নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: রবিবার রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের জন্য তাদের ইস্তাহার প্রকাশ করতে চলেছে বিজেপি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ’র (Amit Shah) হাত দিয়েই তা প্রকাশিত হবে। দলীয় ইস্তাহারকে নির্বাচনে তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহার করতে চায় বিজেপি (BJP) শিবির। বাংলার ইস্তাহার তৈরির বিষয়টিকে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্দেশে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অশোক লাহিড়ীর পরামর্শ মতোই ইস্তাহারে কর্মসংস্থানের উপর জোর দেওয়া হয়েছে বলেই বিজেপির কেন্দ্রীয় সূত্রের খবর। দেশে করোনা পরিস্থিতির কারণে বহু মানুষের কর্মহানি হয়েছে। এবং কর্মহানির প্রভাব হিন্দু, মুসলিম নির্বিশেষে সবার উপরেই পড়েছে।
তাই কর্মসংস্থানের উপরেই ইস্তাহারে সবথেকে বেশি নজর দেওয়ার পরামর্শ লাহিড়ীই দিয়েছেন এবং কীভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা যায়, সেই সংক্রান্ত রূপরেখাও ইস্তাহারের জন্য তিনিই তৈরি করে দিয়েছেন। দলীয় ইস্তাহারে কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি বিজেপিকে হিন্দু ভোটের পাশাপাশিই যাতে মুসলিম ভোট টানারও সুযোগ করে দেয় সেই হিসেব কষেও পদক্ষেপ করা হয়েছে। ‘মিলেনিয়াল ভোটার’ থেকে শুরু করে রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিক, সকলের জন্যই যাতে বাংলার অন্দরে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা যায় তার জন্য শিল্পক্ষেত্রে বিনিয়োগের বিষয়টিতে লাহিড়ী বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা এবং কর্মহীনতার সমস্যা সমাধানের রাস্তা দলীয় ইস্তাহারে দেখানো হলে তা হিন্দু, মুসলিম নির্বিশেষে সকলেরই পছন্দ হবে বলেই নিশ্চিত বিজেপি শিবির। তাই হাতে নগদ টাকা দেওয়া সংক্রান্ত প্রকল্পের দিকে না হেঁটে কর্মসংস্থানের উপরে নজর দিলে ভোট বাক্সে তার ফল মিলবে বলেই আশা বিজেপির।
[আরও পড়ুন: ৩ বছরের মধ্যে দেশের সব ব্লকে উড়বে গেরুয়া পতাকা! কীসের ইঙ্গিত দিচ্ছে আরএসএস?]
রাজ্যে এবার কুড়ি লক্ষেরও বেশি নতুন ভোটার যার মধ্যে অধিকাংশ প্রথমবার ভোট দেবেন। যার মধ্যে প্রায় দু’লক্ষ মুসলিম ভোটও রয়েছে। এই মিলেনিয়াল ভোটারদের মন জয় করা থেকে শুরু করে রাজ্যের প্রায় ৯০ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক যারা ভিন রাজ্যে কাজ করতে যান তাঁদের কাজের ব্যবস্থা নিজের রাজ্যে করার প্রতিশ্রুতি ইস্তাহারে থাকলে সব ধর্মের মানুষের কাছেই তা গ্রহণযোগ্য হবে বলেই বিজেপির আশা। পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে যে তিরিশ লক্ষ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষও রয়েছেন, তাঁরাও যাতে বিজেপির কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতিতে আকৃষ্ট হন সেই বিষয়টিও বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছে বিজেপি। এই সবকিছু হয়েছে লাহিড়ীর পরামর্শেই।
পাশাপাশি মহিলা থেকে শুরু করে তফসিলি জাতি উপজাতি, আদিবাসীদের মন জয় করা এবং রাজ্য বিজেপির তরফে পাঠানো স্থানীয় কিছু ইস্যুও ইস্তেহারে থাকতে চলেছে। রাজ্যে এবারে মহিলা ভোট নির্ণায়ক ভূমিকায় রয়েছে। প্রতি ১০০০ জন পুরুষ ভোটারের অনুপাতে মহিলা ভোটারের সংখ্যা ৯৬১। মহিলা ভোটারের বড় অংশই যে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে রয়েছে সেকথা মাথায় রেখে মহিলাদের জন্যও কর্মসংস্থান এবং অন্যান্য সুযোগের প্রতিশ্রুতি বিজেপির ইস্তাহারে থাকবে।
[আরও পড়ুন: বামেদের হয়ে ভোট চাইতে আপত্তি! কেরলের নির্বাচনের আগে রাজ্যে আসবেন না রাহুল]
এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘পোষণ’ প্রকল্প, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মতো বিষয়গুলিকে সামনে রাখার সম্ভাবনা রয়েছে। তফসিলি ও আদিবাসীদের মন জয় করতে তাদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতির সঙ্গেই তাদের আগামী প্রজন্মের শিক্ষার ব্যবস্থা করতে প্রতিটি আদিবাসী ব্লকে বিদ্যালয় তৈরি, তাদের জন্য স্বাস্থ্য পরিষেবার ব্যবস্থা এবং বিজেপি ক্ষমতায় এলে রাজ্যে আয়ুষ্মান ভারতের মতো কেন্দ্রীয় প্রকল্পও চালু করা হবে বলেই ইস্তেহারে উল্লেখ থাকছে। কৃষিজীবী সম্প্রদায়ের ভোট টানতে তাদের জন্যও সুবিধার কথা উল্লেখ থাকবে ইস্তাহারে।