রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: একুশের বিধানসভা ভোটের আগে বাংলায় দল ভাঙানোর খেলা খেলেও সফল হয়নি বিজেপি (BJP)। তখন ‘যোগদান মেলা’-র কর্মসূচি বুমেরাং হয়ে ফিরে এসেছিল তাঁদের কাছে। সেই সময় বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের এই কাজে অসন্তোষ দেখা দিয়েছিল গেরুয়া শিবিরের মধ্যেই। আদি-নব্যে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল দল। বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি পর্যুদস্ত হওয়ার পর তখনকার সেই দল ভাঙানোর কৌশল যোগদান মেলা নিয়ে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল কৈলাস বিজয়বর্গীয় (Kailash Vijayvargiya) থেকে শুরু করে বিজেপি নেতৃত্বকে। সেই আদি-নব্য দ্বন্দ্ব এখনও চলছে বঙ্গ বিজেপির মধ্যে। আর তার মধ্যেই আবার ‘যোগদান কর্মসূচি’-র ভাবনা বঙ্গ বিজেপির।
দলের পুরনো নেতা-কর্মীদের গুরুত্ব না দিয়ে আবার অন্য দল থেকে লোক নিয়ে আসার এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা শুরু হয়ে গিয়েছে রাজ্য বিজেপির অন্দরে। দলের পুরনো কর্মীরা ক্ষোভপ্রকাশ করে প্রশ্ন তুলেছেন, একবার যোগদান মেলা করে শিক্ষা হয়নি। আবার যোগদান কর্মসূচি কেন? বুথে বুথে কর্মী নেই। পুরনোদের অধিকাংশই নিষ্ক্রিয়। তাই বিরোধী দল থেকে আবার লোক নিয়ে এসে বিজেপির শূন্যস্থান ভরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। যা দলের পক্ষেই ক্ষতিকর। এমনটাই মনে করছে দলের একাংশ। ফলে ফের যোগদান কর্মসূচি শুরু হলে দলের মধ্যে প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়তে হতে পারে বঙ্গ বিজেপির ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীকে।
[আরও পড়ুন: কথা ছিল বাড়ি ফেরার, আগের রাতেই সহকর্মীর গুলিতে জখম CISF জওয়ান, উদ্বেগে পরিবার]
গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে অন্য দলের নেতা-কর্মীদের নিতে যোগদান মেলা কর্মসূচি নিয়েছিল বিজেপি। কখনও জেলা অফিসে, কখনও রাজ্য দপ্তরে, কখনও বা হোটেল ভাড়া করে যোগদানের আয়োজন দেখা গিয়েছিল। আবার মেদিনীপুরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সভামঞ্চেও মেগা যোগদানপর্ব চলেছিল। কেউ কেউ আবার সোজা দিল্লিতে গিয়ে যোগদান করেন। এত কিছু করেও অবশ্য বঙ্গ জয়ের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায় শাহ-নাড্ডাদের। দল হারার পর এই যোগদান মেলা নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। প্রবীণ বিজেপি নেতা তথাগত রায় থেকে শুরু করে বিজেপির অন্দরেও ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। সেই সময় যোগদান করা অনেকেই তাদের পুরনো দলে ফিরে গিয়েছেন। কেউ আবার এখন বিজেপির ভরাডুবির পর রাজনীতিতেই নেই। উলটে এইভাবে নতুনদের যোগদান করিয়ে তাদের নিয়ে মাতামাতি করায় বিজেপির পুরনোরা ক্ষোভে বসে গিয়েছেন।
সূত্রের খবর, তখন এইভাবে অন্য দল থেকে লোক এনে ভিড় বাড়ানোর নাকি বিরোধিতা করেছিলেন তৎকালীন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। এখন সুকান্ত মজুমদারের জমানায় আবার সেই যোগদান কর্মসূচি চালু করতে চাইছে বিজেপি। বুথস্তরে বিরোধী দলের কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য দলের গোপন সার্কুলারও দেওয়া হয়েছে। বিজেপির বিধায়ক-সাংসদদের এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যেটা নিয়ে দলের বড় অংশেরই আপত্তি রয়েছে। দলের প্রাক্তন রাজ্য নেতা সমীরণ সাহা, বিজেপি বাঁচাও মঞ্চের তরফে দলের সংখ্যালঘু সেলের প্রাক্তন সহ-সভাপতি শামসুর রহমানদের বক্তব্য, আগে দলের পুরনো নেতা-কর্মীদের সম্মান দিতে হবে। তাঁদের সক্রিয় করতে হবে। তা না করে এভাবে আবার বাইরে থেকে নতুন লোক এনে দলে ভিড় বাড়ালে পুরনোদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়বে।