অতুলচন্দ্র নাগ, ডোমকল: আর জি কর মেডিক্যালে বিভিন্ন দুর্নীতির দায়ে সাসপেন্ড হওয়া চিকিৎসক বিরূপাক্ষ বিশ্বাসের দুর্নীতির জাল মুর্শিদাবাদের জলঙ্গি পর্যন্ত বিস্তৃত। জানা গিয়েছে, সেখানকার ভাদুরিয়াপাড়ার এক ছাত্রকে কেপিসি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ডাক্তারিতে ভর্তি করে দেওয়ার নাম করে ৮ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন। যে বিষয়ে কাজ না হওয়ায় টাকা প্রাপক ওই ছাত্রের বাবা দিন মহম্মদ আদালতে মামলাও করেছিলেন।
ওই মামলায় দিন মহম্মদের উকিল আক্তার মাসুদ জানান, “মামলায় চার্জশিট হয়ে গিয়েছে। যার জেরে গত শুক্রবার বহরমপুর আদালতে উপস্থিত হয়ে ডাক্তার বিরূপাক্ষ বিশ্বাস জামিন নিয়েছেন। তব ওই মামলা অব্যাহত আছে।” মামলাকারী দিন মহম্মদ আরও জানান, “শুক্রবারের আগে পর্যন্ত ওই চিকিৎসককে ফোন করে পাওয়া যেত না। যদিও বা ফোন ধরতেন, তখন ধমকের সুর কথা বলতেন। আর এখন উনিই ফোন করছেন। কিন্তু আমার প্রাপ্য টাকা নিয়ে বিরোধের মধ্যেই শনিবার মাত্র ৪৫ হাজার টাকা ফেরৎ দিয়েছেন। সোমবার আরও টাকা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার পর্যন্ত তা দেননি। উলটে সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলার জন্য ফের ধমক দিয়েছেন তিনি।” ওই ব্যাপারে সংবাদ প্রতিদিনের তরফে তার সঙ্গে বার তিনেক ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি ফোন ধরেননি।
[আরও পড়ুন: চাপের মুখে সিদ্ধান্ত বদল! আপাতত স্থগিত উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের ৫ ছাত্রের বহিষ্কার]
জানা গিয়েছে, ২০২১ সালে জলঙ্গি থানায় ডাক্তার বিরূপাক্ষ বিশ্বাসের(Birupaksha Biswas) বিরুদ্ধে কেপিসি মেডিক্যালে ডাক্তারি পড়ুয়া ছাত্রের ভর্তির জন্য টাকা তোলার অভিযোগ হয়। তাতে কাজ না হওয়ায় দিনমহম্মদ আদালতে মামলা করেন। তিনি জানান, তাঁর ছেলে ডাক্তারি পড়ার জন্য ২০২০ সালে জয়েন্ট এন্ট্রাস পরীক্ষায় বসেছিল। পাশ করলেও নম্বর ভালো ছিল না। ওই অবস্থায় জলঙ্গিরই এক চিকিৎসকের মাধ্যমে বিরূপাক্ষ বিশ্বাসের সঙ্গে পরিচয় হয়। তখন তিনি বর্ধমান মেডিক্যালের প্যাথোলজি বিভাগের প্রধান ছিলেন। পরিচয়ের সময়েই তঁার অনেক প্রভাবের কথা শুনিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, ‘‘আমার ছেলেকে কেপিসি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি ও পড়ার জন্য মোট ৭০ লক্ষ টাকা দাবি করেন। তার জন্য সিট বুকিংয়ের নাম করে প্রথমে তিন লক্ষ টাকা নেন। তখন কথা হয় বাকিটা ভর্তির পর প্রতি সেমিস্টারে দেওয়া হবে। কিন্তু তার আগেই কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করতে হবে বলে আরও পাঁচ লক্ষ টাকার দাবি করেন। বলেন, না হল কলেজ কর্তৃপক্ষ রাজি হচ্ছেন না। ওই অবস্থায় দোকান বিক্রি করে পাঁচ লক্ষ টাকা দিয়েছিলাম। তার পর ছেলেকে নিয়ে দেখা করতে গেলে আর পাওয়া যায়নি। যে চিঠির কথা বলে টাকা নিয়েছিল ওই চিঠিও জাল। পরে আর কোনও পথ না দেখে মামলা করেছিলাম।’’
জানা গিয়েছে, সম্প্রতি আর জি কর কাণ্ড নিয়ে তদন্তে বিরূপাক্ষদের মতো চিকিৎসকদের দুর্নীতির তত্ব ফাঁস ঠিক কিন্তু তিনি অনেক আগে থেকেই দুর্নীতিতে হাত পাকিয়েছেন। সেকথা প্রমাণ করে জলঙ্গির এই মামলা। যা ২০২১ সালেই হয়েছিল।