সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ইতিমধ্যে কুড়িটি আসনে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে ভোটের দামামা বাজিয়ে দিয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি। কখনও নরেন্দ্র মোদি বারাসতে আসছেন। আবার কখনও চলে যাচ্ছেন শিলিগুড়ির জনসভায়। অন্যদিকে পিছিয়ে নিয়ে শাসক দল তৃণমূলও। তারাও জনগর্জন সভার মধ্য দিয়ে লোকসভার লড়াইয়ের আসরে নেমে পড়েছে। ইতিমধ্যে একাধিক জায়গায় সভা করছেন বাম নেতৃত্বও। অর্থাৎ এক কথায় বলা যেতে পারে রাজ্যে ভোটের আবহাওয়া তৈরি হয়ে গিয়েছে। সেই আবহের মধ্যেই এবার এক নতুন গুঞ্জন উঠছে বসিরহাট জুড়ে। বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের ভারতীয় জনতা পার্টির প্রার্থী নাকি হতে চলেছেন ভারতের জাতীয় দলের ক্রিকেটার তথা পেসার মহম্মদ শামি (Mohammed Shami)।
২০০৯ সালে প্রথম এই কেন্দ্রে জয়লাভ করে তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)। হাজি নুরুল ইসলামের হাত ধরে। তার পর থেকে ইদ্রিস আলি ও নুসরত জাহানরা সেই ধারা বজায় রেখেছেন। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ৫৪ শতাংশ ভোট পেয়ে এই কেন্দ্র থেকে সাংসদ হিসাবে নির্বাচিত হন নুসরত জাহান। খুব নিকট প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সায়ন্তন বসু। যিনি বিজেপির টিকিট পেয়ে ৩০% ভোট পেয়েছিলেন। তথ্য ঘাঁটলে দেখা যায় বসিরহাট লোকসভায় মোট সাতটি বিধানসভা রয়েছে। সেগুলি হল বসিরহাট উত্তর, বসিরহাট দক্ষিণ, বাদুড়িয়া, হাড়োয়া, মিনাখাঁ, সন্দেশখালি ও হিঙ্গলগঞ্জ। একদিকে সীমান্ত ও একদিকে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকায় রয়েছে এই লোকসভা অঞ্চলের অধীনে। সংখ্যালঘু ভোটারের কথা যদি বলা যায় সে ক্ষেত্রে এই আসনে সংখ্যালঘু ভোটারের ৪৯%। আর এই বিপুল ভোটকে টার্গেট করেই কি তবে বিজেপি (BJP) প্রার্থী করতে চলেছে শামিকে?
[আরও পড়ুন: ‘আমার শরীর নিয়ে খেলা করেছে!’, আদিল ফের বিয়ে করতেই গর্জে উঠলেন রাখি]
ইতিমধ্যে সন্দেশখালি নিয়ে তোলপাড় হয়েছে গোটা দেশ। লোকসভা ভোটের আগে নিজেদের রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য বাম, কংগ্রেস, বিজেপি ও তৃণমূল সকলেই সন্দেশখালিতে গিয়ে কখনও সভা বা কখনও মিছিল করছেন। এই সন্দেশখালি বিধানসভায় রয়েছে মোট ১৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত। সেই গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে পাঁচ থেকে ছটি গ্রাম পঞ্চায়েতের ১০ থেকে ১২টি এলাকা বিগত দুমাস ধরে উত্তপ্ত হয়েছিল। তার প্রভাব কি পড়বে এই লোকসভা ভোটে? সন্দেশখালি বর্তমানে তৃণমূলে যথেষ্ট শক্ত ঘাঁটি।
শেখ শাহজাহান ও শিবপ্রসাদ হাজরারা ছলে, বলে ও কৌশলে শাসকদলের একটি মজবুত জায়গা তৈরি করেছিলেন এই সন্দেশখালিতে। যদিও সন্দেশখালিতে সংখ্যালঘু ভোটারের সংখ্যা মাত্র কুড়ি শতাংশ। তাহলে সেখানে আদৌ কি কাজ করবে মহাম্মদ শামির ম্যাজিক? নাকি বুমেরাং হয়ে ঘুরে যাবে তৃণমূলের দিকে। অন্যদিকে হাড়োয়া, বসিরহাট উত্তর ও বাদুড়িয়া বিধানসভার বিস্তীর্ণ এলাকা সংখ্যালঘু ভোটারের সংখ্যা বেশি। দেখা গিয়েছে বিগত দিনে হিন্দু ভোট ভাগাভাগি হয়ে গেলেও বসিরহাটের সংখ্যালঘু ভোট মোটামুটি এক জায়গাতেই পড়ে। কান পাতলে এও শোনা যাচ্ছে এই লোকসভা থেকে নিজেদের প্রার্থী দিতে চলেছে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট বা আইএসএফ। সেক্ষেত্রে তারাও যদি সংখ্যালঘু প্রার্থী এখানে ঘোষণা করে আদৌ কি স্বস্তিতে থাকতে পারবে বিজেপি বা শাসক দল।
[আরও পড়ুন: চিনের চিন্তা বাড়িয়ে সেলা টানেল উদ্বোধন মোদির, অরুণাচলে ‘মাস্টারস্ট্রোক’ ভারতের]
যদিও তৃণমূল নেতৃত্ব বিজেপির প্রার্থী বাছাই নিয়ে কটাক্ষের সুরেই বলেছে, “যে প্রার্থীই বিজেপি দিক না কেন। বসিরহাটে কিন্তু তৃণমূলের জয় নিশ্চিত।” অপরদিকে বিজেপি নেতারা বলছেন, “যেভাবে সন্দেশখালি জুড়ে অত্যাচার হয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় জনতা পার্টির প্রার্থী এইখান থেকে জয়লাভ করবেন।” এখন প্রশ্ন হচ্ছে নিজের কেরিয়ারের চূড়ান্ত ফর্মে থাকা শামি আদৌ কি রাজনীতির মঞ্চে লড়বেন? সেইদিকেই তাকিয়ে রয়েছে বসিরহাটের সাধারণ মানুষ ও ওয়াকিবহাল মহল।