শুভময় মণ্ডল: দুর্গাপুজোয় জনসংযোগের লক্ষ্যে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে বঙ্গ বিজেপি। আর সেই লক্ষ্যেই এবার শারদ সম্মান প্রতিযোগিতা শুরু করল গেরুয়া শিবির। ভারতীয় জনতা শারদ সম্মান নামে এই প্রতিযোগিতা ঘিরে ইতিমধ্যেই সরগরম পুজোর শহর। সরাসরি কোনও রাজনৈতিক দলের শারদ সম্মান প্রতিযোগিতার আয়োজন এটা পুজোর কলকাতায় প্রথম। ইতিমধ্যেই প্রায় ৭০টির মতো পুজো কমিটি এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণও করে ফেলেছে। তবে অন্যান্য শারদ সম্মানের থেকে অনেকাংশে আলাদা এই প্রতিযোগিতা। পুজোর প্রতি নিষ্ঠা রয়েছে যাদের, সেই পুজো কমিটিই পাবে পুরস্কার। মোট চারটি বিভাগে পুরস্কার দেওয়া হবে। সেরা পুজো অর্চনা, পুজোর সেরা মহাভোগ, পুজোর সেরা আরতি, পুজো সেরা সিঁদুরখেলা।
[আরও পড়ুন: সংঘশ্রীর বদলে ফ্রেন্ডস ইউনিয়ন, উদ্বোধনে অমিতেই ভরসা কলকাতার পুজো কমিটির]
মূলত, বিজেপির দক্ষিণ কলকাতা সাংগঠনিক জেলা নেতৃত্বই পুরোধা এই শারদ সম্মানের। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য দক্ষিণ কলকাতায় মণ্ডলভিত্তিক পুজোগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছেঞ প্রধানত, কসবা, বালিগঞ্জ, ভবানীপুর রাসবিহারী বিধানসভা অঞ্চলের এবং বেহালা পূর্ব ও পশ্চিম, যাদবপুর ও গড়িয়ার বেশ কিছু পুজো কমিটির মধ্যে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। দক্ষিণ কলকাতা সাংগঠনিক জেলার সভাপতি এন মোহন রাও ও সহ-সভাপতি সারথী বন্দ্যোপাধ্যায় এই শারদ সম্মানের মাথায় রয়েছেন। সারথীবাবু জানিয়েছেন, বাঙালিদের প্রাণের পুজো দুর্গাপুজো এখন শুধুই উৎসবে পরিণত হয়েছে। তাতে পুজো বলে কিছুই নেই। থিম, আবহ সংগীত, মণ্ডপেই আটকে গিয়েছে শারদোৎসব। কিন্তু পুজোটাই যেন হারিয়ে গিয়েছে। তাই সনাতন পুজোর নিষ্ঠা, আচারকেই প্রাধান্য দিয়ে এই প্রতিযোগিতা। গুরুত্ব দেওয়া হবে পুজোর অর্চনা, আরতি, সিঁদুরখেলা ও মহাভোগকে। যেগুলি ছাড়া দুর্গাপুজোর কোনও গুরুত্ব নেই।
তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়, এই শারদ সম্মানের বিচারকমণ্ডলীতে রয়েছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ, মহিলা মোর্চার সভানেত্রী তথা হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের মতো ব্যক্তিত্বরা। চূড়ান্ত পর্যায়ে বাছাই করা মণ্ডপে বিচারক হিসাবে যাবেন তাঁরা। বিজয়ীদের পুরস্কারেও রয়েছে চমক। পুরস্কারমূল্য তো রয়েইছে, তার সঙ্গে রয়েছে ট্রফি। বিজেপির প্রতীক পদ্ম থাকছে ট্রফিতে। তার উপর পৃথিবী এবং তার উপর ভগবান শ্রীরাম। বিজেপি নেতার কথা, কিছুদিন আগে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছিলেন, রাম নবমী বাঙালিদের উৎসব নয়। কিন্তু তিনি হয়তো জানেন না, যে শরৎকালে অকালবোধন করেছিলেন শ্রীরামচন্দ্রই। তাই বাঙালির দুর্গাপুজোয় শ্রীরামচন্দ্র ও পদ্মের গুরুত্ব অসীম। সেইজন্যই বিজয়ী ট্রফিতে থাকছে পদ্ম ও শ্রীরামচন্দ্র।
জানা গিয়েছে, দক্ষিণ কলকাতার বেশ কয়েকটি নামী পুজো যেমন সন্তোষপুর ত্রিকোণ পার্ক, অ্যাভেনিউ সাউথ পল্লিমঙ্গল, সন্তোষপুর লেকপল্লি, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের পুজো বড়িশা প্লেয়ার্স কর্নার অংশগ্রহণ করেছে এই শারদ সম্মান প্রতিযোগিতায়। এই প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘পুজোর সনাতন রীতিনীতি মেনে যারা পুজো করবে তাদেরই পুরস্কৃত করা হবে। কিন্তু তৃণমূল বেশ কিছু পুজো কমিটিকে চাপ দিচ্ছে প্রতিযোগিতা থেকে নাম তুলে নেওয়ার জন্য।’ পালটা রাজ্যের মন্ত্রী তথা হিন্দুস্তান ক্লাব পুজো কমিটির পৃষ্ঠপোষক চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, কোনও রাজনৈতিক দল শারদ সম্মান প্রতিযোগিতা কীভাবে আযোজন করতে পারে? দুর্গাপুজোয় রাজনীতি ঢোকানোর জন্যই বিজেপির ষড়যন্ত্র বলে দাবি তাঁর।
The post নিষ্ঠাভরে পুজো করলেই পুরস্কৃত করবে বিজেপি, শারদ সম্মান আয়োজন গেরুয়া শিবিরের appeared first on Sangbad Pratidin.