স্টাফ রিপোর্টার: বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়র (Kailash Vijayvargiya) সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল বীরভূমের বিভাস অধিকারীর। সংবাদমাধ্যমে এমনই দাবি বিভাসবাবুর। তবে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যর সঙ্গে তাঁর যোগাযোগও স্বীকার করেছেন তিনি। বীরভূমের নলহাটির কৃষ্ণপুরে তাঁর আশ্রমের উদ্বোধন করেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাই তাঁর সঙ্গে যে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠেছিল, সেই ব্যাপারে অনেকটা নিশ্চিত এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটও।
এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় মঙ্গলবার উত্তর কলকাতায় আমহার্স্ট স্ট্রিট থানা এলাকার কার্তিক বোস রোডের ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালায় ইডি। চার মাস আগে ওই ফ্ল্যাটটি সিল করা হয়। এই ফ্ল্যাটের সামনে ছিল ‘বেঙ্গল টিচার্স ট্রেনিং কলেজ অ্যাসোসিয়েশন’-এর বোর্ড। ওই সংগঠনের আসল ঠিকানা এপিসি রোডের একটি বহুতলে হলেও এখানে শাখা সংগঠন ছিল বলে দাবি ইডির। ওই সংগঠনের কর্মকর্তা ছিলেন বিভাস। সেই সূত্র ধরে সংগঠনের বহু বৈঠকও কার্তিক বোস রোডের ফ্ল্যাটে হয়েছে। প্রতিবেশীদের সূত্রে খবর এসেছিল যে, বিভাসের ওই ফ্ল্যাটে রাতে বড় বড় ব্যাগ নিয়ে অনেকে আসতেন। সিবিআই ও ইডির অভিযুক্ত তাপস মণ্ডল ও কুন্তল ঘোষের মুখেও উঠে এসেছিল বিভাস অধিকারীর নাম। কুন্তল দাবি করেছিলেন, তাপসের মতো বিভাস অধিকারীও একজন বড়মাপের এজেন্ট। তবে বিভাসের দাবি, তিনি তাপস বা কুন্তল, কাউকেই চেনেন না। ওই দু’জন তাঁকেও চেনেন না।
[আরও পড়ুন: অ্যাডিনো মোকাবিলায় সব হাসপাতালকে নয়া নির্দেশিকা স্বাস্থ্যদপ্তরের, চালু হেল্পলাইন নম্বরও]
ইডির কাছে খবর, বিভাস অধিকারীর নিজস্ব বিএড ও ডিএলএড কলেজ রয়েছে। ওই কলেজে যে ছাত্রছাত্রীরা ভরতি হতেন, তাঁদের শিক্ষকের চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হত। ফলে বিভাসের সঙ্গে এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতির যোগ ইডি উড়িয়ে দিচ্ছে না। ইডি-র দাবি, বিভাসের ফ্ল্যাট থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার হয়েছে। তবে বিভাস জানান, তিনি ইতিমধ্যেই ইডিকে তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নথি জমা দিয়েছেন। সংবাদমাধ্যমকে বিভাস অধিকারী জানান, তাঁর সঙ্গে বিধানসভা ভোটের আগে এই রাজ্যের দায়িত্বে থাকা বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়র খুবই সুসম্পর্ক ছিল। বিভাসের দাবি, নলহাটির আশ্রমে কৈলাস বিজয়বর্গীয় বেশ কয়েকবার গিয়েছেন। বিভাস দুর্ঘটনার কবলে পড়ার পরও কৈলাস বিজয়বর্গীয় তাঁকে দেখতে যান। যদিও তিনি বিজেপিতে যোগ দেননি।
বিভাসের দাবি, বিএড বা ডিএলএড কলেজ তৈরি করলে মানিক ভট্টাচার্যর সঙ্গে দেখা করতেই হবে। মানিক যে তাপসের সংগঠনের মাধ্যমে বিএড, ডিএলএড কলেজের মালিকদের নির্দেশ পাঠিয়ে পাঁচ হাজার টাকা করে দিতে বলেছিলেন, সেই নির্দেশ তাঁর কাছেও গিয়েছিল। মানিকের সঙ্গে ছাত্র ভরতি থেকে শুরু করে কলেজের জন্য বেশ কয়েকবার দেখা করেছিলেন তিনি। আশ্রম উদ্বোধনের জন্য তিনি নবান্নে চিঠি লিখেছিলেন। তখন তাঁকে বলা হয়, পার্থ চট্টোপাধ্যায় আশ্রম উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনের সূত্র ধরেই পার্থর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। ইডির মতে, এই সম্পর্ক বজায় রেখে বিভাস কিছু সুবিধাও নেন। তৃণমূলের নলহাটি-২ ব্লকের প্রাক্তন সভাপতি বিভাসের দাবি, তিনি এখন দল করেন না। তবে গত বছর তিনেক ধরে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে থাকা সংস্থা ‘সেন্ট্রাল অয়্যারহাউসিং কর্পোরেশন’-এর ডিরেক্টর। বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়র সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে তিনি ওই পদটি পেয়েছেন কি না, তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।