রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: দলের কর্মসমিতির বৈঠকে পুরনো নেতাদের ডাকতে হবে। প্রয়োজনে কর্মসমিতির সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে দলের আদিদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বঙ্গ বিজেপির অন্দরে চলা দলীয় কোন্দল ও বিদ্রোহে লাগাম টানতে সুকান্ত—অমিতাভদের এমনই বার্তা দিল্লির। আর এই বার্তার পরই চাপে পড়ে গিয়েছে বঙ্গ বিজেপির ক্ষমতাসীন শিবির। তবে বাধ্য হয়ে দিল্লির শীর্ষনেতৃত্বের নির্দেশ মেনে জুন মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া রাজ্য কর্মসমিতির বৈঠকে দলের পুরনো নেতাদের অনেককেই আমন্ত্রণ জানানো হবে। পাশাপাশি দলের প্রাক্তন রাজ্য সহ—সভাপতি সাময়িকভাবে বরখাস্ত হওয়া রীতেশ তিওয়ারিকেও (Ritesh Tiwari) দলে ফেরানো হচ্ছে বলে খবর। সেক্ষেত্রে সাসপেনশন তুলে নেওয়া হবে রীতেশের।
রাজ্য পদাধিকারী থেকে বাদ পড়ার পর বর্তমান রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিলেন রীতেশ ও জয়প্রকাশ মজুমদার। জয়প্রকাশ বর্তমানে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তবে দু’জন নেতৃত্বের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও দলের বিরুদ্ধে যাননি রীতেশ। কাজেই দলের একনিষ্ঠ তথা পুরনো এই নেতাকে রাজ্য কর্মসমিতিতে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে বলেই খবর। আর এ প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ কার্যত রীতেশের পাশে দাঁড়িয়ে ফের দলের পুরনো কর্মীদের ফেরানোর পক্ষেই সওয়াল করেছেন। দিলীপবাবু বলেন, “এই ধরনের পুরনো কর্মীদের দলে ফেরানো উচিত।”
[আরও পড়ুন: বর্ষার আগমনি বার্তা, সোমবার থেকে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে বাড়বে বৃষ্টি]
সুকান্ত মজুমদার রাজ্য সভাপতি হওয়ার পরই তাঁকে সামনে রেখে দলের রাজ্য থেকে জেলা পদাধিকারীতে আমূল পরিবর্তন করেন সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী। সিংহভাগ পুরনো নেতাদের বাদ দেওয়া হয়। ফলে দলে ক্ষোভ—বিক্ষোভ চরম আকার নেয়। ইস্তফার হিড়িক শুরু হয়ে যায়। রাজ্য নেতৃত্ব অনভিজ্ঞ বলে প্রকাশ্যেই সরব হন দলের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুর, কেন্দ্রীয় সম্পাদক অনুপম হাজরা, সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও বর্তমান সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এই পরিস্থিতিতে ৫ ও ৬ মে বাংলায় আসেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ৬ তারিখ দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে সাংগঠনিক বৈঠক করে শাহ। ছিলেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বি এল সন্তোষ। রাতে সেই কোর গ্রুপের বৈঠকে বিদ্রোহ ঠেকাতে সকলকে নিয়ে চলার বার্তা দেওয়া হয় সুকান্ত—শুভেন্দু—অমিতাভদের।
দলীয় সূত্রে খবর, এরপরও দিল্লি থেকে বার্তা এসেছে রাজ্য শাখার কাছে যে, আগামী কর্মসমিতির বৈঠকে পুরনো নেতাদের আমন্ত্রণ জানাতে হবে। ২০২৩ সালে রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে দলকে সংগঠিত করাই লক্ষ্য। এটা টিম অমিতাভকে স্পষ্ট করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। বলা হয়েছে, প্রয়োজনে একাধিক জনকে কর্মসমিতিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সেই মতো দলের একাধিক বিক্ষুব্ধ নেতার সঙ্গে যোগাযোগের দায়িত্ব পদাধিকারীদের কয়েকজনকে দেওয়া হয়েছে। সকলকেই দল কাজে লাগাতে চায়, বলা হচ্ছে। তবে কর্মসমিতির বৈঠকে ডাক পাওয়ার পর বিক্ষুব্ধ শিবির তাতে আদৌ কতটা সাড়া দেবে, প্রশ্ন থাকছেই।