সুলয়া সিংহ: দুর্গাপুজো মানে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মায়ের আরাধনা। মনের কলুষতা কাটিয়ে উৎসবে মেতে ওঠা। ষষ্ঠী থেকে দশমী প্রতিবার এই ছবিই ধরা পড়ে বাংলায়। করোনা আবহেও যে সেই ঐতিহ্যের ব্যতিক্রম হবে না, তা বুঝিয়ে দিল ভবানীপুর চক্রবেড়িয়া সার্বজনীন। মহামারী পরিস্থিতিতে সবাইকে একজোট হয়ে লড়তে হবে। খুঁটিপুজোর দিন সমস্ত ধর্মস্থান, দলীয় কার্যালয়-সহ সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে মাটি এনে মায়ের কাঠামোয় প্রথম প্রলেপ দিয়ে সেই বার্তাই দেওয়া হল।
পতিতাপল্লীর মাটি যোগ করে দুর্গা প্রতিমা গড়ার রীতি দীর্ঘকালের। সমাজের সকলের গুরুত্ব একইরকম, এ রীতি তারই বাহক। আর এবার সমাজের বুকে নেমে এসেছে ঘোর সংকট। মারণ ভাইরাস কেড়ে চলেছে হাজারো প্রাণ। আতঙ্ক চেপে বসেছে মানুষের মনে। তাই তো ধর্ম-বর্ণ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়েই এই অতিমারীর বিরুদ্ধে লড়তে হবে। তবেই মিলবে সাফল্য। ঠিক এমন ভাবনা থেকেই এবার দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুর এলাকার চক্রবেড়িয়া ক্লাব অভিনব উদ্যোগ নিল।
[আরও পড়ুন: মহালয়ার সকালে ভক্তদের জন্য খুলবে না দক্ষিণেশ্বর মন্দির, বদলাচ্ছে দর্শনের সময়সূচিও]
মন্দির, মসজিদ, গুরুদ্বার, গির্জা-সহ সমস্ত ধর্মস্থান থেকে এল মাটি। শুধু তাই নয়, কংগ্রেস, সিপিএম-সহ কলকাতার একাধিক দলীয় কার্যালয়ের মাটিও পৌঁছে গিয়েছিল ক্লাব প্রান্তরে। এছাড়াও জরুরি পরিষেবা যাঁরা দেন, সেই পুলিশ কর্মী, স্বাস্থ্যকর্মীদেরও সম্মান জানানো হয়। থানা থেকেও আসে মাটি। যৌনপল্লী থেকেও মাটি আনা হয়। এই সমস্ত মাটি একত্রিত করে তাতে স্যানিটাইজার দিয়ে মেখে মায়ের মুখ ফুটে উঠল শিল্পী পূর্ণেন্দু দে’র হাতের ছোঁয়ায়। যদিও বিজেপিকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তাদের দলীয় কার্যালয় থেকে মাটি দেওয়ার জন্য এদিন কেউ হাজির হননি।
এবছর ৭৫ তম বর্ষের পুজো ক্লাবে। অতিমারী না হলে হয়তো হীরক জয়ন্তীতে অন্যভাবে সেজে উঠত মণ্ডপ। তবে এই ভাঙাগড়ার ওঠা-নামার খেলা তো চলতেই থাকবে। আর তাই এবার এই ভাঙাগড়ার কাহিনিই ফুটিয়ে তোলা হবে মণ্ডপে। শিল্পী পূর্ণেন্দু দে বলছিলেন, “এবার খুঁটিপুজোর দিন সকলকে ডাকা হয়েছিল। শুধু হিন্দু নয়, মুসলিম ধর্মাবলম্বীরাও উপস্থিত ছিলেন। সকলে মিলেই তো এমন সংকটের দিনে মায়ের আরাধনা করব আমরা। তারই বার্তা। আর এবার অতিমারীর জন্য বাজেটও অনেকটাই কম। তাই সাধারণ বাঁশ, কাঠ দিয়েই তৈরি হবে মণ্ডপ। শিল্পীও সেভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। কাজ করার ইচ্ছে থাকলেও আতঙ্কে অনেকেই গ্রাম থেকে শহরে আসতে চাইছেন না। তবে পুজো তো হবেই। আর সেটা সবাই মিলেই করা হবে।” করোনা যেন মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে শেখায়, মায়ের কাছে এমনই কামনা সকলের।
[আরও পড়ুন: কলকাতার পুজোয় কার্তিক রূপে ফিরবেন সুশান্ত সিং রাজপুত, কোন মণ্ডপে গেলে দেখতে পাবেন?]
The post দলীয় কার্যালয় থেকে মন্দির-মসজিদ, এই ক্লাবে সব স্থানের মাটি মিশিয়ে তৈরি হল মা দুর্গার মুখ appeared first on Sangbad Pratidin.