বক্তা মনবিন্দর সিং বিসলা। বারো বছর আগে চিপক ফাইনালে যাঁর ইনিংস প্রথম আইপিএল ট্রফি দিয়েছিল কেকেআরকে। বারো বছর পর আবার এক আইপিএল ফাইনালে কেকেআর। মঞ্চ সেই চিপক। আসন্ন ফাইনাল, পুরনো রোম্যান্টিক স্মৃতি সমস্ত কিছু নিয়ে ‘সংবাদ প্রতিদিন’-কে শুক্রবার একান্ত ফোন সাক্ষাৎকার দিলেন বিসলা। গায়ে অদৃশ্য নাইট জার্সি চাপিয়ে। শুনলেন রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়।
বারো বছর পর চিপকে আবার আইপিএল ফাইনাল খেলতে নামছে কেকেআর। চিপক, আইপিএল ফাইনাল, কেকেআর, এই তিনটে নাম শুনলে আপনার ছবিটা সবার আগে মনে পড়ে কলকাতার। বারো বছর আগের আইপিএল ফাইনালে নাইট জার্সিতে আপনার করা ৮৯ আজও কেউ ভুলতে পারেনি। যে ইনিংস কেকেআরকে প্রথম আইপিএল ট্রফি জিতিয়েছিল।
বিসলা: (হাসি) তাই? আমাকে এখনও মনে রেখেছে কলকাতা?
অবশ্যই।
বিসলা: আমি নিজেও ভুলতে পারিনি কলকাতাকে। ইডেনকে। কেকেআরকে। এবার টিমটা ফাইনালে ওঠার পর আমি তো সোশ্যাল মিডিয়ায় শুভেচ্ছাবার্তাও দিলাম টিমকে।
দেখেছি। কী মনে হচ্ছে, কেকেআর ফাইনাল জিতবে?
বিসলা: জেতা তো উচিত। ধুর, উচিত বলছি কেন? আমরাই চ্যাম্পিয়ন হচ্ছি। থার্ড টাইম।
[আরও পড়ুন: কমলা ঝড়ে বিদায় রাজস্থানের, আইপিএল ফাইনালে কেকেআরের মুখোমুখি হায়দরাবাদ]
বুঝলাম। তা, বারো বছর আগের আপনার ৮৯ রানের ইনিংসটা নিয়ে একটু বলুন না।
বিসলা: দেখুন, আমার মনে হয়, যদি আমি সে দিন না পারতাম, কেউ না কেউ ঠিক খেলে দিত। আর আমি নিজের কৃতিত্বের চেয়েও বেশি করে বলব কেকেআর সাপোর্ট স্টাফদের কথা। কোচের কথা। ক্যাপ্টেন গৌতম গম্ভীরের কথা। ওরা আমার উপর ভরসা দেখিয়েছিল। ফাইনালের মতো মহামঞ্চে খেলার সুযোগ করে দিয়েছিল। মনে রাখতে হবে, ফাইনালের আগে বেশ কয়েকটা ম্যাচে খেলার সুযোগ পাইনি আমি। কিন্তু ফাইনালে আমাকে নামিয়ে দেওয়া হয়। আনক্যাপড প্লেয়ারের উপর এতটা বিশ্বাস দেখায় কত জন?
তার পর আপনার জীবনই বদলে গেল। ম্যাচ সেরা হলেন আপনি। কেকেআর প্রথম ট্রফি জিতল। রাতারাতি মহাতারকায় পরিণত হলেন আপনি।
বিসলা: তার চেয়েও বড় আমি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ পেলাম। ২০১২ চিপক ফাইনালের পর জীবন দারুণ কিছু বদলায়নি আমার। কিন্তু বুঝতে পারছিলাম, বিশাল কিছু একটা অর্জন করেছি। যে টিম আমাকে এত ভালোবাসে, এত বিশ্বাস করে, যে টিমের সঙ্গে আমার এতটা একাত্মতা, তাদের আমি কিছু ফিরিয়ে দিতে পেরেছি। আবারও বলছি, আনক্যাপড প্লেয়ারদের কিন্তু গুরুত্ব দেয় না অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজি। কিন্তু কেকেআর দেয়।
২০১২-র নাইট অধিনায়ক গৌতম গম্ভীর এবার কেকেআর মেন্টর। টিমটা যে অসামান্য ক্রিকেট খেলে ফাইনাল পর্যন্ত চলে এল, সেই দুর্বার সফরের সবচেয়ে বড় কারণ কি গম্ভীর?
বিসলা: অবশ্যই। গম্ভীর জাত নেতা। লিডার। প্লেয়ারের থেকে সেরাটা কী করে বার করে আনতে হয়, খুব ভালো করে জানে। তা সে ক্যাপ্টেন হিসেবেই হোক কিংবা মেন্টর হিসেবে। জেতা ছাড়া কিছু ভাবতে পারে না গম্ভীর। ওর সবচেয়ে বড় গুণ কী জানেন? গম্ভীর কখনওই আপনার কাছে সে সমস্ত জিনিস চাইবে না, যা ও নিজে করতে পারবে না। আগে নিজে করবে। উদাহরণ তৈরি করবে। তার পর টিমকে বলবে, তোমরা এবার করে দেখাও।
আর?
বিসলা: আর গম্ভীর জানে ম্যাচ কী ভাবে জিততে হয়। ও জানে, একজন অধিনায়ক ততটাই ভালো, যতটা ভালো তার টিম। গম্ভীর বিশ্বাস করে, কারও পক্ষে একা ম্যাচ জেতানো সম্ভব নয়। ও সবাইকে টিমের কথা ভাবতে শেখায়, টিমের হয়ে খেলতে শেখায়। একাত্মতা নিয়ে আসে টিমে। আমার মতে, আজ পর্যন্ত কেকেআরের তিনজন সেরা রিক্রুট গম্ভীর, সুনীল নারিন আর আন্দ্রে রাসেল। ভাবুন না, কী রিটার্নটাই না দিচ্ছে তিন জন ফ্র্যাঞ্চাইজিকে!
নারিন তো খেলাই বদলে দিয়েছেন এবার। ওপেনিংয়ে নেমে অমন বিস্ফোরক ব্যাটিং। সঙ্গে কৃপণ বোলিং।
বিসলা: ট্রু আইপিএল লেজেন্ড। ট্রু কেকেআর লেজেন্ড। যে অন্য কোনও ফ্র্যা়ঞ্চাইজিতে কখনও গেল না। ভাবুন তো, নিলামে উঠলে কত দাম উঠতে পারত নারিনের? সানি (সুনীল নারিনকে যে নামে ডাকা হয়) মানুষটা খুব চুপচাপ। কথাই বলে না। কিন্তু মাঠে নামলে মারাত্মক।
একটা কথা বলুন। গত বছরও প্রায় একই টিম ছিল। কী এমন বদল হল রাতারাতি যে, কেকেআরের খেলাই বদলে গেল?
বিসলা: খেলার ধরন। এবার কেকেআর খেলছে জেতার জন্য। কেকেআরের এবারের মোস্ট আনসাং হিরো কে জানেন? রামনদীপ সিং। যে জায়গায় ও নামছে, যে ভূমিকা ওকে দেওয়া হয়েছে, তা পালন করা খুব সহজ নয়। লোয়ার মিডল অর্ডারে প্রচুর টাকা খরচ করে স্পেশ্যালিস্ট রাখে লোকে। কিন্তু রামনদীপ সে জায়গায় নেমে কখনও ৫ বলে ১৫, কখনও ৮ বলে ২০, নিত্য করে দিচ্ছে।
আর কী বদল দেখছেন?
আর বদল বোলিংয়ে। সবাই কেকেআরের ব্যাটিংয়ের কথা বলছে। কিন্তু আসল পরিবর্তন তো হয়েছে বোলিংয়ে। মিচেল স্টার্ক, হর্ষিত রানা, বৈভব অরোরা, সুনীল নারিন, বরুণ চক্রবর্তী, এরা কী বোলিং করছে বলুন তো? হর্ষিত কী বোলিংটাই না করছে! বরুণের আবার কুড়িটা উইকেট হয়ে গেল। শুনুন, ব্যাটাররা ম্যাচ জেতায়। বোলার জেতায় টুর্নামেন্ট। তাই চিপক ফাইনালে কেকেআরের হারার কোনও সম্ভাবনা দেখছি না!