নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: আগামী বছরের বাংলা বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি (BJP) যে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপাতে চলেছে সেকথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ প্রথম থেকেই বাংলা বিধানসভা নির্বাচনের দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন। তিনি নিজে শুক্রবারই দু-দিনের বাংলা সফরে যাচ্ছেন। নির্বাচনের আগে পর্যন্ত প্রতি মাসে অন্তত দু-দিন করে তিনি যে বাংলা সফর করবেন সে বিষয়টিও পাকা হয়ে গিয়েছে। অমিত শাহর (Amit Shah) পাশাপাশি অন্যান্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদেরও কাজে লাগাতে চাইছে গেরুয়া শিবির।
কেন্দ্রীয় বিজেপির তরফ থেকে ইতিমধ্যেই রাজ্যকে পাঁচটি জোনে ভাগ করে পাঁচজন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এঁদের পাশাপাশি খুব শীঘ্রই কেন্দ্র ও বিজেপি শাসিত রাজ্য মিলিয়ে সাত মন্ত্রীকে বাংলার নির্বাচনের কাজে ময়দানে নামানো হচ্ছে। এই মন্ত্রীরা রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শন করবেন, দলের হয়ে প্রচার করবেন। পাশাপাশি মানুষের কাছ থেকে মতামত সংগ্রহ করবেন এবং সেই সংক্রান্ত রিপোর্ট বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা (JP Nadda) বা অমিত শাহর হাতে তুলে দেবেন। এই প্রক্রিয়া চলবে লোকসভা কেন্দ্র ধরে ধরে। বাংলার ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে প্রত্যেক মন্ত্রীকে ৬টি করে লোকসভার দায়িত্ব দেওয়া হবে বলেই বিজেপি সূত্রের খবর। কেন্দ্রীয় জাহাজ মন্ত্রী মনসুখ মান্ডব্য, জলশক্তি মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত, আদিবাসী বিষয়ক মন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা, পর্যটন ও সংষ্কৃতি মন্ত্রী প্রহ্লাদ সিং প্যাটেল এবং পশুপালন মন্ত্রী সঞ্জীব বালিয়ানের নাম এই তালিকায় রয়েছে। এর পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশের উপ-মুখ্যমন্ত্রী কেশব প্রসাদ মৌর্য্য এবং মধ্যপ্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নরোত্তম মিশ্রকে এই তালিকায় রাখা হয়েছে।
[আরও পড়ুন: ‘কৃষকদের ভুল বোঝাচ্ছে বিরোধীরা, ফসলের MSP দেওয়া হবে’, সাফ কথা মোদির]
বিজেপি সূত্রের খবর, মন্ত্রীদের দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে নানা রকমের হিসেব নিকেশ মাথায় রাখা হয়েছে। যেমন জাহাজমন্ত্রী মাণ্ডব্যকে হলদিয়া ও তার আশপাশের এলাকাগুলিতে জোর দিতে বলা হয়েছে। আবার মুন্ডাকে পূর্ব মেদিনীপুর ও আদিবাসী অধ্যুষিত ঝাড়গ্রামের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কলকাতার সমস্ত আসনগুলির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শেখাওয়াতকে। প্যাটেল দেখবেন উত্তরবঙ্গের লোকসভা আসনগুলি। হাওড়ার অঞ্চলের আসনগুলি মৌর্য্য এবং মুর্শিদাবাদ ও নদীয়ার আসনগুলির উপর বালিয়ানকে নজর দিতে বলা হয়েছে। এঁরা প্রত্যেকেই ‘গৃহ সম্পর্ক অভিযান’ অর্থাৎ মানুষের বাড়ি বাড়ি ঘুরে কথা বলবেন, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে বৈঠক করবেন। কেন্দ্র সরকারের বিভিন্ন কর্মসুচি নিয়ে প্রচার করবেন। সঙ্গে কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলি ঠিকমতো রূপায়িত হয়েছে কিনা এবং সেই প্রকল্পের সুবিধা মানুষ ঠিকমতো পাচ্ছেন কিনা সেই বিষয়েও খোঁজ খবর নেবেন।
[আরও পড়ুন: কৈলাস-মুকুল-অর্জুনের বিরুদ্ধে এখনই করা যাবে না কঠোর পদক্ষেপ, রাজ্যকে নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের]
আগামী সপ্তাহ থেকেই পুরোদমে কাজ শুরু করে দেবেন এই সমস্ত মন্ত্রীরা। তাঁদেরকে চলতি মাসের শেষেই নাড্ডার হাতে রিপোর্ট তুলে দেওয়ার সময়সীমা দেওয়া হয়েছে। এই তালিকায় যাদের নাম রাখা হয়েছে তাঁদের মধ্যে মাণ্ডব্য, শেখাওয়াতরা একপ্রস্থ বাংলা সফর সেরেও ফেলেছেন। চলতি ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই নির্বাচনের প্রস্তুতির কাজ সেরে ফেলতে চাইছে কেন্দ্রীয় বিজেপি। নতুন বছরের শুরু থেকে প্রচারের কাজ শুরু কথা ভাবা হচ্ছে। জানুয়ারি থেকেই খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) বাংলার প্রচারের লক্ষ্যে সরকারি ও দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন বলেই ঠিক হয়েছে। তবে, নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হওয়ার পরেই মোদির জনসভা শুরু হবে। বাংলায় প্রধানমন্ত্রীর এক ডজনেরও বেশি জনসভা করার সম্ভাবনা রয়েছে।