সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রথমে লাথি, কান ধরে ওঠবোস। তারপর নিজের থুতু চাটতে বাধ্য করা হল মুসলিম এক তরুণকে। এক বিজেপি (BJP) নেতার এহেন ‘তালিবানি’ শাসনের নির্মম ছবি ধরা পড়ল ঝাড়খণ্ডের (Jharkhand) দুমকায়। ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। ‘সংবাদ প্রতিদিন’ ওই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি।
মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানিয়ে দেওয়া এই ঘটনা গত ৬ আগস্টের। তবে প্রকাশ্যে এসেছে মঙ্গলবার। ভাইরাল ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, সমবেত জনতার মধ্যে সাদা পোশাকে, চেয়ার হাঁকিয়ে বসে বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র কুনওয়ার। জারমুণ্ডির প্রাক্তন বিধায়কের সামনে অসহায়ভাবে দাঁড়িয়ে তৌসিফ নামের এক মুসলিম যুবক। দেবেন্দ্র কখনও তাঁকে লাথি মারছেন, কখনও কড়া শাসানি দিয়ে নিদান দিচ্ছেন, কান ধরে ওঠবোস করতে। মুখ বন্ধ করে সেই আদেশ মানছেন তৌসিফ। শেষে তাঁকে আদেশ দেওয়া হয়, মাটিতে থুতু ফেলতে এবং বাধ্য করা হয় নিজের থুতু চাটতে। প্রাক্তন বিধায়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজন তখন রীতিমতো চিৎকার করছেন, নানাভাবে হেনস্তা করছেন তৌসিফকে। প্রাণভয়ে শেষপর্যন্ত থুতু চাটতে বাধ্য হন ওই যুবক।
[আরও পড়ুন: শাহরুখের বদলে ‘ডন ৩’ ছবিতে রণবীর সিং! ফারহানের ঘোষণায় চাঞ্চল্য, ক্ষিপ্ত নেটিজেনরা]
অমানবিক এই ঘটনার ছবি প্রকাশ্যে আসতেই ছড়িয়ে পড়েছে তুমুল বিতর্ক। ধিক্কারে গর্জে উঠেছে গোটা দেশ। টুইট করে ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। টুইটারে অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে লেখা হয়েছে, ‘‘ঝাড়খণ্ডে মুসলিম যুবককে বিজেপির প্রাক্তন বিধায়কের হেনস্তার এই ঘটনা অত্যন্ত অমানবিক। বিজেপি নেতাদের নৈতিকতা বোধের অভাব স্পষ্ট। সামগ্রিকভাবে দলেরও সেই একই অবস্থা।’’
তাৎপর্যপূর্ণভাবে, ঘটনার ভিডিও নেটদুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়লেও পুলিশের দাবি, তাদের কাছে হেনস্তার কোনও অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ এলে খতিয়ে দেখা হবে, জানিয়েই আপাতত কাঁধ থেকে দায় ঝেড়েছে তারা। জানা গিয়েছে, তৌসিফ দুমকার সাধুডিহ গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর হেনস্তায় অভিযুক্ত বিজেপি নেতার শাস্তির দাবিতে ইতিমধ্যেই সরব গ্রামবাসীরা। কিন্তু নিজের ‘দোষ’ মানতে নারাজ বিজেপির এই প্রাক্তন বিধায়ক। উলটে অত্যাচারিত মুসলিম যুবককেই কাঠগড়ার দাঁড় করিয়েছেন দেবেন্দ্র। বিজেপি নেতার দাবি, তৌসিফ নদীতে স্নানরত মেয়েদের ছবি তুলছিলেন। তাই তিনি তাঁকে ‘শাস্তি’ দিয়েছেন। অথচ দেবেন্দ্রর এই দাবি মানতে নারাজ গ্রামবাসীরা।
[আরও পড়ুন: উচ্ছেদের নোটিসে স্থগিতাদেশ, জমি বিতর্কে সিউড়ি আদালতের নির্দেশে সাময়িক স্বস্তিতে অমর্ত্য সেন]
তাদের পালটা মত, এমন কিছুই ঘটেনি। ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হয়ে পড়তেই নিজের দোষ ঢাকার চেষ্টা করছেন বিজেপি নেতা। সেই কারণেই মিথ্যার আড়াল নিয়েছেন। প্রসঙ্গত, ইতিপূর্বে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওয় বিজেপিশাসিত মধ্যপ্রদেশে এক ব্যক্তিকে, আদিবাসী দলিতের গায়ে প্রস্রাব করতে দেখা গিয়েছিল। পরে জানা যায়, সেই ব্যক্তি ছিলেন বিজেপি-বিধায়ক ঘনিষ্ঠ। সেই ঘটনা ঘিরেও তীব্র বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছিল দেশজুড়ে। শেষে মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান ওই আদিবাসী অত্যাচারিতকে নিজের বাড়িতে ডেকে আনেন এবং তাঁর পা ধুইয়ে দিয়ে ক্ষমা চান।