত্র। জোড়া পেটেন্ট। প্রথমটা সেই ‘ফ্রি ইলেকট্রন’ তারের সুবাদে। আর দ্বিতীয়টি সেই তারে তৈরি বৈদ্যুতিন সামগ্রীর জন্য। সব্যসাচী জানালেন, “শুধু তার আবিষ্কার করেই থেমে যাইনি, সেটির বাণিজ্যিক প্রয়োগের বাস্তবতাও প্রমাণ করেছি। তৈরি করছি প্রায় দশ তারা ক্ষমতাসম্পন্ন মোটর ও সিলিং ফ্যান।” সব্যসাচীর ওই ‘সুপার এনার্জি এফিশিয়েন্ট কয়েলস ফ্যানস অ্যান্ড ইলেট্রিক্যালস মোটরস’ ২০১৫ সালের ২৫ আগস্ট আন্তর্জাতিক পেটেন্ট এবং ২০১৯ সালের ২২ জানুয়ারি মার্কিন পেটেন্ট আদায় করে নিয়েছে।

যদিও সব্যসাচী জানিয়েছেন, তাঁর ‘ফ্রি ইলেকট্রন ওয়্যার’ এবং সুপার কন্ডাক্টরের মধ্যে চরিত্রগত ফারাক রয়েছে। কিন্তু, কার্যকারিতা প্রায় এক। বিজ্ঞানচর্চার সূচনা ১৯৯৯ সালে, কুড়ি পেরনোর আগেই। বঙ্গবাসী কলেজে ফিজিক্স অনার্স নিয়ে সবে ভর্তি হয়েছেন,‌ তখনই গবেষক হিসাবে প্রথম স্বীকৃতি প্রতিরক্ষা মন্ত্রক থেকে, ২০০১ সালে। ওদের রেফারেন্সেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক ড. তাপসরঞ্জন মিদ্যার সঙ্গে আলাপ। তাঁর সহযোগিতায় কিছুদিন যাদবপুর বিশ্ববদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি ব্যবহারের সুযোগ, যদিও গ্র‌্যাজুয়েট না হওয়ায় গবেষক হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয় সব্যসাচীকে মান্যতা দিতে পারেনি। বয়স কম থাকায় প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গবেষণার ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছিল। আবিষ্কারক হিসাবে যখন বিশ্ব তাঁকে মান্যতা দেয়, তখন তিনি গ্র্যাজুয়েটও হননি, সদ্য সাউথ পয়েন্ট স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছেন।

সব্যসাচী স্বপ্ন দেখেছিলেন এমন একটি মেশিন তৈরির, যা বিদ্যুৎ ছাড়াই চলবে। এই স্বপ্ন নিয়ে ক্লাস এইটের ছেলেটি হাজির হয়েছিল শিক্ষক পার্থপ্রতিম রায়ের কাছে। পার্থবাবু জানিয়েছিলেন, এ স্বপ্ন সফল হওয়া অসম্ভব, তবে সুপার কন্ডাক্টর বানাতে পারলে স্বপ্নের কাছাকাছি পৌঁছনো যাবে। সেই শুরু। সুপার কন্ডাক্টর তৈরির নেশায় দিনরাত এক করে ফেলা, পড়াশোনায় ডুবে যাওয়া। সব্যসাচীর কথায়, “সুপার কন্ডাক্টর হতে গেলে কোনও বস্তুকে হিমাঙ্কের ৭০ থেকে ৮০ ডিগ্রি নিচে নিয়ে যেতে হবে। ঠান্ডা করলে কেন পদার্থের বিদ্যুৎ পরিবহণ ক্ষমতা বাড়ে, তাই নিয়ে শুরু হয় গবেষণা। তারপরই মাথায় আসে ‘থিওরি অফ ভ্যাকুয়াম।’’

সব্যসাচী প্রথমে ‘রোটারি অ্যান্ড অয়েল ডিফিউশন পাম্প’ প্রয়োগে সিলিকন রাবার ও টেফলনের পাইপের ভিতরে শূন্য স্থান তৈরি করেন। তারপর ইলেকট্রন গান দিয়ে শূন্য স্থানে ভরে দেন মুক্ত ইলেকট্রন কণা। বিজ্ঞানীর দাবি, ইলেকট্রনের স্রোত বহু দূর পর্যন্ত কোনও সংঘাত ছাড়াই প্রবাহিত হচ্ছিল। ‘মিন ফ্রি পাথ অফ পার্টিকেলস ইন ভ্যাকুয়াম’ বৈশিষ্ট্য কাজে লাগিয়েই আসে সাফল্য, আবিষ্কার হয় ‘ফ্রি ইলেকট্রন ওয়্যার’। সাধারণত আমরা তামা বা অ্যালুমিনিয়ামের তার দেখতেই অভ্যস্ত। রবারের পাইপের মধ্যে ‘কপার কোর’ বা ‘অ্যালুমিনিয়াম কোর’ ঢুকিয়ে তার তৈরি হয়। এক্ষেত্রে ‘কোর’-এর বদলে রয়েছে ইলেকট্রনেরর ক্লাউড। সব্যসাচীর দাবি, তাঁর সুপার কন্ডাক্টরের দাম তামা বা অ্যালুমিনিয়াম তারের মতোই। ফলে বিদ্যুতের প্রচুর সাশ্রয় হতে বাণিজ্যিক কোনও সমস্যাও নেই।

[আরও পড়ুন: এ কেমন পেশা! শুধু লাইনে দাঁড়িয়েই দিনে ১৬ হাজার টাকা আয় যুবকের]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement