সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিজেপি (BJP) বাংলা সংস্কৃতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয়, অথচ বাংলা দখলে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। রাজ্যের শাসকদলের (TMC) নেতানেত্রীদের মুখে এমন অভিযোগ, কটাক্ষ, শ্লেষ অহরহ শোনা যাচ্ছে। কিন্তু এই অভিযোগ যে নিছকই ঘাসফুল শিবিরের রাজনীতির লড়াইয়ের অস্ত্র নয়, বরং তা অনেকাংশেই সত্যি, সম্প্রতি এক ঘটনাতেই তা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে গেল। বাংলা অভিনয় জগতের প্রবাদপ্রতিম প্রয়াত অভিনেতা জহর গঙ্গোপাধ্যায়ের (Jahar Ganguly) বাড়িতে হাজির হয়ে তাঁর নাম ধরে ডাকাডাকি করলেন বিজেপি কর্মীরা, যা শুনে তাজ্জব তাঁর পরিবারের সদস্যরা। দলের তরফে জহরবাবুকেই আমন্ত্রণ জানিয়ে কার্ড দিতে এসেছেন তাঁরা! বিস্ময়ের ঘোর কাটিয়ে কোনওক্রমে কার্ডটি নিয়ে তাঁদের বিদায় জানান জহর গঙ্গোপাধ্যায়ের নাতনি। এরপরই বিষয়টি নিয়ে তুমুল শোরগোল শুরু হয়েছে।
ঘটনা বুধবার সন্ধের। ডোভার লেনে অভিনেতা জহর গঙ্গোপাধ্যায়ের আদি বাড়িতেই থাকেন পরিবারের সদস্যরা। তাঁর নাতনি সুজাতা সাউথ পয়েন্ট স্কুলের শিক্ষিকা। তাঁর কাছেই শোনা গেল গোটা বিষয়টি। সুজাতাদেবী জানান, ওইদিন সন্ধেবেলা তাঁর দাদুর নাম ধরে দু’জন ডাকাডাকি করছিল বাড়ির বাইরে। ১৯৬৯ সালে জহর গঙ্গোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর এমনটা শোনেননি তাঁরা কেউ। ফলে সন্দেহ গাঢ় হয়।
[আরও পড়ুন: সাংসদ সুনীল মণ্ডলের উপর ‘হামলা’, বিজেপি-তৃণমূল সংঘর্ষে হেস্টিংসে তুমুল উত্তেজনা]
সুজাতাদেবী বাইরে বেরতেই তাঁকে এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়, ”জহরদা কি বাড়ি আছেন? আসলে, ওঁকে ফোনে পাচ্ছিলাম না, তাই আমরা এলাম।” সুজাতাদেবী তো তাজ্জব! এতটাই বিস্মিত যে তিনি কোনও উত্তরই দিতে পারছিলেন না। এরপর ওই দু’জন নিজেদের গেরুয়া শিবিরের কর্মী বলে পরিচয় দেন। প্রাথমিক বিস্ময় কাটিয়ে সুজাতাদেবী কার্ডটি নিয়ে তাঁদের বিদায় জানান। বলেই উঠতে পারলেন না যে তাঁর দাদু, জহর গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রয়াণ ঘটে গিয়েছে ১৯৬৯ সালে, আজ থেকে পাক্কা ৫০ বছর আগে।
[আরও পড়ুন: গত ২১ বছর তৃণমূলে থাকার জন্য ‘লজ্জিত’ শুভেন্দু, পালটা প্রতিক্রিয়া পার্থর]
এরপর কার্ডের বয়ান দেখে তাঁর বিস্ময়ের পারদ আরও চড়েছে। তাতে লেখা, ৬৯ নং ওয়ার্ডে বড়দিনের সকালে এক রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে তাতে অতিথি হিসেবে থাকতেই হবে ‘জহর গঙ্গোপাধ্যায় মশাই’কে। সুজাতাদেবীর কথায়, এমনই যাঁরা ভেবে বসে আছেন, তাঁদের ভুল ভাঙাতে যাওয়া বৃথা বলেই মনে করেন তিনি। তবে বিজেপি কর্মীরা এহেন গোল পাকানোর পরও নেতৃত্বের সাফাই আছে। রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসুর বক্তব্য, ”আমাদের কর্মীরা হয়ত ভুল করেছে। হয়ত অন্য কোনও জহর গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়ি কার্ড পৌঁছে দিতে গিয়ে প্রয়াত অভিনেতার বাড়ি চলে গিয়েছেন। ওঁদের আরও দেখেশুনে কাজ করতে বলব। তবে আমরা কিন্তু বাংলার শিল্প, সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিত্বদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।” ড্যামেজ কন্ট্রোলে দলের দাবি যাই হোক, ভিত যে অতি নড়বড়ে, তা আর আড়াল করা যাচ্ছে না কিছুতেই।