রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: ‘বেসুরো’দের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার ভাবনাচিন্তা করছে বিজেপি (BJP)! সোশ্যাল মিডিয়ায় বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ, আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় এবং বিজেপির মহিলা মোর্চার সাধারণ সম্পাদক অমৃতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ খোলার পর থেকে সেই গুঞ্জনই শোনা যাচ্ছিল। রাজনৈতিক মহলে কান পাতলে আরও শোনা যাচ্ছিল কেন সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখ খুললেন, তার কারণ দর্শানোর নোটিস ধরানো হতে পারে তিনজনকেই। তবে বিজ্ঞপ্তি জারি করে সেই জল্পনায় জল ঢালল রাজ্য বিজেপি। শোকজের কথা ভুয়ো বলেই দাবি গেরুয়া শিবিরের।
গত বুধবার দুপুরে মুখ খুলেছিলেন বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ (Saumitra Khan)। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি জানান, যুব মোর্চার সভাপতি পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তের কথা। ফেসবুক (Facebook) ও টুইটারে তিনি লেখেন, “আমি আজ থেকে ব্যক্তিগত কারণে যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি নিলাম। তবে বিজেপিতে ছিলাম, আছি, আর আগামীতেও থাকব। ভারত মাতা কি জয়।” এরপরই ফেসবুক লাইভে ক্ষোভ উগরে দেন শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari) বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, “বিরোধী দলনেতা নিজেকে বিরাট করে জাহির করছেন, যখন তৃণমূলে ছিলেন তখনও নিজেকে বিশাল কিছু মনে করতেন। মনে হচ্ছে দলে শুধু ওঁরই অবদান রয়েছে। আমাদের কোনও ত্যাগ নেই। নতুন নেতা হঠাৎ করে এসে যেভাবে দিল্লির নেতাদের ভুল বোঝাচ্ছে, তাতে গোটা দল একটা জেলার মধ্যে চলে আসছে।” দিলীপ ঘোষকেও (Dilip Ghosh) কটাক্ষ করতে ছাড়েননি সৌমিত্র। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে সন্ধেয় ইস্তফার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের কথা জানান বিজেপি সাংসদ।
[আরও পড়ুন: সহজে ঋণ দেওয়ার ফাঁদ, রাজারহাটে ভুয়ো কলসেন্টার চক্রের পর্দাফাঁস CID’র, গ্রেপ্তার ১২]
এদিকে, সৌমিত্রর মতোই বাবুল সুপ্রিয়ও (Babul Supriyo) সোশ্যাল মিডিয়ায় সোচ্চার হন। ‘আমাকে ইস্তফা দিতে বলা হয়েছিল’ বলে উল্লেখ করেন বিজেপি সাংসদ। পরে অবশ্য আবার তা শুধরে নেন বাবুল। ইস্তফা দিতে বলা হয়েছে একথা এভাবে ব্যবহার করা ঠিক হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি। দিলীপ ঘোষকে উল্লেখ করেও সরাসরি ফেসবুক পোস্ট করেছেন বাবুল। যদিও সেই পোস্টে ক্ষোভের পরিবর্তে শ্লেষের বহিঃপ্রকাশ। আবার বৃহস্পতিবার দুপুরে ‘বেসুরো’দের তালিকায় জায়গা করে নেন বিজেপি যুব মোর্চার সাধারণ সম্পাদক অমৃতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফেসবুক লাইভে দলের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। তুলোধোনা করেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় (Rajib Banerjee) ও সব্যসাচী দত্তকে (Sabyasachi Dutta)। বলেন, “দলের ভরাডুবির জন্য দায়ী ওঁদের মতো দালাল নেতা।”
রাজনৈতিক মহলের মতে, সোশ্যাল মিডিয়ায় এই তিন নেতা-নেত্রীর এহেন মন্তব্য নিয়ে যথেষ্ট বিপাকে বিজেপি। দলের অন্দরে তাঁদের নিয়ে চলছে জোর আলোচনা। বিরোধীরাও বারবার দাবি করছেন, পদ্ম শিবিরের অন্দরের ফাটল নাকি ক্রমশ প্রকট হয়ে উঠছে। আর সে কারণে এমন মন্তব্য করতে দেখা যাচ্ছে সকলকে। এই পরিস্থিতিতে কিছুটা চাপে গেরুয়া শিবির। তাই ‘বেসুরো’দের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ভাবনা শুরু হয়েছে বলেও শোনা গিয়েছিল। তবে বিজ্ঞপ্তি জারি করে রাজ্য বিজেপির তরফে জানানো হয়েছে, বাবুল সুপ্রিয়, সৌমিত্র খাঁ এবং অমৃতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শোকজ করা হচ্ছে না। এসব খবর ভুয়ো বলেও দাবি করা হয়েছে।