অভিষেক চৌধুরী, কালনা: নারকেল গাছের গোড়া সুন্দর করে বাঁধানো। বাড়ির ছাদ ফুঁড়ে উঠেছে সেই গাছ। নারকেল গাছ বাঁচিয়ে দোতলা বাড়ি বানিয়ে সকলকে অবাক করলেন এক পুলিশকর্মী। হাওড়ার দাসনগর থানার পুলিশকর্মীর উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন প্রায় সকলকেই। পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরের দেনুরের দাউকাডাঙার এই বাড়ি দেখতে ক্রমশ বাড়ছে ভিড়।
দাদুর নিজের হাতে লাগানো গাছ। জন্ম থেকে দেখে আসছেন গাছটিকে। তাই কত স্মৃতি তার সঙ্গে জড়িয়ে। তার উপর আবার গাছকে মেরে ফেলা যেন কারও প্রাণহানিরই শামিল। কেন না উদ্ভিদেরও যে প্রাণ আছে। কিন্তু কী-ই বা করা যায়? কোনও বাধাবিপত্তি ছাড়া বাড়ি তৈরির জমিতেই যে বেড়ে উঠেছে সে। বাড়ির আশেপাশে গাছ থাকলে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু মায়া কাটানো যে বড় দায়। তাই তো নারকেল গাছটি আর কাটা হল না। মাঝে গাছটিকে রেখেই তৈরি হয়েছে দোতলা বাড়ি। হাওড়ার দাসনগর থানার এএসআই অরিন্দম পালের বাড়ি নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই।
[আরও পড়ুন: ‘পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল জিতবে’, আদালতে ঢোকার আগেও আত্মবিশ্বাসী পার্থ]
কর্মসূত্রে বেশিরভাগ সময় হাওড়ায় কাটে অরিন্দম পালের। পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরের দেনুর পঞ্চায়েতের দাউকাডাঙায় পৈতৃক বাড়ি তাঁর। মা, বাবা, স্ত্রী ও কন্যাসন্তান ওই বাড়িতেই থাকেন। বেশ কয়েকদিন আগে নিজেদের জমিতে নতুন বাড়ি তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। আর সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরই গাছের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিস্তর চিন্তাভাবনা করতে হয় পুলিশকর্মীকে। তাঁর পরিকল্পনা ছিল বাড়ি তৈরি হবে আধুনিক নকশায়। গাছ যেভাবে বেড়েছে বাড়িও তৈরি হয়েছে সেভাবে। গাছের পরিধি অনুযায়ী গোল করে কাটা হয়েছে ছাদ। তবে বাড়ি তৈরি করতে গিয়ে কম কাঠখড় পোহাতে হয়নি পুলিশকর্মীকে। কারণ, কোনও মিস্ত্রিই মনের মতো করে বাড়ি তৈরি করতে চাননি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর মনমতো মিস্ত্রি পাওয়া যায়। তারপরই শুরু হয় বাড়ি তৈরির কাজ। আপাতত বাড়ি তৈরির কাজ ৮০ শতাংশ প্রায় হয়েই গিয়েছে। বাকি কাজও খুব শীঘ্র শেষ হবে বলেই আশা বাড়ির মালিক অরিন্দম পালের।
অরিন্দমবাবু জানান, অনেকেই তাঁকে বলেছিলেন নারকেল গাছটি কেটে ফেলতে। ভেবেছিলেন দু-একবার সেকথা। পরে ভাবেন কোনও উদ্ভিদের প্রাণহানি করবেন না। তাই গাছ কাটেননি। সুদূর ভবিষ্যতে বাড়ির ক্ষতি হতে পারে, এই আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও গাছটিকে রেখেই বাড়ি তৈরি করেছেন। অরিন্দমবাবুর স্ত্রী মধুশ্রীও স্বামীর সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়েছেন। এখন ছাদে উঠলে হাতের মুঠোতেই নারকেল পাওয়া যাচ্ছে। তাতে তিনি বেজায় খুশি। বাবার ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন পুলিশকর্মীর মেয়ে রাজশ্রী। গাছ না কেটেই বাড়ি তৈরি করে বাবা অসাধারণ কাজ করেছেন বলেই জানান তিনি। অরিন্দমবাবুর অভিনব উদ্যোগই যেন এখন টক অফ দ্য টাউন। সর্বত্র বাড়ির মালিককে নিয়ে চলছে জোর আলোচনা।
দেখুন ভিডিও: