সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অবাছাই হিসেবে মাত্র সতেরো বছর বয়সে বরিস বেকার (Boris Becker) উইম্বলডন (Wimbledon) জেতার মহাকীর্তি গড়ার পর থেকে তাঁর সঙ্গে বিলিতি জনতার একটা আলাদা সখ্যতা গড়ে উঠেছিল। মহাকীর্তি কারণ, বেকারই ছিলেন কনিষ্ঠতম পুরুষ টেনিস প্লেয়ার, যিনি উইম্বলডন ট্রফিটা তুলেছিলেন। ১৯৮৫ সালে। পরবর্তীতে নিছক বরিস থেকে ‘বুম বুম’-এ উত্তরণ ঘটেছে বেকারে, কখনও হেরেছেন, কখনও জিতেছেন, কিন্তু ব্রিটিশ জনতার তাঁর প্রতি অনুরাগ কখনও কমেনি। প্রথম কীর্তির দশ বছর পর উইম্বলডন ফাইনালেই পিট সাম্প্রাসের কাছে হেরে যান বেকার। কিন্তু ব্রিটিশ টেনিসপ্রেমীরা বেকারের নামেই জয়ধ্বনি দিয়ে গিয়েছিলেন। এমনকী খেলা ছেড়ে দেওয়ার পরেও বিলিতি জনতার মননে গভীর ভাবে ছিলেন বেকার। তাঁর রসবোধ এবং বর্ণময় জীবন সব সময় ব্রিটেনকে আকর্ষণ করেছে। চিরকাল।
কিন্তু শুক্রবার সেই অতি পছন্দের ব্রিটিশ জনতার চোখে অনেকটা নিচে নেমে গেলেন বেকার। অনেকটা। শুক্রবার সাউথওয়ার্ক ক্রাউন কোর্টে চার-চারটে অভিযোগ প্রমাণিত হয়ে গেল বেকারের বিরুদ্ধে। প্রমাণ হয়ে গেল, ২০১৭ সালে নিজেকে যে দেউলিয়া ঘোষণা করেছিলেন বেকার, তা মিথ্যাচার ছাড়া কিছু ছিল না। সেই সময় যথেষ্ট সম্পত্তি ছিল তাঁর কাছে। প্রাক্তন স্ত্রীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রায়শই লক্ষ লক্ষ পাউন্ড পাঠাতেন। কিন্তু নিজেকে ঘোষণা করেছিলেন, দেউলিয়া! পরিণাম? পরিণামে– বেকারের জেল হতে পারে এখন।
এক নয়, দুই নয়। সাত বছরের জেল হতে পারে!
[আরও পড়ুন: চাহালকে প্রাণে মারার চেষ্টা! ‘অপরাধী’ ক্রিকেটারের আজীবন নির্বাসনের দাবি তুললেন শাস্ত্রী]
পুরো ঘটনাটা কী? ২০১৭ সালে স্পেনের শহর মায়োরকায় সম্পত্তি কিনেছিলেন বেকার। ব্যাঙ্ক থেকে তিন মিলিয়ন পাউন্ড ঋণ নিয়ে। সেই ঋণ তো জার্মান টেনিস কিংবদন্তি ফেরত দেনইনি, উল্টে নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করে দেন। কিন্তু এ দিন আদালতে প্রমাণ হয়ে গেল যে, ২০১৭ সালের পর নিজের প্রাক্তন স্ত্রী বারবারার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে অকাতরে পাউন্ড ট্রান্সফার করতেন বেকার। খবর যা, প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ পাউন্ড প্রাক্তন স্ত্রী সহ ন’জনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ভাগাভাগি করে পাঠিয়েছিলেন বেকার। পরবর্তীকালে বর্তমান স্ত্রী লিলির অ্যাকাউন্টেও একই জিনিস করতেন তিনি। শুধু তাই নয়, জার্মানিতে নিজের আরও একটি সম্পত্তির কথা ঘোষণা করেননি বেকার। আট লক্ষ পঁচিশ হাজার ইউরোর ব্যাঙ্ক লোন নেওয়ার কথা গোপন করে গিয়েছেন। মাঝে বিশাল অঙ্কে নিজের একটা মার্সিডিজ বেচে দিয়েছিলেন, সেটা বলেননি। এক বিলাসবহুল ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে হাজার হাজার পাউন্ড খরচ করতেন। বিখ্যাত ডিজাইনার রাল্ফ লরেনের পোশাক পরে ঘুরে বেড়াতেন। নিজেকে ‘দেউলিয়া’ ঘোষণা করে!
বেকার তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা কোনও অভিযোগই মানতে চাননি। বরং বলেছেন যে, তিনি অর্থ মেটানোর জন্য নিজের বিয়ের আংটি পর্যন্ত বিক্রি করতে চেয়েছিলেন। এত দিন ধরে বেকার বলে এসেছিলেন যে, প্রাক্তন স্ত্রীর মোটা অঙ্কের খোরপোষ মেটাতে গিয়ে তাঁর কাছে কিছুই নাকি আর পড়ে নেই। বলতেন, দুই সন্তান আর প্রাক্তন স্ত্রীকে এখনও প্রতিনিয়ত অর্থ পাঠাতে হয়। কিন্তু এদিনের পর সে সেব নিছকই মিথ্যাচার প্রমাণ হয়ে গেল। আগামী ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত তাঁকে শর্তসাপেক্ষে জামিন দেওয়া হয়েছে। তার পর তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা চলবে। তিনি অপরাধী প্রমাণ হলে, সাত বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে।
অথচ কী পাননি বেকার জীবনে? ছ-ছ’টা গ্র্যান্ড স্ল্যামের অধীশ্বর তিনি। টেনিসের সর্বকালের অন্যতম সেরা প্লেয়ার হিসেবে তাঁকে ধরা হয়। বরিস বেকারের নাম শোনেনি, এমন লোক বিশ্বে খুব কম পাওয়া যাবে। নোভাক জকোভিচের কোচ ছিলেন এক সময়। বেকারের কোচিং জমানায় সাত-সাতটা গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছিলেন নোভাক। আর আজ? আজ তিনি আকাশ থেকে পাতালে। একাধিক অপরাধে। রাতারাতি।
সত্যি, এক স্বপ্নের রাজপুত্রের কী মর্মান্তিক পরিণতি!