শুভঙ্কর বসু: ১৯৮২ সালে বিজন সেতুর উপর আনন্দমার্গীদের পুড়িয়ে মারার ঘটনায় সে সময়ের সরকারি বিজ্ঞপ্তি তলব করল কলকাতা হাই কোর্ট৷ আনন্দমার্গী নিয়ে বিচারপতি অমিতাভ লালার নেতৃত্বে গঠিত এক সদস্যের কমিটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে মামলা দায়ের করেছেন সিপিএম নেতা তথা সে সময়কার মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়৷
আনন্দমার্গী হত্যার তদন্তের জন্য ২০১৩ সালে বিচারপতি অমিতাভ লালার অধীনে কমিটি গঠন করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার৷ সেই কমিটি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠায় কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়কে৷ জেরার জন্য তাঁকে ডেকে পাঠানোর এক্তিয়ার প্রসঙ্গে কমিশনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়৷ তাঁর দাবি, ঘটনার সময় বিচারপতি এস সি দেবের নেতৃত্বে একটি কমিশন তৈরি হয়েছিল৷ সেই কমিশনের রিপোর্ট কী ছিল? সেই কমিশন ভেঙে না দেওয়া পর্যন্ত নতুন কমিশন কোনও রিপোর্ট দিতে পারবে না৷ এই দাবির ভিত্তিতেই ১৯৮২ সালে গঠিত ওই তদন্ত কমিশন সংক্রান্ত সরকারি বিজ্ঞপ্তি চেয়ে পাঠিয়েছেন বিচারপতি দত্ত৷
লালা কমিশনের সঙ্গে বিরোধটা অবশ্য অনেক আগেই বেধেছিল কান্তিবাবুর৷ সূত্রের খবর, আনন্দমার্গী হত্যা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গঠিত লালা কমিশনের হাতে নতুন বেশ কয়েকটি প্রমাণ আসে৷ কমিশনের হাতে তথ্য উঠে আসে সেসময় তিলজলায় আনন্দমার্গীদের প্রধান শাখা কার্যালয় খোলার কথা ছিল৷ সে বিষয়ে আলোচনার জন্য ৬ ফেব্রুয়ারি কলোনি বাজার এলাকায় আনন্দমার্গীদের নিয়ে আলোচনার জন্য একটি সভা ডাকে সিপিএম৷ সূত্রের খবর, সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়, প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক শচীন সেন, স্থানীয় সিপিএম নেতা নির্মল হালদার, প্রাক্তন সিপিএম কাউন্সিলর অমল মজুমদারের মতো কসবা-যাদবপুর এলাকার তাবড় নেতারা৷ এর দু’মাস পর ৩০ এপ্রিল তিলজলা সেন্টারে একটি ‘শিক্ষা সম্মেলনে’ যোগ দিতে যাওয়ার সময় ছেলেধরা বানিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে বিজনসেতুতে ১৭ জন আনন্দমার্গীকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে৷ এই ঘটনার সূত্র ধরেই কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ আসে কমিশনের৷
মামলায় কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেছেন, কমিশন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠালেও তাঁকে জেরা করেন সিআইডি, রাজ্য ও আনন্দমার্গীর আইনজীবীরা৷ সেই সময় ঘটনার তদন্ত করেছিল সিআইডি৷ চার্জশিটও দিয়েছিল সিআইডি৷ সেই চার্জশিটের ভিত্তিতেই বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়৷ তাহলে এখন কোন আইনে সিআইডি তাঁকে জেরা করছে? এছাড়াও তাঁর বক্তব্য, ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করেছিল পুলিশ৷ আনন্দমার্গীদের তরফে কোনও অভিযোগ করা হয়নি৷ সেক্ষেত্রে কোন আইনে আনন্দমার্গীর আইনজীবীরা তাঁকে জেরা করতে পারেন, তাও মামলায় জানতে চেয়েছেন কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়৷
সূত্রের খবর, ১৯৮২ সালে এই ঘটনার পর একটি তদন্ত কমিশন তৈরি করেছিল তৎকালীন বাম সরকার৷ বিজ্ঞপ্তি হওয়ার পর এক চুলও এগোয়নি কমিশনের কাজ৷ কমিশনে একটি শুনানিও হয়নি৷ বাধ্যতামূলক হলেও রাজ্য বিধানসভায় কমিশন একটি রিপোর্টও পেশ করেনি৷ সিআইডি তদন্তে কোনও পরিণতি হয়নি৷ তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুকেও বলতে শোনা গিয়েছিল– “কী বা করা যেতে পারে? এই ধরনের ঘটনা ঘটে৷” জ্যোতি বসুর এই বক্তব্যের পর তৎকালীন কসবা এলাকার সিপিএম বিধায়ক শচীন সেন অন্তত ১০ হাজার ক্যাডার নিয়ে কীভাবে আনন্দমার্গীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তা অনেকেরই জানা৷
লালা কমিশন অবশ্য এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১৬ জনের বেশি সাক্ষীর বয়ান নথিভুক্ত করেছে৷ যার মধ্যে রয়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার তৎকালীন জেলাশাসক অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসার শের সিং৷
The post আনন্দমার্গী হত্যা: বাম সরকার গঠিত কমিশনে একটিও শুনানি হয়নি appeared first on Sangbad Pratidin.