গোবিন্দ রায়: চারিদিক ঢেকেছে লতাগুল্মের মতো আগাছায়। মূল ফটকের সামনে ঝোলানো তালায় ইতিমধ্যেই জং ধরেছে। বারান্দায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে শুকনো পাতা, ঝুল, ঝড়-বৃষ্টির জল মেশানো জঞ্জাল। বইয়ের তাকে তাকে জমাট বেঁধেছে ধুলো। তাকে সাজানো বইগুলোর অবস্থাও বেহাল। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকতে থাকতে একটা লাইব্রেরির ঠিক যেমনটা অবস্থা হয় আর কি, এই মুহূর্তে তেমনটাই অবস্থা রাজ্যের গ্রন্থাগারগুলোর। কার্যত পরপর দু’বছর করোনা (Covid-19) কাঁটায় বিদ্ধ ও পর্যাপ্ত পরিকাঠামোর অভাবে জেলায় জেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গ্রন্থাগারগুলির অবস্থা সত্যিই করুণ। এই পরিস্থিতিতে বইগুলো বাঁচানোর আর্তি পাঠকদের।
জনশিক্ষা ও গ্রন্থাগার দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই মুহূর্তে ৫৭টি পাবলিক লাইব্রেরি বা গ্রন্থাগার রয়েছে বসিরহাট মহকুমা জুড়ে। গোটা উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলায় রয়েছে ২২১ টি লাইব্রেরি। পার্শ্ববর্তী জেলা দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ১৫৬ টি, নদিয়া জেলায় ১১০ টি, হাওড়ায় ১৩৬ টি, হুগলিতে ১৫৮ টি সংখ্যক লাইব্রেরী রয়েছে এবং গোটা রাজ্যে প্রায় আড়াই হাজারের মতো লাইব্রেরি রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই নানা সমস্যায় জর্জরিত রাজ্যের বহু গ্রন্থাগার। তার উপরে করোনার থাবা। গত বছর ২০২০ সালের মার্চ মাসের শেষ দিকে লকডাউনের শুরুতে সেই যে গ্রন্থাগার বন্ধ হয়েছে, এবছরও মাস দুই-তিন খোলা থাকার পর করোনার থাবায় আবার বন্ধ হয়ে যায়, এখনও খোলেনি। এই অবস্থায় বন্ধ ঘরে কেমন আছে গ্রন্থাগারের তাক, আলমারিতে ঠাসা বই? পুঁথি, স্বাধীনতা সংগ্রামের নথি, মূল্যবান পান্ডুলিপির চেহারা আরও বিবর্ণ হয়েছে? জানতে উৎসুক পাঠকদের একাংশ এই প্রশ্ন তুলছেন। গ্রন্থাগারের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত।
[আরও পড়ুন: প্রেমে পড়েছে মেয়ে! রাগে রাস্তায় ফেলে মার বাবা-মার, প্রেমিকাকে হাসপাতালে নিয়ে গেল কিশোর]
এই নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সাধারণের গ্রন্থাগার ও কর্মী কল্যাণ সমিতির প্রধান উপদেষ্টা মনোজ চক্রবর্তী জানান, “বর্তমানে ডিজিটালাইজেশনের যুগে এমনিতেই গ্রন্থাগারগুলো মুখ থুবড়ে পড়েছে। তার ওপর প্রায় দেড় বছরের মতো সময়ে বন্ধ থেকে লাইব্রেরিগুলোর তাকে সাজানো বইগুলো উইপোকা আর ইঁদুরের প্রিয় খাদ্য হয়ে উঠেছে। উচিত এগুলো কেমিক্যাললাইজেশন করা। কিন্তু সেই উদ্যোগ নেবে কে? তার ওপর লাইব্রেরিগুলো সুবিধা-অসুবিধা ও উন্নয়নের বিষয় খতিয়ে দেখতে জেলায় জেলায় যে কমিটি থাকে বিধানসভার ফল ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত সেই কমিটি গঠন হয়নি। তাই দেড় বছরের মত সময়ে লাইব্রেরিতে থাকা বই গুলোর অবস্থা বেহাল।”
বইপ্রেমী লাল্টু সান্যালদের মতো পাঠকদের বক্তব্য, ‘‘প্রতিটি মানুষের পক্ষে তো সব বই কিনে পড়া সম্ভব হয় না। তাদের জন্য একমাত্র ভরসা লাইব্রেরি। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে তা আর হচ্ছে কই? তিন মাস হয়ে গেল গ্রন্থাগারের দরজা-জানলা বন্ধ। হাওয়া-বাতাস ঢুকছে না। বর্ষায় স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া। বই ভাল থাকে? রাসায়নিক দিয়ে বই সংরক্ষণ দূরঅস্ত, ঝাড়পোছটুকু হচ্ছে না। বিপুল সংখ্যক বই নষ্টের আশঙ্কা হচ্ছে।’’ এ প্রসঙ্গে মতামত জানতে রাজ্যের গ্রন্থাগার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ করা যায়নি।