shono
Advertisement

Breaking News

ব্রাজিলের ‘হাসপাতালে’ আশার প্রদীপ নেইমার, ক্যামেরুনের বিরুদ্ধে দলে দশ বদল তিতের

প্রথম ম্যাচের পর নেইমার-দানিলো দু’জনেই গোড়ালির চোটে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
Posted: 03:25 PM Dec 01, 2022Updated: 03:46 PM Dec 01, 2022

দুলাল দে, দোহা: আগে আলোচনা ছিল শুধুই নেইমার আর দানিলোর গোড়ালির চোট নিয়ে। কিন্তু ক্রমে যা হচ্ছে, তাতে ক্যামেরুন ম্যাচের আগে ব্রাজিল (Brazil) দলকে ছোটখাটো হাসপাতাল বললে ভুল হবে না। আর এই হাসপাতালে রূপান্তরিত হওয়ার নতুন কারণ ‘ফ্লু’। অজানা এই ‘ফ্লু’ কীভাবে ব্রাজিল শিবিরে থাবা বসাল কেউ বলতে পারছেন না। সব দেখেশুনে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে ব্রাজিল শিবিরে। তবে দুশ্চিন্তার মধ্যে আশার আলো – গোড়ালির চোট সারিয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছেন নেইমার। ফিট হওয়ার পথে দানিলোও (Danilo)।

Advertisement

এদিন ট্রেনিংও শুরু করে দিয়েছেন ব্রাজিলীয় সাইডব্যাক। বাঁ-পায়ের গোড়ালিতে চোট পেয়েছিলেন দানিলো। বুধবার তার চোটের জায়গায় সিটি স্ক্যান হয়। সেই রিপোর্ট যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক। এদিন ফিজিওথেরাপিস্ট ও ট্রেনারদের তত্ত্বাবধানে হালকা অনুশীলনও করেন তিনি। সবকিছু ঠিক থাকলে বিশ্বকাপের প্রি-কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই দানিলোর মাঠে ফেরার সম্ভাবনা প্রবল। শেষ ষোলোয় মাঠে নেমে পড়তে দেখা যেতে পারে নেমারকেও। আর সেই প্রত্যাবর্তনে আশায় বুক বাঁধছেন স্বয়ং ব্রাজিলীয় সুপারস্টার। এই নিয়ে টানা ছয়দিন দলের অনুশীলনে নেই নেইমার। পুল সেশনে আলাদা ট্রেনিং করেছেন তিনি। তবে সেখানে অনেক চনমনে দেখিয়েছে সেলেকাওদের ‘হৃদয়’কে। নিজেই জানিয়েছেন, গোড়ালির চোট ‘শূন্য’-তে নেমে এসেছে। অর্থাৎ আগের চেয়ে অনেক সুস্থবোধ করছেন তিনি। তবে চোটমুক্তি ঘটলেও এখনও পুরো ফিট নন তিনি। কারণ নেমার থেকে ভিনিসিয়াস জুনিয়র সবাই কম বেশি আক্রান্ত অজানা ‘ফ্লু’তে। ফলে চোটের পাশাপাশি হালকা জ্বর আক্রমণ করেছে ব্রাজিল শিবিরকে।

[আরও পড়ুন: কোস্টারিকা ম্যাচেই কি নয়া জার্মানির জন্ম? মরণ-বাঁচন ম্যাচে আত্মবিশ্বাসী ফ্লিক]

 

