কৃষ্ণকুমার দাস: দলবিরোধী কার্যকলাপের জেরে এবার তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের কোপের মুখে বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত। খোয়াতে পারেন মেয়র পদও, এমনটাই খবর তৃণমূল সূত্রে। আগামিকাল, রবিবার তৃণমূল ভবনে বৈঠক ডেকেছেন কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। সেই বৈঠকে ডাকা হয়েছে বিধাননগর পুরনিগমের সমস্ত তৃণমূল কাউন্সিলরদের। সূত্রের খবর, সেই বৈঠকে ডাকা হয়নি মেয়র তথা রাজারহাট-নিউটাউনের বিধায়ক সব্যসাচী দত্তকে। তাই নিয়েই জল্পনা শুরু হয়েছে। তবে কি সব্যসাচীকে মেয়র পদ থেকে সরানো হতে পারে? রাজনৈতিক মহলে জল্পনা তুঙ্গে।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার বকেয়া ডিএ-র দাবিতে বিদ্যুৎ দপ্তরের কর্মীদের সংগঠন বিদ্যুৎ ভবনে হাঙ্গামা করে৷ পুলিশের সঙ্গে আইএনটিটিইউসি কর্মী, সমর্থকদের ধস্তাধস্তিতে ভাঙে বিদ্যুৎ ভবনের প্রবেশদ্বারের কাচ৷ সেই বিক্ষোভ কর্মসূচির নেতৃত্বে ছিলেন সব্যসাচী দত্ত। ব্যারিকেড ভেঙে বিদ্যুৎ ভবনের ভিতরে ঢোকে বিক্ষোভকারীরা৷ বিদ্যুৎ মন্ত্রীর বিরুদ্ধেও ক্ষোভপ্রকাশও করেন বিধাননগরের মেয়র৷ বিক্ষোভের পর বিদ্যুৎ ভবনের সামনেই বসে পড়েন সব্যসাচী দত্ত৷ এ প্রসঙ্গে পুলিশকে তীব্র ভর্ৎসনা করে বিধাননগরের মেয়র বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের কিছু পুলিশ বন্ধু এসেছেন আমাদের আটকাতে৷ আমার শুধু একটাই আহ্বান, যখন আপনারা ডিউটি সেরে বাড়ি যাবেন বা থানায় যাবেন, গিয়ে বলবেন – পাখাটা চালাতে যাবেন, দেখবেন পাখাটা চলছে না৷ আপনার কর্মচারীটি বলবেন, জল দেবে কোথা থেকে স্যর? পাম্প চলছে না৷ আর বাড়ি গেলে বউ যখন বলবে, বিদ্যুতের বিল দিতে হবে৷ তখন পকেটে হাত দিয়ে দেখবেন, পকেটটা ফুটো হয়ে গেছে৷ আর নইলে কাটমানি নিতে হবে৷’’
স্বভাবতই, সব্যসাচীর এহেন আচরণের পর অস্বস্তি বেড়েছে রাজ্যের শাসকদলের অন্দরে। তৃণমূল ভবন সূত্রে খবর, এমন দলবিরোধী কার্যকলাপের জেরে সব্যসাচীর উপর চটেছে শীর্ষ নেতৃত্ব। তাঁকে মেয়র পদ থেকে সরানোর ভাবনাও শুরু হয়েছে বলে সূত্রের খবর। পাশাপাশি, সূত্র মারফত এও জানা গিয়েছে, বিধাননগরের কাউন্সিলরদের একাংশ মেয়রের বেশকিছু দলবিরোধী কার্যকলাপে ক্ষুব্ধ। তাঁরাও চাইছেন সব্যসাচীকে পদ থেকে সরানো হোক। সেক্ষেত্রে মেয়র পদের জন্য দুজনের নাম ভেসে উঠছে। বর্তমানে পুরনিগমের চেয়ারপারসন কৃষ্ণা চক্রবর্তী বা ডেপুটি মেয়র তাপস চট্টোপাধ্যায়কে পরবর্তী মেয়র করা হতে পারে জল্পনা। সল্টলেকের কাউন্সিলররা চাইছেন বিধাননগরের প্রাক্তন চেয়ারপারসন কৃষ্ণাকে নয়া মেয়র করা হোক। অন্যদিকে, রাজারহাটের কাউন্সিলররা চাইছেন মেয়র হোন তাপস চট্টোপাধ্যায়। মনে করা হচ্ছে, মেয়র পদ নিয়ে আলোচনার জন্যই বিধাননগরের কাউন্সিলরদের তৃণমূল ভবনে ডেকে পাঠানো হয়েছে বৈঠকে।
