শুভঙ্কর বসু: কথা ছিল এক রকম! কিন্তু কাজ হচ্ছে ঠিক তার উলটো! ভোটার তালিকায় সংযোজন-বিয়োজন সংক্রান্ত বিশেষ ক্যাম্প নিয়ে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগে সরব ডান-বাম সব পক্ষ। খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পর ১৮ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে সংযোজন-বিয়োজনের কাজ। সেজন্য রাজ্যের মোট ৭৮ হাজার ৯০৩টি বুথে সপ্তাহে দু’দিন বিশেষ ক্যাম্পের আয়োজন করেছে কমিশন। ২১,২২,২৮,২৯ নভেম্বর এবং ৫,৬,১২,১৩ ডিসেম্বর প্রতিটি বুথে বুথ লেভেল অফিসার বা বিএলও-দের উপস্থিত থাকার কথা। কিন্তু অভিযোগ, সব বুথ তো দূরের কথা। প্রথম সপ্তাহে ৩০ শতাংশ বুথেও বিএলও-দের দেখা মেলেনি। এমনকী, যেসব বুথে বিএলও-রা ছিলেন তাঁরা নাকি মানুষকে অনলাইন পরিষেবা নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। পাশাপাশি বিএলও হিসাবে একজন স্থায়ী সহকারী কর্মীকে নিযুক্ত করার নির্দেশ থাকলেও বিভিন্ন জেলায় আশাকর্মীদের দিয়ে এই কাজ করানো হচ্ছে বলে অভিযোগ। এ ব্যাপারে ইতিমধ্যেই রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের দপ্তরে অভিযোগ জানিয়েছে বিজেপি ও সিপিএম।
বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদারের (Jayprakash Majumder) অভিযোগ, বিএলওদের দেখা মিলছে না। যে বিশেষ ক্যাম্পের কথা বলা হচ্ছে সেখানে বুথ লেভেল এজেন্টদের সঙ্গে বিএলদের বৈঠকে বসে ক্লেম অ্যান্ড অবজেকশন শোনার কথা। কিন্তু প্রথম সপ্তাহে ১০ শতাংশ বুথেও তা হয়নি। উলটে বিএলও-রা মানুষকে অনলাইন পরিষেবা নেওয়ার জন্য বোঝাচ্ছেন। কোথাও কোথাও আবার আশাকর্মীদের দিয়ে এই কাজ করানো হচ্ছে। জয়প্রকাশবাবু বলেন, “সবটাই রাজ্যের শাসকদলের অঙ্গুলিহেলনে হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের লোকবল নেই। তারা দলদাসে পরিণত হয়েছে।”
[আরও পড়ুন: রাজ্যের গড়িমসিতেই থমকে মাঝেরহাট ব্রিজের কাজ, দাবি খারিজ করে পালটা যুক্তি রেলের]
সিপিএম নেতা রবীন দেবের (Rabin Deb) অভিযোগ, বলা হয়েছিল প্রতিটি বুথে বিশেষ ক্যাম্প করা হবে। কিন্তু কমিশন এখন বলছে বুথ নয়, প্রতিটি নির্বাচন প্রেমিসেসে একজন বুথ লেভেল অফিসার থাকবেন। কোথাও কোথাও একটি প্রেমিসেসে ৮ থেকে ৯টি বুথ রয়েছে। এমনটা হলে স্বাভাবিকভাবেই নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রকাশের প্রক্রিয়া মার খাবে। তিনি বলেন, “গত মঙ্গলবারই এ ব্যাপারে আমরা মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের কাছে অভিযোগ জানিয়েছি। মহামারী ও লোকবলের দোহাই দিয়ে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।” তৃণমূল কংগ্রেসের বক্তব্য, কোনও যোগ্য ভোটার যাতে তালিকা থেকে বাদ না পড়েন আমরা আগেই তা কমিশনকে জানিয়ে রেখেছি। সব বুথে স্থায়ী বি এল ও রাখতে বলা হয়েছে। তেমনটা না হলে আগামী দিনে কমিশনের দ্বারস্থ হব।
বিশেষ ক্যাম্প ছাড়াও বিএলও-দের প্রতিদিন অন্তত দু’ঘণ্টা করে বুথে উপস্থিত থাকার কথা। কর্মীর অভাবে সে সব মার খাচ্ছে বলে খবর, কমিশনের যুক্তি, মহামারীর কারণে কর্মীর অভাব রয়েছে। যেমন কলকাতা কর্পোরেশন থেকে কর্মী না মেলায় প্রথম সপ্তাহে শহরের সব বুথে বিশেষ ক্যাম্প করা যায়নি। জেলাগুলিতে তেমনটা হয়েছে। আগামী তারিখগুলোতে যাতে সর্বত্র বিশেষ ক্যাম্প সফল করা যায় তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। রাজ্য নির্বাচনী আধিকারিকের এক কর্তার কথায়, “আজ শুক্রবার জেলা শাসকদলের সঙ্গে বৈঠক রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নেওয়া হবে।”