আকাশ মিশ্র: ক্যামেরা চলছে। পরিচালক অ্যাকশন বলতেই দীঘল চেহারার অভিষেক বচ্চন এসে দাঁড়ালেন তাঁর বিপরীতে ! সেই কলেজে পড়ার সময় থেকেই জুনিয়র বচ্চনের ছবি দেখে আসছেন তিনি। সেই অভিষেক বচ্চনের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অভিনয়! ব্যাপারটা অভিনেতা রাজদীপ সরকারের কাছে ঠিক স্বপ্নপূরণের মতো। এখনও প্রথম দিনের সেই অভিজ্ঞতা ভুলতে পারেননি তিনি। ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে ‘বব বিশ্বাস’ অভিষেক আর রাজদীপ ওরফে মদন! অন্ধকার জগতের সঙ্গে যুক্ত মদনের চরিত্রে অভিনয় করে জুনিয়ার বচ্চনের কাছ থেকে প্রশংসাও কুড়িয়ে নিয়েছেন বাংলার ছেলে রাজদীপ।
সুজয় ঘোষের ছবি ‘কাহানি’ কতবার দেখেছেন?
রাজদীপ সরকার: ‘কাহানি’ (Kahani) ছবিটা অনেকবার দেখেছি। এই ছবিটা যখন মুক্তি পায় তখন আমি দিল্লিতে থাকতাম। এর পরেও আমি ছবিটা বহুবার দেখেছি।
‘কাহানি’র ‘বব বিশ্বাস’ অর্থাৎ শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়কে কেমন লেগেছিল?
রাজদীপ সরকার: কেমন লেগেছিল, তা বলার আগে ‘কাহানি’র সঙ্গে একটা দারুণ গল্প জড়িয়ে রয়েছে। সেটা আগে বলি। তখন আমি দিল্লিতে এমবিএ পড়ছি। আর পড়ার ফাঁকে আমাদের কলেজের বন্ধুদের একটা থিয়েটার গ্রুপ ছিল। সবাই মিলে নাটকে ছোটখাটো অভিনয় করতাম। ওখানকার ছেলেদের কাছে বাংলার অভিনেতাদের সেভাবে পরিচিতি ছিল না। কিন্তু কাহানি এমন একটা ছবি যা কিনা শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় অভিনীত ‘বব বিশ্বাস’ (Bob Biswas) চরিত্রটাকে রাতারাতি জনপ্রিয় করে দিয়েছিল। আমি আমার বন্ধুদের গর্ব করে বলেছিলাম, এই বব বিশ্বাসের অভিনেতা আমাদের বাংলার অভিনেতা। দশ বছর পর সেই চরিত্র নিয়ে ছবি হয়েছে এবং সেই ছবির অংশ হতে পেরেছি এটা সত্যিই আমার কাছে বড় প্রাপ্তি! আর শাশ্বতদার সম্পর্কে নতুন করে কী আর বলব, তিনি যে কোনও চরিত্রেই অনবদ্য!
[আরও পড়ুন: আচমকা ইনস্টাগ্রামের সমস্ত পোস্ট ডিলিট করলেন জন আব্রাহাম, নেই প্রোফাইল পিকচারও ]
সেই বব বিশ্বাসের চরিত্রে অভিষেক বচ্চন, খারাপ লাগেনি?
রাজদীপ সরকার: সত্যি বলতে কি, প্রথমে একটু তো অন্যরকম লেগেই ছিল। কারণ, বব বিশ্বাস ছবিটা মুক্তি পাওয়ার আগে পর্যন্ত তো বব বিশ্বাস মানে শাশ্বতদাকেই সবাই জানত এবং তাঁর চেহারাই ভেসে উঠত। আমার ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একই ছিল। কিন্তু এই ছবির যখন শুটিং শুরু হয়। ফ্লোরে বব বিশ্বাসের লুকে অভিষেক বচ্চনকে দেখি, তখন আমি সত্যি অবাক হয়ে যাই। অভিষেককে ঠিক কাহানির বব বিশ্বাসের মতোই লুক দেওয়া হয়েছে। অভিনয়ের দিক থেকে তো অভিষেক বচ্চনের সম্পর্কেও কিছু বলার নেই। উনি অসাধারণ একজন অভিনেতা। আমার মতে, বব বিশ্বাস চরিত্রটার জন্য দারুণ মানিয়েছে ওঁকে। আসলে, এই বিষয়টা অনেকটাই দর্শক কীভাবে দেখছেন তাঁর উপর নির্ভর করে। আমার কোথাও গিয়ে খারাপ লাগা বা অসুবিধা হয়নি অভিষেক বচ্চনকে ‘বব বিশ্বাস’ হিসেবে মেনে নিতে। আমার মনে হয় প্রত্যেক অভিনেতার একটা নিজস্বতা রয়েছে। যেমন, জেমস বন্ড চরিত্রে অনেকেই অভিনয় করেছেন। সবাই আলাদা আলাদাভাবে নজর কেড়েছেন। কারও পছন্দ হয়েছে, কারও পছন্দ হয়নি। তবে প্রত্যেকেই তো জনপ্রিয়!