বৈঠকে ডাক না পাওয়ার প্রসঙ্গে সব্যসাচী দত্ত বলেছেন, ‘এই বৈঠকের প্রসঙ্গে আমার কিছু জানা নেই। ডাকলে অবশ্যই যাব।’ মেয়র পদ থেকে তাঁকে সরানো হতে পারে প্রসঙ্গে তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, ‘এমন কোনও জল্পনার কথা আমার জানা নেই। দল যা সিদ্ধান্ত নেবে মেনে নেব।’ বিদ্যুৎ ভবনে হাঙ্গামার বিষয়ে তিনি বলেছেন, ‘তিন বছর ধরে বিদ্যুৎ দপ্তরের কর্মচারীদের ডিএ পাননি। রাজ্য সরকারের অন্য দপ্তরগুলির কর্মচারীদের বেতন বাড়লেও বিদ্যুৎ দপ্তরের কর্মীরা সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত। কর্মীদের দাবি নিয়েই শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি হিসাবে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে যোগ দিই। আর ভবনের দরজার কাচ আন্দোলনকারীরা ভাঙেনি।’
উল্লেখ্য, লোকসভা নির্বাচনের আগে সব্যসাচী দত্তের বাড়িতে গিয়েছিলেন বিজেপি নেতা মুকুল রায়৷ পদ্ম শিবিরের নেতা একসময়ের বন্ধুর বাড়িতে দু’ঘণ্টা সময়ও কাটান৷ যদিও বাড়ি থেকে বেরিয়ে মুকুল রায় জানিয়েছিলেন, শুধুমাত্র লুচি-আলুর দম খেতেই সব্যসাচীর বাড়িতে এসেছিলেন তিনি৷ তবে মুকুল রায়ের আচমকা আগমন ঘিরে রাজনৈতিক মহলে নয়া সমীকরণের জল্পনা মাথাচাড়া দেয়৷ তবে কি সব্যসাচী দত্ত বিজেপিতে যোগ দিতে চলেছেন, এই জল্পনা জোরালো হয়েছিল৷ যদিও সাংবাদিক বৈঠক করে সেই জল্পনায় জল ঢেলেছিল ঘাসফুল শিবির৷ তবুও পরবর্তী সময়ে একাধিক ক্ষেত্রে দলবিরোধী মন্তব্য করতে শোনা যায় সব্যসাচীকে। এমনকী নাম না করে রাজ্যের মন্ত্রী সুজিত বসুকে টাটকা আলু এবং নিজেকে পচা আলু বলে বেফাঁস মন্তব্য করেন। যথারীতি একাধিক কার্যকলাপে সব্যসাচী দলকে বিড়ম্বনায় ফেলছিলেন বলে তৃণমূল সূত্রে খবর। তাই তাঁকে নিয়ে এবার সিদ্ধান্ত নিতেই তৃণমূল ভবনে বিধাননগরের কাউন্সিলরদের সঙ্গে ফিরহাদ হাকিম বৈঠক করবেন বলে মনে করা হচ্ছে। এবং তা সব্যসাচীকে বাদ দিয়েই করা হচ্ছে।
The post বিধাননগরের কাউন্সিলরদের নিয়ে তৃণমূল ভবনে বৈঠক, ডাক পেলেন না মেয়র সব্যসাচী দত্ত appeared first on Sangbad Pratidin.