স্বাভাবিক কারণেই ক্যামেরুন (Cameroon) ম্যাচের আগে কোনওরকম ঝুঁকি নিতে রাজি নন কোচ তিতে। চোট আর ফ্লু আক্রান্তদের বাদ দেওয়ার জন্য দলে ব্যাপক বদল আনছেন তিনি। আগের দুটো ম্যাচের প্রথম একাদশ থেকে দশজন ফুটবলারকে বদলে প্রথম একাদশ তৈরি করছেন তিতে।
পরবর্তী ম্যাচগুলিতে দলকে তৈরি করার জন্য ব্রাজিল শিবিরে এই মুহূর্ত সবচেয়ে বেশি সচেষ্ট কোচ তিতে না দলের ডাক্তার রডরিগো লাসমার, বলা কঠিন। চোট আর জ্বর মিলিয়ে ব্রাজিল শিবিরে এই মুহূর্তে আক্রান্ত ফুটবলারের সংখ্যা– সাত। আর এই অসুস্থতার তালিকায় থাকা নামগুলো একবার দেখলে, যে কোনও ব্রাজিল সমর্থকের অজানা আশঙ্কায় কেঁপে উঠবে বুক। প্রতিপক্ষ নয়, চোট আর এই অজানা জ্বরের কাছে শেষপর্যন্ত বিশ্বকাপের নক আউটে গিয়ে ধরাশায়ী হবে না তো ব্রাজিল!

চোট আর জ্বরে আক্রান্ত ফুটবলারদের নামগুলো একবার দেখুন। নেইমার- গোড়ালির চোট এবং ভাইরাল জ্বর। দানিলো- গোড়ালির চোট। অ্যালেক্স স্যান্দ্রো- নিতম্ব এবং থাই মাসলে চোট। অ্যান্টনি — জ্বর থেকে ওঠার পর অস্বস্তি। পাকুয়েতা- ভাইরাল জ্বর। ভিনিসিয়াস জুনিয়র- ভাইরাল জ্বর। অ্যালিসন— জ্বর জ্বর ভাব সঙ্গে অস্বস্তি।

ব্রাজিলের টেকনিক্যাল টিমের বাইরে পুরো মেডিকেল টিম এখন সচেষ্ট কীভাবে দ্রুত এই ভাইরাল জ্বরের মোকাবিলা করা যায়। ব্রাজিল দলের ভিতরকার মিনি হাসপাতাল হওয়ার খবর বাইরে আসতেই চাঞ্চল্য পড়ে যায় ব্রাজিল মিডিয়ায়। এদিন সবাই হাজির হয়েছিলেন ব্রাজিল দলের মিডিয়া সেন্টারে। অনেকটা বাধ্য হয়েই টিম ডাক্তার রডরিগো লাসমারকে এদিন সাংবাদিক সম্মেলন করে ব্যাখ্যা দিতে হয় ফুটবলারদের শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে।

ব্রাজিলের মেডিকেল টিম প্রাথমিক ভাবে মনে করছে, এই ভাইরাল জ্বর নিয়ে এখনই মাথাব্যথার মতো কিছু ঘটেনি। সকাল বা বিকেলের দিকে তিতে যখন প্র্যাকটিস করাচ্ছেন, তখন দোহাতে মারাত্মক গরম। প্র্যাকটিসের পরেই ফুটবলাররা এসে বাতানুকুল ঘরে ঢুকে পড়ছেন। এতেই ঠান্ডা-গরমে কাহিল হচ্ছেন ফুটবলাররা।

পরিস্থিতি সামাল দিতে এদিন শেষ পর্যন্ত সাংবাদিক সম্মেলনে আসতে হয় ব্রাজিল টিমের কো অর্ডিনেটর জুনিনহো পউলিস্তাকেও। কারণ, শুধু তো জ্বর নয়। টিম হোটেলে অনেক ফুটবলারের বমিও হয়েছে। যদিও সেই ফুটবলারদের নাম প্রকাশ্যে আনতে চাইছে না টিম ম্যানেজমেন্ট।