ছবিতে আপনার কাজ দেখে কী বলেছেন অভিষেক?
রাজদীপ সরকার: শুটিংয়ের সময় অভিষেক আমার কাজের প্রশংসা করেছেন। যা কিনা আমার কাছে সত্যিই বড় পাওনা। শুধু তাই নয়, সুজয় ঘোষ আমাকে ব্যক্তিগত স্তরে প্রশংসা করেছেন। এমনকী, উনি টুইটও করেছিলেন। আর অন্যরা সবাই তো ছবির চরিত্র মদনের নাম করে আমাকে মদনদা, মদনদা বলেই ডাকছে!
আচ্ছা, ‘বব বিশ্বাসে’র অফার এল কীভাবে?
রাজদীপ সরকার: এক বন্ধুর থেকেই অডিশনের খোঁজটা পাই। অডিশন দিতে গিয়েই জানতে পারি রেড চিলিজের প্রোডাকশনে বব বিশ্বাসকে নিয়ে একটি ছবি তৈরি করছেন। তারই অডিশন। ফাইনাল অডিশনে সুজয় ঘোষও ছিলেন। ব্যস, মদন চরিত্রের জন্য সিলেক্ট হয়ে যাই।
সামনে অভিষেক বচ্চন, টেনশন হয়নি?
রাজদীপ সরকার: টেনশন একেবারেই হয়নি। আসলে অভিষেক বচ্চন সুপারস্টার হয়েও খুবই মাটির মানুষ। শুটিং ফ্লোরে বুঝতেই দেননি তিনি বলিউডের একজন স্টার। সবার সঙ্গে হেসে কথা বলতেন। শুটিংয়ের ফাঁকে আড্ডা দিতেন। তাই হয়তো টেনশন ব্যাপারটা বুঝতেই পারিনি। উলটে সহ-অভিনেতা হিসেবে কনফিডেন্স পেয়েছিলাম। তবে শুধু অভিষেক বচ্চন নয়। পূরব কোহলির ব্যাপারেও এই একই কথা বলব।
টলিউডের অভিনেতাদের কাছ থেকে প্রশংসা পেয়েছেন?
রাজদীপ সরকার: হ্যাঁ, অনেকেই প্রশংসা করেছেন। পরিচালক অরিন্দম ভট্টাচার্য, সপ্তাশ্ব বসু ছবিটা দেখেছেন। আর আমার কাজের প্রশংসাও করেছেন। টলিউডের অনেকেই ব্যক্তিগত স্তরে আমার কাজের প্রশংসা করছেন। যা কিনা সত্যিই আমাকে কনফিডেন্স জুগিয়েছে।
২০১৮ সালে ‘অন্তঃসত্ত্বা’ ছবি থেকে অভিনয়ে পা রাখেন রাজদীপ সরকার। সপ্তাশ্ব বসুর প্রতিদ্বন্দ্বী ছবিতেও দেখা গিয়েছিল তাঁকে। শুধু অভিনয় নয়, অনিন্দ্য বন্দ্য়োপাধ্যায়ের ‘ওয়াচমেকার’ ছবি এবং অরিন্দম ভট্টাচার্যের ‘অপরিচিত’ ছবির প্রযোজকও ছিলেন রাজদীপ। তবে আপাতত, অভিনয়টাই মন দিয়ে করতে চান তিনি। বাংলার সঙ্গে সঙ্গে রাজদীপের পাখির চোখ বলিউড।
[আরও পড়ুন: সুশান্তের প্রেমকে সঙ্গে নিয়েই ভিকির সঙ্গে পথচলা শুরু, গায়ে হলুদে লাজে রাঙা অঙ্কিতা লোখাণ্ডে]