স্টাফ রিপোর্টার: পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ‘নির্বাচন কৌশল’ হিসাবে মোটেই পার্টি লাইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে রায় দিল সিপিএমের পলিটব্যুরো৷ দিল্লিতে দু’দিনের পলিটব্যুরো বৈঠকের শেষে দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে যে নির্বাচনী কৌশল নেওয়া হয়েছে তা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত এবং পার্টি লাইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলেই পলিটব্যুরো মত দিয়েছে৷ কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত ছিল, কোনও অবস্থাতেই কংগ্রেসে সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা বা জোট করা যাবে না৷
দেশের পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএমের ফলাফল নিয়ে কাটাছেঁড়া করতে পলিটব্যুরোর এই বৈঠকে লক্ষ্য রাখা হলেও, প্রত্যাশিতভাবে সবকিছুকে ছাপিয়ে উঠে এসেছে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসকে ঠেকাতে একেবারে ভিন্ন মেরুর কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএমের জোটের বিষয়টি৷ বৈঠকে বাংলা থেকে যাওয়া পলিটব্যুরোর তিন নেতা বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র এবং মহম্মদ সেলিমকে অন্য রাজ্যের নেতা, বিশেষ করে ত্রিপুরা ও কেরল ব্রিগেডের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়৷ বৈঠকের প্রথম দিন বিষয়টি নিয়ে সেভাবে আলোচনার সুযোগ না থাকলেও, সোমবার দ্বিতীয় দিনে অনেকটা সময়ই রাজ্যের সিপিএম-কংগ্রেস জোট নিয়ে কথা হয়েছে বলে সূত্রের খবর৷
বাংলার সিপিএম নেতারা জেদাজেদি করে কেন্দ্রীয় কমিটির একটা বড় অংশের বিরুদ্ধে গিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করলেও তাতে ‘সুফল’ কিছুমাত্র মেলেনি৷ বরং ২০১১-র বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় এবার রাজ্যে প্রায় অর্ধেক আসন কমেছে সিপিএমের৷ রাজ্যে আসন সংখ্যার নিরিখে তিন নম্বরে নেমে এসেছে সিপিএম৷ আর তাতেই অবশ্যম্ভাবীভাবে রাজ্যের নির্বাচন-পূর্ব সিপিএম-কংগ্রেস জোট নিয়ে কারাত লবির সঙ্গে রাজ্যের নেতাদের সংঘাত পৌছল চরমে৷ সূত্রের খবর, বাংলায় কংগ্রসের সঙ্গে জোট, বামেদের ‘পার্টি লাইন’-কে আদতে লঙ্ঘন করা বলেই দাবি করেন কারাত৷ অন্যদিকে রাজ্যভিত্তিক নির্বাচন পরবর্তী সময়ে এই জোট চালিয়ে যেতে চান বলে জানিয়ে দেন পশ্চিমবঙ্গের নেতৃত্ব৷ যুক্তি হিসেবে বলা হয়, রাজ্যে শাসক দলের মোকাবিলা করতে বিরোধী দলগুলির এক জোট হওয়া উচিত৷ সেখানে সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিও বলেছেন “রাজ্যে নিবার্চন পরবর্তী সন্ত্রাস ঠেকাতে বিরোধী দলগুলির একজোট হওয়া উচিত৷” এই পরিস্থিতিতে আগামী ১৮-২০ জুন কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক বসতে চলেছে দিল্লির একেজি ভবনে৷ যেখানেই মূল সিদ্ধান্ত হবে আদৌ কি পার্টি লাইনের বাইরে গিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধেছে রাজ্য কমিটি৷ যদিও তার আগে রাজ্য কমিটির বৈঠকে জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে চাওয়া-পাওয়া চূড়ান্ত করবে দল৷ তার আগে পলিটব্যুরো তাদের যে রিপোর্ট কেন্দ্রীয় কমিটিতে পাঠাল, তাতে জোটের বিপক্ষেই মত প্রকাশ করা হয়েছে৷
পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের আগেই প্রকাশ্যে মুখ খুলেছিলেন দলের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাত৷ সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, আদর্শগত ভিন্ন দলের সঙ্গে জোট করা উচিত নয়৷ তাই রাজ্যে নির্বাচনে ভরাডুবির পর দলের বড় অংশের কাছে জোট-সিদ্ধান্ত, সীতারাম ইয়েচু্রি ও রাজ্যের নেতাদের সমালোচনার সুযোগ করে দেয়৷ এমনকী, সোমবার পলিটব্যুরোর তরফে জারি করা বিবৃতিতে জানিয়ে দেওয়া হয়, পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী জোট কৌশল নিয়ে রাজ্যের সঙ্গে ঐকমত গড়েনি কেন্দ্রীয় কমিটি৷ স্বাভাবিকভাবেই তাই দলের মধ্যে প্রাক্তন ওঠা শুরু করেছে পার্টি লাইন লঙ্ঘন করা নিয়ে৷ যদিও সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বোঝানোর চেষ্টা করবেন যে, জোট নিয়ে রাজ্য নেতৃত্বের সিদ্ধান্তে মোটেই পার্টি লাইন লঙ্ঘন হয়নি৷ পার্টি কংগ্রেসের লাইন মেনেই রাজ্যভিত্তিক ইস্যুতে জোটের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দল৷ আর সেই জায়গায় দাড়িয়েই আগামিদিনেও রাজ্যের সিপিএম নেতারা পাশে পেতে চান কংগ্রেসকে৷
তবে রাজনৈতিক মহল মনে করছে, ইয়েচুরি-কারাত দ্বন্দ্ব অনেকটাই প্রকাশ্যে এসে গেছে জোট সিদ্ধান্তে৷ শুধু তাই নয়, প্রত্যক্ষভাবে যে সাধারণ সম্পাদক দলের বঙ্গ ব্রিগ্রেডের পাশে তাও স্পষ্ট এহেন সিদ্ধান্তে৷ তাই প্রশ্ন উঠছে আগামী সময়ে কি কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্তকে তোয়াক্কা না করেই রাজ্য সিপিআইএম বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকবে?
কেন্দ্রীয় কমিটিতে কারাতপন্থীরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ৷ ফলে ১৮ থেকে ২০ জুন কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে এই রাজ্যের নির্বাচনী কৌশল নিয়ে যে পর্যালোচনা হবে তাতে সংখ্যাগরিষ্ঠ জোটের বিরুদ্ধেই মত দেবেন৷ সেক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠবে, এখনও যেভাবে সূর্যবাবুরা কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে যৌথ কর্মসূচি গ্রহণ করছেন তা ভবিষ্যতে চালিয়ে যেতে পারবেন কি না৷ সূর্যবাবু রাজ্য কমিটির বৈঠক স্থগিত রেখেছেন৷ তাঁর আশঙ্কা, রাজ্য কমিটিতেও সংখ্যাগরিষ্ঠ জোটের বিরুদ্ধেই মত দেবেন৷ আগামী ১১ ও ১২ জুন সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে৷
The post বুদ্ধ-সূর্যদের ভূমিকা দলের নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়: পলিটব্যুরো appeared first on Sangbad Pratidin.