অর্ণব আইচ: ভবানীপুরে হর্ন প্রতিবাদীর মৃত্যুর ঘটনার চারদিন পর আত্মসমর্পণ করলেন অভিযুক্ত আইনজীবী। সোমবার সকালে আইনজীবী তড়িৎ শিকদার তাঁর আইনজীবীদের নিয়ে ভবানীপুর থানায় যান। পুলিশ আধিকারিকদের তাঁর আইনজীবীরা জানান, যেহেতু তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে, তাই তিনি আত্মসমর্পণ করতে চান। পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, তড়িৎবাবুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারায় অনিচ্ছাকৃত খুনের অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এদিনই তাঁকে আলিপুর আদালতে পেশ করা হয়।
এই বিষয়ে অভিযুক্তর আইনজীবীরা দাবি করেন, তড়িৎবাবু নির্দোষ। তিনি কিছুই করেননি। ভবানীপুরে বকুলবাগান রোডে তাঁর বাড়িতে পুলিশ তল্লাশি করতে যায়। তখনই সঙ্গী আইনজীবীরা তড়িৎ শিকদারকে আত্মসমর্পণ করতে বলেন। যদিও হর্ন প্রতিবাদে মৃত বৃদ্ধ রমেশ বেহেলের পরিবারের লোকেদের প্রশ্ন, যেখানে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনা ঘটেছে, সেখানে চার দিন পর অভিযুক্ত আইনজীবী আত্মসমর্পণ করলেন কেন? ঘটনার পর তিনি পালালেন কেন? তিনি কি বাড়িতে লুকিয়েছিলেন? বাড়িতে যদি তিনি না থেকে থাকেন, তবে এতদিন তিনি কোথায় গা-ঢাকা দিয়ে ছিলেন?
[আরও পড়ুন: ছাত্র আত্মহত্যার ঘটনায় প্রিন্সিপালকে সরানোর দাবি, স্কুলের আশ্বাসে উঠল বিক্ষোভ]
পুলিশ জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বকুলবাগান রোডের বাসিন্দা তথা একটি নামী সিকিউরিটি সংস্থার কর্ণধার রমেশ বেহেল (৬৫) তাঁর গাড়ি স্টার্ট দিয়ে কাজে বের হচ্ছিলেন। তার কিছুক্ষণ আগেই বৃষ্টি পড়েছিল। বৃদ্ধর গাড়ির পিছনে এসে দাঁড়ায় অভিযুক্ত আইনজীবীর গাড়ি। ক্রমাগত পিছন থেকে আইনজীবী ক্রমাগত হর্ন বাজাতে থাকেন। রমেশবাবু এর প্রতিবাদ করে ওঠেন। তার পরই তাঁর গাড়িতে ধাক্কা দেন আইনজীবী। গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন বৃদ্ধ। রাস্তার উপর শুরু হয় বচসা। অভিযুক্ত তড়িৎ শিকদার তাঁকে হুমকি দেন। প্রতিবাদ করে ওঠেন বৃদ্ধ। তখনই আইনজীবী তাঁকে ধাক্কা দেন ও মারেন। ফুটপাথের উপর পড়ে যান বৃদ্ধ। তাঁর মাথায় চোট লাগে। তাঁর ছেলে উপরের ফ্ল্যাটে খাচ্ছিলেন। খবর পেয়ে নিচে আসতে না আসতেই দেখেন, পালিয়ে গিয়েছেন আইনজীবী। আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর বৃদ্ধের মৃত্যু হয়।
পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, এলাকার একটি সিসিটিভির ফুটেজের সূত্র ধরে তাঁর লাল রঙের গাড়ির সন্ধান মেলে। সেটি যে ল্যান্সডাউন মার্কেটের দিকে পালিয়ে গিয়েছে, তা-ও দেখা যায় ফুটেজে। যদিও ওই ফুটেজ ও এলাকার বাসিন্দাদের বক্তব্যের সূত্র ধরেই পুলিশ আইনজীবীকে শনাক্ত করে। ভবানীপুরের বকুলবাগান রোড ও রমেশ মিত্র রোডের সংযোগস্থলের কাছে যেখানে ঘটনাটি ঘটে, তার কাছেই ছিল ওই আইনজীবীর বাড়ি। যদিও বছর কুড়ি আগে এই বাড়ি ছেড়ে ওই আইনজীবী বকুলবাগান রোডের অন্য একটি বাড়িতে গিয়ে থাকতে শুরু করেন। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, এর আগেও অঞ্চলের বহু মানুষের সঙ্গে বিভিন্ন কারণে গোলমাল বেধেছে ওই আইনজীবীর। এই বিষয়গুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এদিকে অভিযুক্তের কড়া শাস্তির দাবি জানিয়েছেন মৃতের মেয়ে পূজা কাপুর। তিনি বলেন, “আমি চাই অভিযুক্তর শাস্তি হোক। পুলিশকে সবরকমভাবে সাহায্য করব। দেশের আইন প্রতি ভরসা আছে। আমি শুধু সুবিচার চাই।”
[আরও পড়ুন: শব্দবাজি ফাটালে জেল, কালীপুজোয় দূষণ রুখতে কড়া নজরে শহরের বহুতলগুলিও]
The post ভবানীপুরে হর্ন বাজানোর প্রতিবাদ করায় খুন, আত্মসমর্পণ অভিযুক্ত আইনজীবীর appeared first on Sangbad Pratidin.