সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: নরেন্দ্র মোদির হ্যাটট্রিকের শতদলে অন্তত তিন পাপড়ির লক্ষ্য স্থির করেছে জম্মু-কাশ্মীর বিজেপি (BJP)। ইউপিএ জমানা বাদ দিলে গত সওয়া শতকের বেশি সময়ে জম্মু-কাশ্মীরের লোকসভা আসনগুলির মধ্যে উধমপুর ও জম্মুর রং ছিল গেরুয়া। ২০০১ সালে বিজেপি সাংসদ বিষ্ণু দত্তশর্মার মৃত্যুর পর হওয়া উপনির্বাচনে জিতে বছর দুয়েকের জন্য সংসদে গিয়েছিলেন ন্যাশনাল কনফারেন্সের চৌধুরি তালিব হোসেন। এছাড়া জম্মুতে ১৯৯৮ থেকে ও প্রতিবেশী কেন্দ্র উধমপুরে আরও দুবছর আগে থেকেই জিতেছেন বিজেপি প্রার্থীরা।
এই দুই আসনে এবার জয়ের ব্যবধানের রেকর্ড আরও বেশি করার বিষয়ে আশাবাদী জম্মু-কাশ্মীর বিজেপি। পাশাপাশি উপত্যকাতেও (Jammu and Kashmir) ইতিহাস তৈরি করে প্রথমবার কোনও বিজেপি প্রার্থীকে সংসদে পাঠানোর বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী তারা। শ্রীনগর, বারামুলা ও অনন্তনাগ-রাজৌরি (Anantnag-Rajouri)। এই তিন কেন্দ্রের মধ্যে শেষ আসনটিকেই পাখির চোখ করছে পদ্মশিবির। কেন হঠাৎ এই আসন নিয়ে এত আত্মবিশ্বাসী বিজেপি? আসলে গেরুয়া বাহিনীর আত্মবিশ্বাসের পালে হাওয়া দিয়েছে এলাকা পুনর্বিন্যাস। ডিলিমিটেশনের পরে এবার জম্মু-কাশ্মীরের পাঁচ আসনে বেশ কিছু রদবদল হয়েছে। যার সবথেকে বেশি প্রভাব পড়েছে অনন্তনাগ-রাজৌরি কেন্দ্রে। সোপিয়ান, কুলগাম, অনন্তনাগের সঙ্গে এই কেন্দ্রে জুড়েছে রাজৌরি ও পুঞ্চের সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র। আবার পুলওয়ামা ও সোপিয়ানের ছটি বিধানসভা কেন্দ্র বাদ গিয়ে যোগ হয়েছে শ্রীনগর কেন্দ্রে। বর্তমানে অনন্তনাগ-রাজৌরি কেন্দ্রের ১৮টি বিধানসভার মধ্যে সাতটিই জম্মু অঞ্চলের।
[আরও পড়ুন: ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধে শেয়ার বাজারে বিরাট ধস, ৮ লক্ষ কোটি লোকসানের মুখে লগ্নিকারীরা!]
৩৭০ পরবর্তী প্রথম নির্বাচনে উপত্যকায় ভোটদানের হার বৃদ্ধির খবর থাকলেও পরম্পরাগতভাবে কাশ্মীরে ভোটদান হয় খুবই কম। তার উপর গত লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই এই কেন্দ্রে পদ্ম ফোটানোর লক্ষ্যে রাতদিন এক করেছে বিজেপি। সংগঠন শক্তিশালী করতে হাইকমান্ডের নির্দেশে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অর্জুনরাম মেঘওয়াল কোভিড পরবর্তী সময়ে ব্যাপক পরিশ্রম করেছেন। রাজৌরি ও পুঞ্চ থেকে বেশি সংখ্যক ভোটদান করিয়ে ব্যবধান বাড়িয়ে উপত্যকার ক্ষতে প্রলেপ দিতে চাইছে বিজেপি। আবার কাশ্মীরের ১১টি বিধানসভায় আবার দানা বাঁধেনি ‘ইন্ডিয়া’ জোট। পিডিপি সুপ্রিমো মেহবুবা মুফতির সঙ্গে লড়ছেন এনসির মিয়া আলতাফ। সঙ্গে আবার রয়েছেন প্রাক্তন কংগ্রেস ও বর্তমানে ডেমোক্র্যাটিক প্রোগ্রেসিভ আজাদ পার্টি প্রধান গুলাম নবি আজাদ। সম্প্রতি তিনি লড়াই না করার ইঙ্গিত দিলেও আসরে রয়েছে আপনি পার্টিও। এই দুই দল উপত্যকায় এনসি ও পিডিপির ভোটব্যাঙ্কে চিড় ধরাবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
জম্মু-কাশ্মীর বিজেপির মুখপাত্র আলতাফ ঠাকুরের মতে, “মোদিজি অব কি বার চারশো পারের যে লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছেন, সেই চারশো পাপড়িতে এবার জম্মু-কাশ্মীর থেকে অন্তত তিনটে পাপড়ি থাকবেই। বাড়লেও অবাক হবেন না। ২০১৯-এর পর থেকেই আমরা দক্ষিণ কাশ্মীর নিয়ে কোমর বেঁধে লড়াই করেছি। দেখিয়ে দেব সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর হিসাবে খ্যাত দক্ষিণ কাশ্মীরেও পদ্ম ফোটানো যায়। মনে রাখবেন, দক্ষিণ কাশ্মীর শান্ত মানেই জম্মু-কাশ্মীর শান্ত।” আত্মবিশ্বাসী বিজেপি শিবিরের অভ্যন্তর থেকে ডিলিমিটেশনের যে তত্ত্ব সামনে আসছে, তারপর আরও একবার উঠে আসছে বিরোধীদের তোলা চেনা প্রশ্ন। ‘বিভিন্ন স্বতন্ত্র সংস্থাকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে বিজেপি।’ উপত্যকার বিভিন্ন বিরোধী দলের নেতাদের প্রশ্ন, কীভাবে বিজেপি আগে থেকে জানত, ডিলিমিটেশনের ফলে অনন্তনাগ বদলে যাবে অনন্তনাগ-রাজৌরিতে? কীভাবে এত আগে থেকে তারা নিজেদের হোমওয়ার্ক করতে পারে?