সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মানবাধিকার প্রসঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে জবাব তলব করুক হোয়াইট হাউস। এই দাবিতেই প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে চিঠি দিয়েছিলেন মার্কিন কংগ্রেসের একাধিক সদস্য। তবে তা মানতে নারাজ বাইডেন প্রশাসন। ধারণা, মানবাধিকার প্রসঙ্গে ভারতকে চাপ দিলে, পালটা কৃষ্ণাঙ্গ বিদ্বেষ কাঁটায় বিদ্ধ হতে হবে ওয়াশিংটনকে। যার হাতে গরম উদাহরণ, পুলিশি অত্যাচারে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু।
মঙ্গলবার বাইডেনের উদ্দেশে চিঠি লেখেন ৭৫ জন সেনেটর। তাঁদের দাবি, ভারতের বাকস্বাধীনতা নিয়ে মোদিকে প্রশ্ন করুন বাইডেন। ভারতে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, ইন্টারনেট বন্ধ করার মতো পরিস্থিতি কেন, তা নিয়েও বাইডেনের কথা বলা উচিত বলে দাবি করা হয়েছে ওই চিঠিতে। ভারতীয় বংশোদ্ভূত সেনেটর প্রমীলা জয়পাল-সহ ৭৫ জনের চিঠিতে বলা হয়েছে, “বিশেষ কোনও ব্যক্তি বা দলকে নিয়ে মাতামাতি করা ঠিক নয়। মার্কিন বিদেশ নীতির কয়েকটি আদর্শ রয়েছে, সেগুলি মনে রাখা দরকার। তাই মোদির সঙ্গে আলোচনার সময়ে আরও নানা বিষয়ের পাশাপাশি এই কয়েকটি কথাও মাথায় রাখতে হবে।”
এই প্রেক্ষাপটে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেছেন হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান। তিনি বলেন, “এই বিষয়ে (মানবাধিকার হনন, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা) আমরা আমাদের মতামত প্রকাশ করি। তবে আমরা কাউকে জ্ঞান দেই না। আমাদের দেশে কোনও চ্যালেঞ্জ নেই, এমন ভানও আমরা করি না।” তিনি আরও বলেন, “ভারতে রাজনীতি, গণতন্ত্র বা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলি নিয়ে সিদ্ধান্ত ভারত এবং ভারতের জনগণ নেবে। এটা আমেরিকা ঠিক করে দিতে পারে না।”
[আরও পড়ুন: হাতিয়ার মাস্কের মন্তব্য, ‘টুল কিট গ্যাং’কে একহাত নিল বিজেপি]
এনিয়ে মোট ছ’বার আমেরিকায় এসেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। ইতিহাস তৈরি করে মার্কিন কংগ্রেসে দ্বিতীয়বার ভাষণ দেবেন তিনি। দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা-সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। এহেন পরিস্থিতিতে ভারতকে চটিয়ে অস্ত্রের বেসাতি হাতছাড়া করতে চায় না বাইডেন প্রশাসন। এছাড়া, চিনকে রুখতে কার্যত ভারতই ভরসা আমেরিকার। একই সঙ্গে, মানবাধিকার প্রসঙ্গে দিল্লিকে চাপ দিলে, পালটা কৃষ্ণাঙ্গ বিদ্বেষ কাঁটায় বিদ্ধ হতে হবে ওয়াশিংটনকে। যার হাতে গরম উদাহরণ, পুলিশি অত্যাচারে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের মে মাসে আমেরিকার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। যেখানে দেখা গিয়েছিল, মিনিয়াপোলিসের পুলিশ আধিকারিক ডেরেক শভিন হাঁটু দিয়ে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের শ্বাসরোধ করে রেখেছেন। জর্জ ফ্লয়েড বারংবার অনুরোধ করছিলেন শভিনের কাছে যে তিনি শ্বাস নিতে পারছেন না। কিন্তু শভিন হাঁটু সরাননি। প্রায় সাড়ে ন’মিনিট এভাবে থাকার পর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ফ্লয়েড। এর পরই গোটা বিশ্বে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলন শুরু হয়। সেই চাপে অভিযুক্ত পুলিশ আধিকারিকের ২০ বছরের জেল হয়।