অর্ণচ আইচ: বিয়ের কুড়ি বছর পরও গৃহবধূর উপর নৃশংস অত্যাচার। সিগারেটের ছ্যাঁকা দিয়ে ওই মহিলার শরীরে দগদগে ঘা ও সঙ্গে মারধরেরও অভিযোগ। এমনকী শ্বশুরবাড়ির লোকেরা শ্লীলতাহানি করতেও ছাড়েনি, অভিযোগ এমনই। গৃহবধূর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেন লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের আধিকারিকরা। স্ত্রীর পর অত্যাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার হলেন কলকাতার অভিজাত এলাকার এক ব্যবসায়ী। বৃহস্পতিবার রাতে শেক্সপিয়র সরণি থেকে সুমিত আগরওয়াল নামে ওই ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করলেন লালবাজারের গোয়েন্দারা।
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগকারিণীর সঙ্গে ব্যবসায়ী সুমিতের বিয়ে হয় ২০০০ সালে। বিয়ের পর থেকে পণের জন্য অত্যাচার চলত বলে অভিযোগ। তবু অশান্তি এড়াতে অত্যাচার হওয়া সত্ত্বেও তা মুখ বুজে সহ্য করে নেন তিনি। কিন্তু শ্বশুরবাড়িতে অত্যাচার বাড়তেই থাকে।
[আরও পড়ুন: বিতর্কে জল ঢেলে ডাক্তারি পড়ুয়াদের ‘চরক শপথে’ই মান্যতা দিল ন্যাশনাল মেডিক্যাল কাউন্সিল]
বধূর অভিযোগ অনুযায়ী, তাঁর শ্বশুরবাড়ির এক সদস্য তাঁকে বাড়িতে একা পেয়ে শ্লীলতাহানি করে। এর ফলে তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। স্বামী বাড়িতে ফিরলে বিষয়টি তাঁকে জানান। কিন্তু স্বামী স্ত্রীর পাশে দাঁড়ানোর বদলে রীতিমতো তাঁকে ধমকাতে শুরু করেন। স্ত্রী মিথ্যা কথা বলছেন, এই অভিযোগ তুলে স্ত্রীর উপর শুরু করেন অত্যাচার। বিয়ের কুড়ি বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও অত্যাচার থামেনি।
গৃহবধূর অভিযোগ, বিভিন্ন সময় স্বামীর অত্যাচারের প্রতিবাদ করে ওঠেন ওই ব্যবসায়ী। আর তার ফল স্বরূপ রীতিমতো স্ত্রীর শরীরের বিভিন্ন অংশে সিগারেটের ছ্যাঁকা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে। তাঁর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় দগদগে ঘা হয়ে যায়। তিনি ডাক্তারের কাছে গিয়ে চিকিৎসা করান। এর পর তিনি আর অত্যাচার মেনে নিতে রাজি হননি। গত বছর শেক্সপিয়র সরণি থানায় স্বামী ও শ্বশুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের গুরুত্ব বুঝে এই ঘটনার তদন্তভার গ্রহণ করে লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের মহিলাদের অভিযোগ শাখা। গোয়েন্দা আধিকারিকরা অভিযোগকারিণীর মুখ থেকে পুরো অভিযোগ শোনার পর বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেন।
[আরও পড়ুন: রাজভবনে চলছে অসুস্থ রাজ্যপাল ধনকড়ের চিকিৎসা, ফোনে খোঁজ নিলেন মুখ্যমন্ত্রী]
এক গোয়েন্দা আধিকারিক জানান, আইনিভাবে নিজেদের বাঁচাতে অভিযুক্ত বাবা ও ছেলে আদালতের দ্বারস্থ হন। মহিলার শ্বশুর বয়সজনিত কারণে আদালত থেকে আগাম জামিন পান। নিম্ন আদালত মহিলার স্বামীর আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করে দেয়। হাই কোর্টেও আবেদন জানান ব্যবসায়ী সুমিত আগরওয়াল। কিন্তু হাই কোর্টও ওই অভিযুক্তকে রক্ষাকবচ দেয়নি। এরপরই ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়। শুক্রবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে তাঁকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়। তাঁকে জেরা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।