গৌতম ব্রহ্ম: ছোটদের অসুখ ছোবল মারছে বড়দেরও। স্ক্রাব টাইফাসের (Scrub Typhus) কথা হচ্ছে।
ব্যাকটেরিয়াঘটিত রোগটি রাজ্যজুড়ে ডালপালা ছড়াচ্ছে। ছোটরা তো বটেই বড়দেরও কাবু করছে। করোনা আবহ বলে আতঙ্ক কয়েকগুণ বাড়ছে। হবে নাই বা কেন! করোনার সঙ্গে যে এই জ্বরের অনেক মিল। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে করোনা নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু এই রোগে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
চিকিৎসা পদ্ধতি সহজ, সরল। ‘ডক্সিসাইক্সলিন’ নামে এক ওষুধেই কুপোকাৎ হয় এই রোগ। কিন্তু সমস্যা অন্যত্র। অনেক ক্ষেত্রেই রোগ এত দেরিতে নির্ণয় হয় যে তখন ওষুধেও আর কাজ হয় না। এমনটাই জানালেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নিশান্তদেব ঘটক। স্ক্র্যাব টাইফাসের জন্য দায়ী ‘ট্রম্বিকুলিড মাইট’ মূলত ধানখেত ও ঝোপঝাড়ের মধ্যে থাকে। ইঁদুর, কুকুর, বিড়াল ও গবাদি পশুর শরীরে সাধারণত বাসা বাঁধে। এদের কোনও সমস্যা হয় না। কিন্তু মানুষের শরীরে দংশন করলেই বিপদ। প্রবল জ্বর আসবে। যেখানে দংশন করছে পোকা, সেখানে ফোসকা পড়ে যাবে। দংশনের ১০ থেকে ১৪ দিনের মাথায় জ্বর দেখা যায়। সময়মতো চিকিৎসা না হলে মাল্টিপল অর্গ্যান ফেলিওর হয়ে মৃত্যুর মুখে পড়তে পারে রোগী। এমনই পর্যবেক্ষণ ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ ডা. প্রভাসপ্রসূন গিরির। শরীরে খাঁজে বা ভাজে কামড়ায় বলে বেশিরভাগ সময়ই বিষয়টি চোখে পড়ে না। গত মরশুমে প্রায় ২০০ স্ক্রাব টাইফাস আক্রান্ত রোগী এসেছে প্রভাসবাবুদের কাছে।
[আরও পড়ুন: ভিডিও কলে কথা হোক রোগী ও আত্মীয়দের, করোনা চিকিৎসায় নয়া নির্দেশিকা রাজ্যের]
বাজার চলতি অ্যান্টিবায়োটিকে কোনও কাজ হয় না। এমনই হয়েছিল কোলাঘাটের ২৭ বছরের এক গৃহবধূর। জ্বর ঠিক করতে স্থানীয় এক চিকিৎসকের পরামর্শে চার-পাঁচরকমের অ্যান্টিবায়োটিক খেয়েছেন ওই তরুণী। কিন্তু কিছুতেই জ্বর কমছিল না। বরং পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছিল। তরুণী অবশ্য বেঁচে গিয়েছেন তাঁর সন্তানের জন্য। সন্তানকে নিয়ে তরুণীর শাশুড়ি সম্প্রতি এক শিশুরোগ বিশেষজ্ঞর কাছে গিয়েছিলেন। সেখানেই ডাক্তারবাবু খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, শিশুটির মায়ের বেশ কয়েকদিন ধরে জ্বর। খুব কাহিল অবস্থা। শিশুটি মাতৃদুগ্ধ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রথমে করোনা সন্দেহ হয়। পরে ডাক্তারবাবুর কথামতো সেই বধূর বাহুমূলে পোকা কামড়ানোর দাগ আবিষ্কার করেন তাঁর স্বামী। রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে কলকাতার ‘ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেল্থ’–এ পাঠানো হয়। রিপোর্ট পজিটিভ আসে। ডক্সিসাইক্লিনের জোরে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই জ্বর গায়েব হয়।
নিশান্তদেব জানালেন, এমন অনেক ক্ষেত্রেই হয়েছে। ছোটদের রোগ বলে পরিচিত স্ক্রাব টাইফাস এখন বড়দেরও ছোবল দিচ্ছে। সম্প্রতি বারুইপুরের এক বর্ষীয়ান স্কুল শিক্ষকেরও স্ক্রাব টাইফাস হয়। আগে গ্রামীণ এলাকা থেকেই সিংহভাগ রোগী আসতেন কলকাতার হাসপাতালগুলিতে। এবার রোগী আসছে শহুরে এলাকা থেকেও। সবার মধ্যে কিছু ‘কমন’ উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। প্রবল জ্বর, গায়ে ব্যথা এবং গোপনাঙ্গে সিগারেটের ফোসকার মতো দাগ।
[আরও পড়ুন: করোনা আক্রান্ত হয়ে অজান্তেই সেরে উঠছেন অনেকে! কী বলছেন চিকিৎসকরা?]
The post ছোটদের রোগ ছোবল দিচ্ছে বড়দেরও, রাজ্যজুড়ে ডালপালা মেলছে স্ক্রাব টাইফাস appeared first on Sangbad Pratidin.