বিশেষ সংবাদদাতা, নয়াদিল্লি: নতুন রাজ্যপালের উপর জোর খেপেছেন বাংলার বিরোধী দলনেতা। এক মাসও পূর্ণ হয়নি তিনি রাজভবনের বাসিন্দা হয়েছেন। এর মধ্যেই তাঁর বিরুদ্ধে স্কুল পড়ুয়াদের মতো অভিযোগ জানানো শুরু করেছেন শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। চলতি সপ্তাহের সোমবার দিল্লিতে বাংলার নেতৃত্বকে নিয়ে বৈঠকেই তার সূত্রপাত। শুভেন্দুর দাবি, সিভি আনন্দ বোসকে হতে হবে প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের মতো। বিজেপি যদি তাঁর থেকে সহানুভূতির আচরণ না পায়, তাহলে লাভ কী? শুভেন্দু যখন এ কথা বলছেন তাঁর দিল্লির নেতাদের কাছে, তখন বাংলার রাজ্যপাল শুক্রবার একটি অনুষ্ঠানে রাজ্যের বিরোধী দলনেতাকে আরও হতাশ করে বলেছেন, “গণতন্ত্রে ভারসাম্য খুবই জরুরি। আমরা একসঙ্গে আগামিদিনে পথ চলব।” বাংলার রাজ্যপালের মতো দিল্লির নেতারাও ক্লাসের মনিটরের মতো শুভেন্দুর রোজকার অভিযোগকে আমল না দেওয়ায় কিছুটা মুষড়ে পড়েছেন বিরোধী দলনেতা।
মরার উপর খাঁড়ার ঘা পড়ে, যখন বাংলার শাসক দলের একাধিক নেতার তালিকা তুলে ধরে শুভেন্দু তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। ক্ষুব্ধ নেতৃত্ব স্পষ্ট ভাষায় তাকে জানিয়ে দেন, নিজের সংগঠনের জোরে লড়াই করুন। সংগঠন না থাকলে তা তৈরি করুন। এজেন্সির ভরসায় রাজনীতি করতে এসেছিলেন নাকি! এমন উত্তর পাওয়ার পর শুভেন্দু কার্যত গুটিয়ে যান। দিলীপ ও সুকান্ত ঘনিষ্ঠ একাধিক নেতা অন্দরের এই খবর প্রকাশ্যে এনে শুভেন্দুকে বেজায় অস্বস্তিতে ফেলেছেন।
এদিকে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে শুভেন্দুর নালিশ নিয়ে সমালোচনায় মুখর হয়েছেন, তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) রাজ্যসভার মুখ্য সচেতক তথা দলের সর্বভারতীয় মুখপাত্র সুখেন্দুশেখর রায়। তিনি বলেছেন, “পূর্বতন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় যে রাজভবন থেকে বিজেপির এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন, আমরা আগে অনেকবার দেখেছি। আমাদের অভিযোগ যে সত্যি সেটাই প্রমাণিত হয়েছে এই নালিশে। নতুন রাজ্যপাল দীর্ঘদিন প্রশাসনিক পদে ছিলেন। তিনি জানেন কীভাবে সাংবিধানিক পদমর্যাদা রক্ষা করতে হয়।”
[আরও পড়ুন: ‘মমতাকে প্রাক্তন করতে গেলে মমি হয়ে যাবে’, শুভেন্দুকে ফের ‘মদন-বাণ’]
বঙ্গ বিজেপি সাংসদ ও পদাধিকারীদের নিয়ে কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রমন্ত্রী সুভাষ সরকারের সরকারি বাসভবনে বৈঠকে বসেছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা। যে সময় দলের বাকি সাংসদরা সাংগঠনিক সমস্যা তুলে ধরতে ব্যস্ত ছিলেন, সেই সময় শুভেন্দুর এহেন আচরণ চোখে লেগেছে অনেকেরই। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বঙ্গ বিজেপি সাংসদ এ প্রসঙ্গে বলেছেন, “এজেন্সি দিয়ে তো আর দলকে মজবুত করা যাবে না। তার জন্য সংগঠনকে মজবুত করতে হবে। অথচ আমরা এখনও বুথ কমিটিই তৈরি করে উঠতে পারিনি।”
বৈঠকে বাংলায় দলের সংগঠনের দুরবস্থা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ করেছেন একাধিক সাংসদ। নাম না করলেও অধিকাংশ সাংসদেরই অভিযোগের নিশানায় ছিলেন দলের সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তী। অভিযোগ নিয়ে সবথেকে সরব ভূমিকায় ছিলেন বনগাঁরা সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। তার এলাকায় শুধুমাত্র জেলা সভাপতি নিয়োগ করা হয়েছে, কমিটি তৈরি করা হয়নি কেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন। নির্বাচনে যারা জিতিয়ে এনেছে তাদের বাদ দিয়ে কেন বিধানসভাগুলিতে একজন করে অস্থায়ী আহ্বায়ক নিয়োগ করা হয়েছে, কতদিন এসব চলবে বলে, নাড্ডার সামনে অমিতাভর উপস্থিতিতেই সরব হয়েছেন শান্তনু। বৈঠক চালকালীন শান্তনু মাঝে একবার বেরিয়েও যান। পরে অবশ্য আবার ফিরেও আসেন।