কিন্তু এই ভাইরাল জ্বরের আক্রমণ কি শুধুই কাতারের ঠান্ডা-গরমে? না কি শেষপর্যন্ত ব্রাজিল টিম হোটেলে কোভিডের ছায়া? ব্রাজিল টিমের কো অর্ডিনেটর সঙ্গেসঙ্গে আপত্তি জানিয়ে বলেন, ‘‘এই জ্বরের সঙ্গে কোভিডের কোনও সম্পর্ক নেই। এমনকি, কোভিড হয়েছে কিনা, তা পরীক্ষা করে দেখার মতো অবস্থাতেও পুরো ব্যাপারটা পৌঁছোয়নি। ফুটবলারদের শারীরিক সমস্যা নিয়ে আমরা সর্বক্ষণ নজর রাখছি।’’

স্বাভাবিক ভাবেই এদিনও জানতে চাওয়া হয় নেইমারের চোটের শেষ পরিস্থিতি জানার জন্য। জুনিনহো এবং রডরিগো লাসমার দু’জনেই নেমারের চোট ইস্যুতে একই কথা বললেন, ‘‘আগের থেকে অনেকটাই পরিস্থিতি ভাল। সারাদিন চিকিৎসার মধ্যেই রয়েছে। তবে ঠিক কোন ম্যাচে নেমার মাঠে নামতে পারবে, সরকারিভাবে এখনই কিছু বলা সম্ভব নয়।’’

প্রথম ম্যাচের পর নেইমার-দানিলো দু’জনেই গোড়ালির চোটে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তারপরেও সুইজারল্যান্ড ম্যাচ দেখতে মাঠে যেতে পেরেছিলেন দানিলো। নেইমার পারেননি। ছিলেন টিম হোটেলে নিজের রুমেই। কারণ, সেদিন থেকেই আবার সামান্য জ্বর। প্রথম ম্যাচে সার্বিয়াকে হারানোর পর ফুটবলারদের বন্ধু-বান্ধবী, আত্মীয় স্বজনরা হোটেলে এসেছিলেন। অনেকে মনে করছেন, হোটেলের বাইরের লোকেদের সঙ্গে বিশ্বকাপের মাঝে দেখা করাটাও ঠিক হয়নি। এর মধ্যেই আবার শোনা গিয়েছে, গতকাল রাতে টিম হোটেল ছেড়ে বাইরে গিয়েছিলেন জেসুস। পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে টিম হোটেলের বাইরে কোনও ফুটবলাররের যাওয়ার উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি হতে পারে।

একমাত্র সৌভাগ্যের দিক হচ্ছে, গ্রুপের শেষ প্রতিপক্ষ ক্যামেরুনকে নিয়ে কোনও চিন্তা করছেন না তিতে। আর তাই একসঙ্গে বহু ফুটবলার পরিবর্তন করে দেওয়ার মতো বিলাসিতা দেখাতে পারছেন ব্রাজিল কোচ। তবুও সংবাদমাধ্যম যাতে ক্যামেরুনের বিরুদ্ধে ব্রাজিলের প্রথম একাদশ কী হবে তা জানতে না পারে, তারজন্য এদিন ক্লোজডডোর প্র্যাকটিস করালেন ফুটবলারদের নিয়ে। তাতেও ক্যামেরুনের বিরুদ্ধে ব্রাজিলের প্রথম একাদশ কী হবে, সেই খবর আর আটকে রাখতে পারলেন কোথায় তিতে?

যে দলটা তিনি গ্রুপের শেষ ম্যাচে নামাতে চলছেন তা হল- গোলে অ্যালিসনের জায়াগায় আসছেন এডারসন। বাকিরা হলেন- অভিজ্ঞ দানি আলভেজ, মিলিতাও, ব্রেমার, অ্যালেক্স টেলস, ফ্যাবিনো, ব্রুনো গুইমারেস, অ্যান্টনি, রড্রিগো, গ্যাব্রিয়েল জেসুস এবং মার্তিনেলি। আগের দুটো ম্যাচের পুরো দলটাই বদলে ফেলছেন তিনি। 

[আরও পড়ুন: পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচের সেরা হয়েও পুরস্কার নিলেন না মেসি! তুলে দিলেন সতীর্থর হাতে]

 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement