দীপাঞ্জন মণ্ডল, নয়াদিল্লি: এবারও দিল্লির বাঙালি মহল্লায় পদ্ম ফুটল না। কালকাজি থেকে গ্রেটার কৈলাস সর্বত্রই আপ ঝড়। রাজধানী দখলের লড়াইয়ে দিল্লিনিবাসী বাঙালিরা বুঝিয়ে দিলেন ধর্মীয় ভেদাভেদ তাঁরা মানবেন না। বরং যারা এই ভেদাভেদ করতে আসবেন তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন তাঁরা। প্রসঙ্গত, দিল্লি নির্বাচনে তৃণমূলের তরফে আম আদমী পার্টিকে সমর্থন করার কথাও ঘোষণা করা হয়েছিল। ফলে তৃণমূলমনস্ক ভোটারদের ভোটও আপ পেয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
আগে থেকেই আপ ঝড়ের পূর্বাভাস ছিল। সকালে ইভিএম খুলতেই পূর্বাভাস মিলতে শুরু করে। বেলা যত গড়িয়েছে আপের ঝাড়ু তত শক্তিশালী হয়েছে। পালটা কোণঠাসা হয়েছে পদ্মশিবির। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, দিল্লির আপের ঝুলিতে ৬২টি আসন। এদিকে পদ্মশিবিরের ঝুলিতে এসেছে মাত্র আটটি আসন। কিন্তু বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় খাতা খুলতে পারেনি গেরুয়া শিবির।
[আরও পড়ুন : গুরুর ভূমিকায় ফের সফল প্রশান্ত কিশোর, বজায় রাখলেন ঈর্ষণীয় রেকর্ড]
দিল্লিতে বাঙালিদের ঠিকানা মূলত চিত্তরঞ্জন পার্ক ও তৎসংলগ্ন এলাকা। ১৯৫৪ সালের পরবর্তী সময় থেকে পূর্ববঙ্গ থেকে আগত বহু মানুষ এই এলাকায় ঘাঁটি গেড়েছিলেন। দিল্লির চিত্তরঞ্জন পার্কে এলে মনে হতে পারে এক টুকরো পশ্চিমবঙ্গে এসে পড়ছেন। এই এলাকায় দু’টি বিধানসভা কেন্দ্র রয়েছে-কালকাজি ও গ্রেটার কৈলাস। মনে করা হয়েছিল, কেন্দ্র সরকারের CAA ও NRC -র সমর্থনে এই এলাকার পূর্ববঙ্গীয় বাঙালিরা বিজেপিকে উজাড় করে ভোট দেবেন। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। ২০১৫ সালের তুলনায় ভোটের শতাংশ বাড়লেও একটি আসনেও জিততে পারেনি গেরুয়া শিবির। বিধানসভা নির্বাচনে কালকাজি থেকে আপের প্রার্থী হয়েছেন অতীশী মারলেনা। তাঁর বিরুদ্ধে বিজেপির পক্ষ থেকে লড়াই করেছেন ধর্মবীর সিং। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, অতীশী মারলেনা পেয়েছেন ৩৮ হাজার ৮৪টি ভোট এবং ধর্মবীর পেয়েছেন ৩৪ হাজার ৪৪২টি ভোট। অন্যদিকে গ্রেটার কৈলাসে আপ প্রার্থী পেয়েছেন প্রায় ৬০ হাজার ভোট। সেখানে বিজেপি প্রার্থী পেয়েছেন ৪৩ হাজার ভোট। কিন্তু কেন এমন হল? লোকসভা নির্বাচনে দিল্লির সাতটি আসনেই জয় পেয়েছিল বিজেপি। বাঙালি মহল্লা থেকেও ভোট পেয়েছিল তারা। তাহলে এবার কেন মুখ ফেরাল বাঙালিরা?
[আরও পড়ুন : রাজনীতি থেকে দূরে শাহিনবাগ, ভোটের ফলাফল নিয়ে মুখে কুলুপ আন্দোলনকারীদের]
এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, ভোট হয়েছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের উন্নয়নের উপর ভিত্তি করে। গত কয়েক বছরে কেজরিওয়াল দিল্লির শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়েছেন। দিল্লির সরকারি স্কুলগুলি পরিকাঠামোগত দিক থেকে অনেক নামী বেসরকারি স্কুলের থেকেও ভাল। দিল্লির হাসপাতালগুলিতে সব নাগরিকের জন্য ফ্রিতে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল। প্রত্যেক পাড়ায় তৈরি হয়েছে ‘মহল্লা ক্লিনিক’। ফলে হয়রানি কমেছে নাগরিকদের। এতো গেল পরিকাঠামোগত উন্নয়ন। কেজরির খয়রাতির উদাহরণও কম নয়। ২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ফ্রি। মহিলাদের জন্য পরিবহণক্ষেত্রে বড়সড় ছাড়, এছাড়াও মহিলাদের সুরক্ষার জন্য পাড়ায় পাড়ায় মার্শাল নিয়োগ। এমন হাজারো পরিকল্পনা করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর এই উন্নয়নের উপর ভিত্তি করেই নির্বাচনী বৈতরণী পার করেছে আম আদমী পার্টি। তবে বাঙালি মহল্লায় কান পাতলে শোনা যাচ্ছে অন্য সমীকরণ। লোকসভায় বিজেপি আর বিধানসভা আপ, এটাই নাকি দিল্লির উন্নয়নের আসল ‘রাজ’।
The post ধর্মীয় ভেদাভেদে অনীহা, দিল্লির বাঙালি মহল্লায় এবারও ফুটল না পদ্ম appeared first on Sangbad Pratidin.