বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, নয়াদিল্লি: টাকার পাহাড়ে গেরুয়া শিবির। অথচ তার সিংহভাগ অঙ্কের উৎস নাকি অজানা নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ বা জেপি নাড্ডাদের। নির্বাচন কমিশনে এমনই অকল্পনীয় যুক্তি সাজিয়েছে কেন্দ্রের শাসকদল। অথচ অঙ্কের পরিমাণ নেহাত কম নয়। কমিশনে দেওয়া হিসাব অনুযায়ী অজানা অর্থের পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ১৬১ কোটি টাকা। বিপুল পরিমাণ এই অর্থের উৎস সম্পর্কে কমিশন (Election Commission) জানতে চাইলে কার্যত নীরব থেকেছেন মোদি, শাহরা। কমিশনের জবাবে বলা হয়েছে ‘আননোন সোর্স।’ কেন্দের শাসকদলের এহেন যুক্তিতে হতবাক কমিশনের একাংশ। সেইসঙ্গে এই অস্বাভাবিক বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। তবে বিষয়টি নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে গেরুয়া শিবিরের নেতারা।
সম্প্রতি, একটি বেসরকারি সংস্থার রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসতেই চক্ষু চড়কগাছ কেন্দ্রের শাসক ও বিরোধী শিবিরের নেতাদের। সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী গত অর্থবর্ষে বিজেপি (BJP), কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএম, বিএসপির (BSP) মতো সাতটি জাতীয় দল মোট ৩ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা অনুদান পেয়েছে। যদিও এর সিংহভাগ অর্থই নাকি দলের কোষাগারে জমা পড়েছে অজানা উৎস থেকে। সেই অঙ্কের পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ৭০ কোটি টাকা। কমিশনের কাছে রাজনৈতিক দলগুলোর তরফে যে হিসাব জমা দেওয়া হয়েছে তার অধিকাংশ অনুদানই পেয়েছে গেরুয়া শিবির। এই অঙ্কের পরিমান ১ হাজার ৯১৭ কোটি টাকা। শুধুমাত্র ৯১৭ কোটির টাকার উৎস কমিশনকে জানাতে পেরেছে পদ্মপক্ষ। কিন্তু সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো বিজেপির কোষাগারে অনুদান বাবদ জমা পড়া অর্থের সিংহভাগই অজানা উৎস থেকে এসেছে বলে কমিশনকে জানিয়েছেন জেপি নাড্ডা (JP Nadda) ও বিএল সন্তোষরা (BL Santosh)।
[আরও পড়ুন: ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনায় কেন্দ্রের অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণের আরজি খারিজ সুপ্রিম কোর্টে]
এই বিপুল পরিমাণ অর্থের উৎস অজানা থাকায় অস্বস্তিতে গেরুয়া শিবির। দলের একাংশের মতে চলতি বছরে এখনও ছ’টি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে বিধানসভা ভোট (Assembly Election)। বিষয়টি প্রকাশ্যে আশায় বিরোধীরা ভোটের প্রচারে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করবে। এমনিতে আদানি ইস্যুতে ল্যাজেগোবরে হতে হচ্ছে দলকে। তারপর ফের দলের কোষাগার নিয়ে মানুষের সামনে প্রশ্ন তুলে দেওয়ার সুযোগ পেয়ে গেল বিরোধীরা। স্বাভাবিকভাবেই অস্তস্তি বাড়বে নেতৃত্বের। কারণ কুপন কেটে টাকা তোলার রেওয়াজ গেরুয়া শিবিরে নেই। পুরোটাই এসেছে ইলেক্টোরাল বন্ড ও স্বেচ্ছা অনুদান মারফত।
[আরও পড়ুন: ED’র বিরুদ্ধে হেনস্তার অভিযোগ, রক্ষাকবচ চেয়ে হাই কোর্টে সরকারি প্যানেলভুক্ত আইনজীবী সঞ্জয় বসু]
এমনিতে ইলেক্টোরাল বন্ড মারফত উৎস জানাতে বাধ্য নয় রাজনৈতিক দলগুলো। তবে যেহেতু স্টেট ব্যাংক একমাত্র ইলেক্টোরাল বন্ড বিক্রি করে তাই ইচ্ছে করলেই কমিশন ব্যাংক থেকে অর্থের উৎস জানতে পারে। কিন্তু ব্যাঙ্ক কতৃপক্ষ বা কমিশন নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) ও অমিত শাহদের (Amit Shah) বিরুদ্ধে গিয়ে কতখানি খোঁজখবর করবে তা নিয়ে সন্দিহান রাজনৈতিক মহল। ফলে বিপুল পরিমাণ এই অর্থের উৎস অজানাই থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল বলেই মনে করা হচ্ছে।